পুকুরপাড়ে ঝোপ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হল এক তিন বছরের শিশু। বর্ধমানের কাটোয়ায় সোমবার সকালে এক মহিলা শিশুটিকে উদ্ধার করেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই রাতে ধর্ষণের মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, শিশুটির সমস্ত রকম শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। ছোট একটি অস্ত্রোপচারও হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, তাকে ধর্ষণই করা হয়েছে। দেহরসের নমুনা ও জামাকাপড় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়, সোমবার রাত পর্যন্ত শিশুটির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। কে বা কারা এই ঘটনায় জড়িত, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ কাটোয়া শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গোয়াই লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে একটি পুকুরপাড়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় কুলডাঙা গ্রামের চার মহিলা। সেখানে ঝোপের মধ্যে থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পান তাঁরা। ঝোপ সরিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানে পড়ে রয়েছে একটি শিশু। গোটা গায়ে কাঁটা বিঁধে রয়েছে। সোহাগি দাস নামে এক বধূ বলেন, “শিশুটির গায়ে কোনও জামাকাপড় ছিল না। আমরা কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সেই সময়ে সে হামা দিয়ে এসে আমার কাপড় ধরে ‘মা, মা’ বলে ডাকতে থাকে। গায়ের চাদর দিয়ে ওকে জড়িয়ে বাড়ি নিয়ে আসি।” বাড়িতে প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে শিশুটিকে নিয়ে কাটোয়া হাসপাতালে যান বলে সোহাগিদেবী জানান।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার চোখে-মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষার পরে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, “শিশুটির দেহে যৌন নির্যাতনের চিহ্ন মিলেছে। দেহরসের নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য কলকাতা পাঠানো হচ্ছে।” রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, শিশুটিকে ওই হাসপাতাল থেকে সরানো হবে না। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে চিকিৎসক নিয়ে যাওয়া হবে।
যেখান থেকে শিশুটি উদ্ধার হয়, দুপুরে সেখানে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরুণ হালদার, এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস, কাটোয়ার সার্কেল ইনস্পেক্টর শচীন্দ্র পুড়িয়া। ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির জামা, প্যান্ট ও সোয়েটার মেলে। সেখানে দাঁড়িয়ে সোহাগিদেবীর কাছে সবিস্তার পুরো ঘটনা শোনেন পুলিশকর্তারা। শিশুটি অচেতন থাকায় এ দিন তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সোহাগিদেবীর স্বামী স্বপন দাস বলেন, “আমার স্ত্রী ঠিকই করেছে। তা না করলে শিশুটি প্রাণে বাঁচত না।” গোয়াই গ্রামের বাসিন্দা ভৈরব মণ্ডল, মদন দাসেরা বলেন, “আশপাশের নানা গ্রামে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু শিশুটির কোনও পরিচয় মেলেনি।”
কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা মহম্মদ সোহরাব বলেন, “অমানবিক ও নিন্দনীয় ঘটনা। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ঘটনার কথা জেনে ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছি।” |