এক দিকে জল্পনা, অন্য দিকে হুঁশিয়ারি। এমন পরিবেশেই পাঁচ বছর পর ভারতের মাটিতে পা রাখলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা।
মহম্মদ হাফিজরা শনিবার সন্ধেয় নয়াদিল্লিতে এসে পৌঁছনোয় পাকিস্তানের ভারত সফরের সম্ভাবনা নিয়ে এত দিন ধরে চলতে থাকা জল্পনার অবসান হলেও একাধিক রাজনৈতিক দলের হুমকি কী ভাবে সামলাবে প্রশাসন, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। যেখানে পাকিস্তান এই সফরে প্রথম মাঠে নামছে, সেই বেঙ্গালুরুর পুলিশ যে যথাসম্ভব কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখছে। শনিবার রাতে যখন বেঙ্গালুরুর বিমান বন্দরে নামেন তাঁরা, তখন সেই নিরাপত্তার বহর ছিল চোখে পড়ার মতো। শিবসেনা ও রাম সেনে নামক দু’টি সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দিন ভারত-পাক ম্যাচ পণ্ড করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। |
হাফিজদের অবশ্য সে সব বুঝতেই দেওয়া হয়নি। দিল্লিতে তাঁদের ভারতীয় বোর্ডকর্তারা যেভাবে অভ্যর্থনা জানান, তাতে অভিভূত দলের সঙ্গে আসা মিডিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্তা নাদিম সারওয়ার। বলেন, “এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়ে ক্রিকেটাররা খুব খুশি। যখন আমরা লাহৌর থেকে বিমানে এখানে আসছিলাম, তখন আমাদের সহযাত্রীরাও আমাদের অনেক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।” আসার আগে দুই প্রাক্তন অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ ও ইনজামাম উল হকের কাছ থেকে মূল্যবান পরামর্শও নেন পাক ক্রিকেটাররা। তাঁরা হাফিজদের মানসিক শক্তি ঠিক রেখে স্বাভাবিক খেলা খেলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। করাচিতে সংবাদসংস্থাকে ইনজামাম জানান, “আমি ওদের টেকনিক্যাল ব্যাপার-স্যাপার ভুলে গিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। একবার চাপে পড়ে গেলেই যে মুশকিলে পড়ে যাবে, সেটা বলে দিয়েছি ওদের। চাপকে বেশি পাত্তা দিলেই সমস্যা।” মিয়াঁদাদ বলেন, “ছেলেদের বলেছি, এককাট্টা থাকতে। তা হলেই ভাল খেলতে পারবে ওরা।”
বেঙ্গালুরুতে ভারত-পাক ম্যাচের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার পুলিস মোতায়েন করা হচ্ছে বলে জানান নগরপাল জ্যোতিপ্রকাশ মিরজি। যদি কেউ খেলা ভন্ডুল করতে চায় বা অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়, তা হলে তাদের মোটেই ছাড়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। আগামী তিন দিন চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের আশেপাশে কাউকে কোনও প্রতিবাদ সভাও করতে দেবে না বেঙ্গালুরু পুলিস। মিরজি বলেন, “যাদের প্রতিবাদ করার প্রয়োজন, তারা দূরে কোথাও গিয়ে সেসব করুক। স্টেডিয়ামের কাছে নয়।” শান্তি বজায় রাখতে মাঠে ও টিম হোটেলে ডগ স্কোয়াডও হাজির। সবার ওপর কড়া নজরদারির জন্য বিশেষভাবে বসানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট টিভিও। সব মিলিয়ে ক্রিকেট নয়, যেন যুদ্ধের বাতাবরণ ভারত-পাক সিরিজের প্রথম দিন থেকে। |
|
|
বেঙ্গালুরুর হোটেলে উমর গুল, কামরান আকমলরা।
শনিবার। ছবি: উৎপল সরকার |
|
ইডেনে আসছেন জাহির, ওয়াসিম বারিরা: কোন পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি হবে, তা নিয়ে সিএবি-র অন্ধকার না কাটলেও ৩ জানুয়ারি ইডেনে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সীমান্ত পেরিয়ে আসবেন কোন কোন অতিথি, সেই ছবিটা ক্রমশ পরিষ্কার হচ্ছে। জাভেদ মিয়াঁদাদ, জাহির আব্বাস, ওয়াসিম বারি, সাদিক মহম্মদ, ইন্তিখাব আলম, মুস্তাক মহম্মদ ও ইমতিয়াজ আহমেদরা শনিবার সম্মতি জানিয়েছেন। ইমরান খানের সম্মতি এখনও পৌঁছয়নি। কর্তাদের আশা, আগামী সপ্তাহেই ইমরান সম্মতি জানিয়ে দেবেন। টিকিট বন্টনের জট অবশ্য খোলেনি।
সোমবার পুলিশের সঙ্গে বৈঠকের পর তা চূড়ান্ত হতে পারে। ক্রীড়া দফতর না করলেও রাজ্য সরকারের লটারি বিভাগের কাছে শেষবার লটারি আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়ার কথা ভাবছে সিএবি। অবশ্য সোমবারের বৈঠকে পুলিশ যদি সরাসরি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করলে যথেষ্ট নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেয়, তা হলে শেষ পযর্ন্ত তা-ই হতে পারে। কিন্তু সিএবি-র বেশিরভাগ কর্তাই লটারি করে টিকিট বন্টনের পক্ষে। এ দিকে ইডেনে ম্যাচের দিন প্রধানমন্ত্রী শহরে থাকলেও তিনি প্রোটোকলের জন্য আসবেন না। এই ব্যাপারে এদিন বিশ্বরূপবাবু জানান, “প্রোটোকল অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি সাধারণত এক জায়গায় থাকতে পারেন না। ইডেনে রাষ্ট্রপতি থাকবেন বলেই প্রধানমন্ত্রী আসবেন না।” রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল অবশ্য সে দিন ইডেনে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
|
মহাযুদ্ধের দিনক্ষণ |
• ২৫ ডিসেম্বর: প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ (বেঙ্গালুরু)
• ২৮ ডিসেম্বর: দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ (আমদাবাদ)
• ৩০ ডিসেম্বর: প্রথম একদিনের ম্যাচ (চেন্নাই)
• ৩ জানুয়ারি: দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচ (কলকাতা)
• ৬ জানুয়ারি: তৃতীয় একদিনের ম্যাচ (দিল্লি) |
|