|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
চিত্রানুষঙ্গে এক অন্য রবীন্দ্রজীবনী |
‘আমি পিতাকে গিয়ে জানালেম শান্তিনিকেতন এখন প্রায় শূন্য অবস্থায়, সেখানে যদি একটি আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপন করতে পারি তাহলে তাকে সার্থকতা দেওয়া হয়। তিনি তখনি উৎসাহের সঙ্গে সম্মতি দিলেন।’ শান্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ভাবনা দিয়ে এ বইয়ের সূচনা, শেষ চতুরঙ্গ-যিশুচরিত-এ। ছ’বছর আগে প্রকাশিত প্রথম খণ্ডে ধরা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রথম চল্লিশ বছর, আর এ বার দ্বিতীয় খণ্ডে (পুনশ্চ, ১৫০০.০০) স্মৃতির ছবি ধরতে চেয়েছে ১৯০১-’১৪ এই কালসীমাকে। এই পর্বেই গীতাঞ্জলি, ডাকঘর আর জীবনস্মৃতি, এই পর্বেই নোবেল। পেশায় আলোকচিত্রী, নেশায় রবীন্দ্র-গবেষক অভীককুমার দে বড় আকারে প্রায় সাড়ে তিনশো পাতার পরিসরে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়া কর্মকাণ্ডের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের বিচিত্র পরিচয় ফুটিয়ে তুলেছেন অজস্র দুর্লভ চিত্রে-আলোকচিত্রে, চিঠিপত্র ও নথির আলোয়। সঙ্গে আরও দেড়শো পাতায় বিস্তারিত প্রাসঙ্গিক তথ্যপঞ্জি। নিছক চিত্রজীবনী নয়, চিত্রানুষঙ্গে রবীন্দ্রনাথের এ এক অন্য রকম জীবনী।
বহির্জগতে কবির বিবিধ উদ্যম, চিন্তাভাবনার পাশাপাশি সাজানো হয়েছে অন্তর্জগতের কথা। ‘এক এক সময় বিদ্যুতের মত আমার মনে হয় যে সব কাজকে আমরা অত্যন্ত বেশি মনে করি— বক্তৃতা করি, লিখি, হাঁসফাঁস করিয়া বেড়াই, দেশ উদ্ধার করিবার ফিকির করি— এ সমস্তই বাজে কাজ।’ কোথাও লিখছেন, ‘ভাই ছুটি/ ... তোমার মা মাছের ঝোল খাইয়ে দিলেন। মুখে কিন্তু তার স্বাদ আদবে ভাল লাগ্ল না।’ আবার অন্যত্র, ‘আমার এই কবিতাগুলি সবই খোকার নামে— তার একটি প্রধান কারণ এই— যে ব্যক্তি লিখেছে সে আজ চল্লিশ বছর আগে খোকাই ছিল, দুর্ভাগ্যক্রমে খুকী ছিল না।’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আশ্চর্য সব আলোকচিত্র যার অনেকটাই অদেখা। আছে অসিতকুমার হালদারের আঁকা আশ্রমের পুরনো ছবি, রবীন্দ্রপ্রতিকৃতি মুদ্রিত পোস্টকার্ড, পাণ্ডুলিপি ও চিঠির প্রতিলিপি, রবীন্দ্ররচনা সম্বলিত পত্রপত্রিকার চিত্র, রবীন্দ্ররচনার বিচিত্র অলংকরণ। |
|
যামিনীপ্রকাশ গঙ্গোপাধ্যায় অঙ্কিত
রাখীবন্ধন উৎসবের কার্ড |
ভূমিকায় সংকলক লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রজীবনী রচনার সিংহভাগ উপকরণ যে প্রতিষ্ঠানের অধিকারে সংরক্ষিত তার ব্যবহারের সুযোগ আমার জন্য সম্পূর্ণ বিনাকারণে অপ্রাপ্য হয়েছিল বলে উপকরণ সংগ্রহের পথ সুগম ছিল না। অপরিমেয় বাধা পার হতে বহু বছর লেগেছিল। এখনও পরিস্থিতি একই...’। এ দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষকদের এ ভাবেই কাজ করতে হয়, আর প্রতিষ্ঠান বসে থাকে অচলায়তন হয়ে, যারা নিজেরাও কোনও নতুন কাজে আগ্রহী নয়, আর কেউ আগ্রহী হলে তাকে সাহায্য করা দূরে থাক বাধা দিতে পারলে খুশি হয়। তবু তার মধ্যেই এ ধরনের কাজ সম্পন্ন হয়ে ওঠে, দাগ রেখে যায়।
সংকলকের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল দুটি খণ্ডে স্মৃতির ছবি সমাপ্ত করা। কিন্তু দ্বিতীয় খণ্ডে পৌঁছনো গেল মাত্র ১৯১৪ পর্যন্ত, ‘তার কারণ উপকরণের ঘাটতি নয়, তার বাহুল্য’। আরও দুটি খণ্ডে এই চিত্রস্মৃতি সমাপ্ত হবে আশা করা যায়। |
|
|
|
|
|