পুরুলিয়ায় শিল্পপতিদের আগ্রহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর কাছে তুলনামূলক কম মূল্যে শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুৎ দেওয়ার আর্জি জানাল জেলা কংগ্রেস। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে ঝালদায় এ জন্য ডিভিসি-র একটি সাবস্টেশন গড়ার প্রস্তাব দেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো। সম্প্রতি রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র নির্মীয়মান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের শিলান্যাসের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর কাছে নেপালবাবু এই প্রস্তাব দেন। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীরও আশ্বাস মিলেছে।
রঘুনাথপুরে মেগা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ছে ডিভিসি। প্রথম পর্যায়ের ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ইউনিট তৈরির কাজ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৩২০ মেগাওয়াটের সুপার ক্রিটিক্যাল ইউনিট নির্মাণ করা হবে। তাই জেলার শিল্পের বিকাশে ডিভিসি-র ইতিবাচক ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলেই জেলা কংগ্রেসের তরফে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীকে জানানো হয়। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের জমিনীতি ও শিল্পক্ষেত্রে রাজ্যের বিদ্যুৎ নীতির সমালোচনায় সরব ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “ডিভিসি যে দামে বিদ্যুৎ দেয়, এই রাজ্যের মা-মাটি-মানুষের সরকারের দেওয়া বিদ্যুতের দাম তার চেয়ে ঢের বেশি। তার উপর এ রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের হালও ভাল নয়।” আর এর সূত্র ধরেই জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপালবাবু বলেন, “এই রাজ্যে বাণিজ্যিক (কমার্শিয়াল) ক্ষেত্রে বিদ্যুতের যা দাম, ডিভিসি তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দেয়। অন্যান্য রাজ্যেও শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম আমাদের রাজ্যের চেয়ে কম। তাই আমরা পুরুলিয়া জেলায় শিল্পের বিকাশের জন্য ডিভিসিকে এই জেলায় শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য সাবস্টেশন গড়ার দাবি জানিয়েছি।”
সে ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করলেও কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী জেলা কংগ্রেসের প্রস্তাব রূপায়ণে আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথায় “বিধায়ক যে এলাকায় ডিভিসি-র সাবস্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন, সেই এলাকায় ডিভিসি-র নিজস্ব জমি নেই। ফলে আমি রাজ্য সরকারের কাছে জমি চেয়ে চিঠি দিচ্ছি। রাজ্যের আপত্তি না থাকলে এবং জমি পেলে সাবস্টেশনের ব্যবস্থা করে দেব।”
রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় গত পাঁচ বছর ধরেই শিল্পায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কয়েকটি বড় ইস্পাত কারখানা-সহ আরও কিছু ছোট শিল্পের প্রস্তাব এসেছে। সম্প্রতি রঘুনাথপুরেই জমি চেয়ে রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগমকে চিঠি দিয়েছে রিলায়্যান্স সিমেন্ট কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড। ফলে রঘুনাথপুর মহকুমা জুড়ে শিল্পস্থাপনে সংস্থাগুলি আগ্রহী হলেও জমি-জট সহ অন্যান্য কিছু কারণে শিল্পায়ন প্রত্যাশিত গতি পাচ্ছে না। নেপালবাবুর দাবি, “শিল্পায়নে রাজ্য সরকারের ইতিবাচক ভূমিকার অভাব তো রয়েইছে। এই পরিস্থিতিতেও পুরুলিয়ায় শিল্পের জন্য কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে অনেক শিল্প সংস্থা এখানে আসতে চাইবে।” রঘুনাথপুর মহকুমার নিতুড়িয়া ব্লকেই একটি সাবস্টেশন রয়েছে ডিভিসি-র। কিন্তু সেখান থেকে শুধু রেল ও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলকে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। জয় বালাজি শিল্প গোষ্ঠীর রঘুনাথপুরের প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার উজ্জ্বল গুরু বলেন, “ডিভিসি-র মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেলে শিল্প সংস্থাগুলি অবশ্যই এখানে আগ্রহ দেখাবে।” পুরুলিয়া চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “কম দামে বিদ্যুৎ পেলে অবশ্যই বাড়তি সুবিধা পাবে শিল্প সংস্থাগুলি। কিন্তু কোথায় সাব স্টেশন হলে সুবিধা হবে, সেটা ডিভিসি ও রাজ্য সরকার মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।” |