পূর্ব কলকাতা
বিধাননগর
বেপরোয়া মোড়
রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ঠিকানা জানতে চাইছিলেন মোটরসাইকেলের পিছনে বসা তরুণটি। ওভারটেক করতে গিয়ে একটি বাস ওই তরুণকে সজোরে ধাক্কা মারে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। কয়েক দিন আগে ঘটনাটি ঘটে বিধাননগরের ময়ূখ ভবনের কাছে।
সম্প্রতি চিংড়িহাটা-বাইপাস উড়ালপুল থেকে সল্টলেকে যাওয়ার রাস্তায় পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন এক স্কুটার চালক। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই উড়ালপুল থেকে নেমেই ডান দিকে একটি কাট আউট আছে। অনেক গাড়িই তা ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। একটি গাড়ি ওই কাট আউট থেকে আচমকা ঢুকে ওই স্কুটারের কাছাকাছি চলে যায়। তখনই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্কুটার থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন ওই যুবক। পুলিশের অবশ্য ভিন্ন দাবি।
শুধু দু’টি ক্ষেত্রই নয়, মাঝেমধ্যেই বিধাননগরের এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। পথচারী এবং বাসিন্দাদের অভিযোগ, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্র্যাফিকে নজরদারি বাড়লেও এখনও পর্যন্ত তা পর্যাপ্ত নয়। চালকেরা নিয়ম ভাঙছেন। রাস্তা পারাপার করা মুশকিল। যদিও প্রশাসনের দাবি, ট্র্যাফিক ব্যবস্থা আগের থেকে উন্নত হয়েছে। চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
বিধাননগরের অফিসপাড়ার কেন্দ্রে ময়ূখ ভবনের মোড়। কাছাকাছি মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছে। অভিযোগ, এখানে বাসস্ট্যান্ড না থাকলেও একাধিক বাস এবং মিনিবাস দাঁড়িয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে থাকে অটো ও রিকশাও। দুর্ঘটনার পরে এই তিনমুখী রাস্তার মোড়ে গার্ড রেল বসানো হয়েছে। অফিস টাইমে ট্র্যাফিককর্মীও থাকছেন। অভিযোগ, তা পর্যাপ্ত নয়। তা ছাড়া চালক এবং পথচারীদের একাংশ ট্র্যাফিক নিয়ম মানেন না। সিটি সেন্টার স্টপ থেকে পাঁচ নম্বর সেক্টরমুখী জে কে সাহা সেতু পর্যন্ত রাস্তার কয়েকটি জায়গাতেও এই একই সমস্যা।
সোদপুরের বাসিন্দা অফিসপাড়ার নিত্যযাত্রী অসীম বসু বলেন, ‘‘আগে এত সমস্যা ছিল না। এখন বাসগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। অটো, রিকশা খুশিমতো চলাচল করছে।
অসতর্ক হলেই বিপদ অনিবার্য।’’ করুণাময়ীর কাছেই থাকেন প্রবীণ নাগরিক সুস্মিতা বরাট। তিনি বলেন, ‘‘মেট্রোর জন্য করুণাময়ী মোড়ের আইল্যান্ড তুলে দেওয়া হয়েছে। কয়েক জন ট্র্যাফিককর্মী থাকলেও অধিকাংশ চালক আর পথচারী তাঁদের পাত্তা দেন না। আমার মতো বয়স্ক মানুষের পক্ষে এই মোড় পারাপার করা বিপজ্জনক।’’
একই অবস্থা সিটি সেন্টার মোড়, বিদ্যাসাগর মোড়, সিএ আইল্যান্ড, ৪ নম্বর ট্যাঙ্কের মোড়, এফডি মোড়, বনবিতানের মোড়-সহ একাধিক মোড়ের। অভিযোগ উঠেছে, বিধাননগরের করুণাময়ী মোড় থেকে বেলেঘাটা-বাইপাস কানেক্টর পর্যন্ত রাস্তার নানা মোড়ে অনেকে ট্র্যাফিক সিগন্যালও মানছেন না। এই রাস্তায় গাড়ির গতি বেশি থাকে। নিয়ন্ত্রণ করতে সিগন্যাল চালু করা হয়েছিল। কিন্তু, নিয়ম ভাঙলে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ের চিংড়িহাটা-বাইপাস কানেক্টর থেকে রাজারহাট বক্সব্রিজ পর্যন্ত অংশেও ট্র্যাফিক নিয়ম মানা হয় না বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, পাঁচ নম্বর সেক্টরের কলেজ মোড়, উইপ্রো মোড়, এসডিএফ মোড়েও ট্র্যাফিক ব্যবস্থার সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ। টেকনোপলিস মোড়, চিংড়িহাটা মোড়ে ট্র্যাফিককর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর দাবি করছেন আইটি কর্মীরা। বাসিন্দাদের সংগঠন সল্টলেক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘কমিশনারেট হওয়ার পরে ট্র্যাফিক ব্যবস্থা নিয়ে আলাদা পরিকাঠামো গড়ে উঠছে বলে দাবি করা হয়েছিল। কিছুটা কাজ হলেও চাহিদার তুলনায় তা কম।’’
পুলিশ প্রশাসনের দাবি, সল্টলেকের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে মেট্রোর কাজ চলছে। ফলে অস্থায়ী ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। অন্যত্র ট্র্যাফিক ব্যবস্থা আগের থেকে উন্নত হয়েছে। কেসের সংখ্যাও বেড়েছে বলে তাঁদের দাবি। তা ছাড়া পথচারী এবং চালকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। সচেতন করার চেষ্টা চলছে। বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি ট্র্যাফিক প্রণব কুমার বলেন, “এর মধ্যেই করুণাময়ী মোড়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ট্র্যাফিককর্মীর সংখ্যা কম। ফলে পরিকল্পনা থাকলেও সব জায়গায় তা কার্যকর করা যায়নি। তবুও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।”

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.