|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত |
বাগজোলা |
নরকের খাল |
প্রসেনজিৎ পাঠক |
ঠিক যেন নরক!
জলের স্রোতে ভেসে আসে আবর্জনা ও কচুরিপানা। যার মধ্যে মাঝেমধ্যেই দেখতে পাওয়া যায় জীবজন্তুর দেহ। সময়মতো তা পরিষ্কার না হওয়ায় দুর্গন্ধ আর মশামাছির উপদ্রবে জেরবার হতে হয় কেষ্টপুরের ভিআইপি রোড লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের।
অভিযোগ, সেচ বিভাগের গাফিলতিতে আপার বাগজোলায় ভেসে আসা আবর্জনা সময়মতো তুলে ফেলা হয় না। ফলে তা ভিআইপি রোডের নীচে লকগেট আর কালভার্টে আটকে দূষণ ছড়ায়। একই অবস্থা লোয়ার বাগজোলার ৭ নম্বর ক্যাম্প ও জগৎপুর বাজার এলাকায়। লোয়ার বাগজোলা খালও কখনওই সাফাই হয় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বয়ে চলা বাগজোলা খালটি ভিআইপি রোড পর্যন্ত আপার বাগজোলা খাল নামে পরিচিত এবং তার পরে রাজারহাট গোপালপুর পুরসভার ৭ নম্বর ক্যাম্প, জগৎপুর বাজার (২৭, ২৮, ৩০, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড) হয়ে কুলটির বিদ্যাধরী নদী পর্যন্ত লোয়ার বাগজোলা খাল নামে পরিচিত। |
|
আপার বাগজোলার শেষ প্রান্ত কেষ্টপুরে (রাজারহাট গোপালপুর পুরসভার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড)। এই খালের উপরে পাশাপাশি রয়েছে কমবেশি ৪০ ফুট দীর্ঘ দু’টি কালভার্ট (প্রফুল্লকাননের প্রবেশপথ)। আপার বাগজোলায় ভেসে আসা আবর্জনা ওই কালভার্টের নীচে এবং পিলারের গায়ে এসে আটকে যায়। যার মধ্যে গৃহপালিত জীবজন্তুর দেহও মেলে। কালভার্টটি নিচু হওয়ায় এই আবর্জনা জলের স্রোতে বেরিয়ে যেতে পারে না। মাঝেমধ্যে জলস্তর কমলে কিছু কিছু আবর্জনা কালভার্ট পেরিয়ে গিয়ে জমা হয় ৫০-৬০ ফুট দূরে ভিআইপি-র নীচে লাগানো ছয়টি লকগেটে। কালভার্ট আর লকগেটের নীচে দীর্ঘ দিন আটকে থাকে ওই আবর্জনা। সেগুলি খালের জলেই পচতে থাকে। প্রায়ই ১০০ মিটার দূর পর্যন্ত আবর্জনা জমে যায়।
ওই এলাকার আশপাশে বহু জনবসতি, কয়েকটি স্কুল আর বাসস্টপ রয়েছে। ফলে দূষণের জেরে জেরবার হতে হচ্ছে বাসিন্দা, স্কুলপড়ুয়া ও পথচারীদের। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য: আপার বাগজোলার আবর্জনা সাফাই করতে মাঝেমধ্যে সেচ বিভাগের কর্মীদের আসতে দেখা যায়। ওই কর্মীরা কখনও আবর্জনা তুলে ফেলেন, আবার কখনও ঠেলে লোয়ার বাগজোলার দিকে সরিয়ে দেন। কিন্তু সেই ব্যবস্থা এত দেরিতে নেওয়া হয় যে তত দিনে খালের জলে দীর্ঘ দূরত্ব পর্যন্ত আবর্জনা জড়ো হয়ে যায় এবং দূষণও বেড়ে যায়। কেষ্টপুর পেরিয়ে সাত নম্বর ক্যাম্পে বাগজোলার উপরে তৈরি হয়েছে নতুন লোহার সেতু। জগৎপুরে রয়েছে পাশাপাশি একটি নতুন ও দু’টি পুরনো সেতু। তার নীচেও জড়ো হচ্ছে প্রচুর আবর্জনা। ৭ নম্বর ক্যাম্পের লোহার সেতুর নীচে প্রায় ২০০ ফুট পর্যন্ত আবর্জনা জমে রয়েছে। যার জেরে খালের জলও দেখা যায় না। কিছু দিন আগে আপার বাগজোলা এবং লোয়ার বাগজোলার (ভিআইপি-র দিক থেকে) কয়েকশো মিটার এলাকায় পলি তুলে ফেলা হয়েছিল। তার পরে আর সংস্কারের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। |
|
জগৎপুরের বাসিন্দা অনুপ মণ্ডলের কথায়: “আপার বাগজোলা যদিও মাঝেমধ্যে সাফ করা হয়, লোয়ার বাগজোলার অংশে তা-ও হয় না। যার জেরে খালের লাগোয়া অঞ্চলের বাসিন্দাদের মশামাছি আর আবর্জনার দুর্গন্ধে সারা বছরই জেরবার হতে হয়। সেচ বিভাগের বিষয়টি দেখা উচিত।” সেচ বিভাগের মেট্রোপলিটন ড্রেনেজ ডিভিশন ২-এর অন্তর্গত আপার বাগজোলা খাল। ওই ডিভিশনের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ দেব বলেন, “মূল সমস্যা সচেতনতার অভাব। স্থানীয় বাসিন্দারা বিছানা-মাদুর থেকে শুরু করে থার্মোকল, গৃহপালিত পশুর মৃতদেহ খালে ফেলে দেন। আমরা সচেতনতা তৈরির জন্য পুরসভাগুলিকে বলেছি। খাল থেকে আবর্জনা তুলে ফেলার ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু এত ঘন ঘন আবর্জনা ফেলা হয় যে সব সময়ে পরিষ্কার করার মতো আর্থিক সঙ্কুলান থাকে না। দেখছি, কী করা যায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি এবং অর্থ পেলে খালের ধারে লোহার বেড়া লাগানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।”
লোয়ার বাগজোলা খাল মেট্রোপলিটন ড্রেনেজ ডিভিশন ১-এর অন্তর্গত। ওই ডিভিশনের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা খাল পরিষ্কার করার জন্য ব্যবস্থা নিই না, এমন নয়। পুজোর আগেই একটা টেন্ডার শেষ হয়েছে। এই মুহূর্তে কী অবস্থা রয়েছে, দেখছি।” রাজারহাট গোপালপুরের পুরপ্রধান তাপস চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য: “খাল সংস্কারের জন্য সেচ বিভাগকে বলেছি। ওরা পরিদর্শনও করেছে। আবর্জনা তোলা ওদের কাজ। কিন্তু ওরা ঘন ঘন কাজ করে না, বলে বলে করাতে হয়। এই মুহূর্তে খালের আবর্জনা কী অবস্থায় আছে, দেখে নিচ্ছি।”
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ
|
|
|
|
|
|