যে মাঠ টেস্ট সিরিজের রাশ ইংরেজদের হাতে তুলে দিয়েছিল মাসখানেক আগে, সেই মাঠেই এখন ইংল্যান্ডকে ২-০ ‘মিনি ব্রাউনওয়াশ’ করার হাতছানি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের মহড়া নিতে নামার আগে টিমের মনোবল বাড়িয়ে রাখার সেরা সুযোগ। ক্রিসমাসে এর চেয়ে ভাল উপহার আর কী চাইতে পারেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি?
টেস্ট সিরিজ হারের কালো স্মৃতি একটা টি-টোয়েন্টি জিতে মোটামুটি পুরোনো অ্যালবামের পাতায় বন্দি। শুক্রবারের মুম্বইয়ের মতো ‘উইকএন্ড মোড’-এ চলে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়াও। প্র্যাক্টিস নেই, বরং ছুটির ফুরফুরে মেজাজ। কেনাকাটা। টিম হোটেলের কফিশপে আড্ডা। না হলে পুণে থেকে মুম্বই ঘণ্টাপাঁচেকের রাস্তা পেরিয়ে স্রেফ ঘুম। হওয়ারই কথা। টি-টোয়েন্টির চেনা হাইওয়েতে তরতর করে এগোচ্ছে ধোনিদের গাড়ি। টিম ইন্ডিয়া তো আশ্বস্ত হবেই।
টি-টোয়েন্টির ভক্তরাও নিশ্চিন্ত হতে পারেন, শনিবারের ওয়াংখেড়ে হতে চলেছে কুড়ি ওভারের ‘বুম বুম’ ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ উইকেট। এই মাঠে অর্ডারি ঘূর্ণি পিচে চার দিনে টেস্ট হেরেছিলেন ধোনি। এ বার আর কোনও ফরমায়েশ আসেনি টিম ইন্ডিয়ার অন্দরমহল থেকে। এখন অন্য ফর্ম্যাট, অন্য উইকেট। ওয়াংখেড়ের পাটা উইকেটে ১৭০-১৮০ রান হেসেখেলে উঠবে বলেই দাবি মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের। |
হাসির প্রত্যাবর্তন। সৌজন্যে টি-টোয়েন্টি। |
যে উইকেট দেখে নিশ্চয়ই খুশি হবেন টি-টোয়েন্টি স্পেশ্যালিস্ট যুবরাজ। আর যে উইকেটে হয়তো বল করার সুযোগ পাবেন না পরবিন্দর আওয়ানা। বৃহস্পতিবার টি-টোয়েন্টি অভিষেকে দু’ওভারে ২৯ রান দেওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচের দল থেকে ছাঁটাই হওয়ার সম্ভাবনা দিল্লির পেসারের। আওয়ানার জায়গায় আসতে পারেন দুই ডান-হাতি মিডিয়াম পেসারের একজন পুণে ওয়ারিয়র্সে অশোক দিন্দার সতীর্থ ভূবনেশ্বর কুমার, বা অভিমন্যু মিঠুন।
ভারতীয় বোলিং নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে বসলে অবশ্য ক্রিসমাসের মেজাজ কিছুটা বিগড়ে যেতে পারে। পুণেতে ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বল করে দিলেও দিন্দা প্রথম স্পেলে বেশি শর্ট বল করেছেন। যার পুরো ফায়দা তুলেছেন অ্যালেক্স হেলস। ধোনির প্রধান স্পিন অস্ত্র রবিচন্দ্রন অশ্বিনও ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের বোতলবন্দি করতে ব্যর্থ। বৃহস্পতিবার তাঁর চার ওভারে খরচ হয়েছিল ৩৩ রান। পুণেতে যুবরাজের ৩-১৯ না থাকলে ম্যাচের ছবিটাই পাল্টে যেতে পারত। ইংল্যান্ড আর ১৫-২০ রান বেশি তুললে শেষ হাসি কে হাসত, কে বলতে পারে? ম্যাচ শেষে ইয়ন মর্গ্যানও তো সেটাই শুনিয়ে গিয়েছিলেন। বলে দিয়েছিলেন, যুবরাজের স্পেলটা না থাকলে লড়াই থেকে বেরিয়ে যেত না তাঁর ইংল্যান্ড। ধোনি নিজেও ম্যাচের পরে বলেছিলেন, “যুবরাজ ছাড়া বাকি সব বোলার অন্তত একটা খারাপ ওভার দিয়েছে।”
কলকাতা নাইট রাইডার্সে মর্গ্যানের অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরের অবস্থাও যথেষ্ট গম্ভীর। টেস্ট সিরিজে তাঁর ব্যাটে ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি। অজিঙ্ক রাহানের সঙ্গে পুণেতে তিনি শুরুটা ভাল করলেও দু’জনেই বড় শট খেলতে গিয়ে পরপর উইকেট উপহার দিয়ে এসেছিলেন। সান্তা ক্লজের কাছে নিশ্চয়ই একটা বড় ইনিংস উপহার চাইবেন গম্ভীর।
দিনের শেষে ব্যালেন্স শিট মেলাতে বসলে অবশ্য কপালে চিন্তার ভাঁজ নয়, ধোনির মুখে হাসি ফোটারই কথা। কেন? মায়া সভ্যতার ভবিষ্যদ্বাণী কোনও দিন মিলে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে তরুণ এই ইংরেজ দলের কাছে ধোনিরা হারতে পারেন, এমন ভবিষ্যদ্বাণীর উপর বোধহয় পরম ইংরেজপ্রেমীও বাজি ধরবেন না। |