|
|
|
|
সঙ্ঘের সঙ্গে রফা চাইছেন কৌশলী মোদী |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
এ বারের নির্বাচনে সঙ্ঘ পরিবার তাঁকে পদে পদে বিপাকে ফেলার চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছিল দলের অন্দরেই। তবু তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আজ নরেন্দ্র মোদী বললেন, “আমি দল এবং সঙ্ঘ পরিবারের অনুগত সৈনিক। দল আমাকে যে নির্দেশ দেবে, সেই অনুসারেই আমি কাজ করে যাব।” রাজনীতির কারবারিদের বক্তব্য, দিল্লিকে পাখির চোখ করে এগোতে চাওয়া মোদী এখন আরও কৌশলী। তাই আরএসএস-এর সঙ্গে সম্পর্ক যতই তিক্ত হোক, এখনই কোনও সংঘাতে যেতে চান না তিনি। তলে তলে মোহন ভাগবতের সঙ্গে রফা করতে চাইছেন ‘বিকাশ-পুরুষ’।
এ বারের জয় মোদীকে যে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হওয়ার লড়াইয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। দলের নিচুতলার কর্মী, মাঝারি স্তরের নেতা-সহ অনেকেই দাবি জানাতে শুরু করেছেন, এখনই প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রার্থী হিসাবে মোদীর নাম ঘোষণা করা হোক। কিন্তু সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠরা এখনও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করতে রাজি নন। গত কাল ভোটের ফল প্রকাশের পরপরই অশোকা রোডে বিজেপির সদর দফতরে সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক ডাকেন নিতিন গডকড়ী। সেখানে লালকৃষ্ণ আডবাণী, অরুণ জেটলিরা বলেন, “ভোটের পুরো ফল জানা গেল না, এখনই কীসের রণকৌশল তৈরি করব?” তাঁদের বক্তব্য, ২৫ ডিসেম্বর অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন। ২৬ তারিখ গুজরাতে মোদীর শপথ। তার পর ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও খোদ আডবাণীও অস্বীকার করতে পারছেন না, “গুজরাতের নির্বাচনে জয় বিজেপি-র জয় বটে। কিন্তু এটি নরেন্দ্র মোদীরও জয় নিশ্চয়ই। গুজরাতে মোদীই বিজেপি।”
সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত কিছু দিন আগে ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, গাড়ি কোম্পানি থেকে একসঙ্গে অনেক গাড়ি বেরোয়। কিন্তু সব গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ একই রকম হয় না। নিতিন গডকড়ীকে যে ভাবে সামলানো যায়, মোদীকে তা যায় না। তাঁর সম্পর্কে ভাগবতের এই মনোভাব অজানা নয় মোদীর। তাই দিল্লির দিকে তাকিয়ে সঙ্ঘপ্রধানকে পাশে পেতে সক্রিয় তিনি। গুজরাত ভোটপর্ব শেষ হওয়ার আগেই ভাগবতের সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। একই সঙ্গে গত কাল আডবাণী-জেটলি-সুষমা স্বরাজকে ফোন করে তাঁর শপথগ্রহণের দিন গুজরাতে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন। দলের অন্য শীর্ষ নেতাদেরও চিঠি দিয়ে এই অনুষ্ঠানে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। ফলপ্রকাশের পরে সারা দিন ধরে বিভিন্ন দলীয় নেতা ও রাজ্য সভাপতিদের সঙ্গে কথা বলে জনসংযাগ অব্যাহত রেখেছেন।
মোদীর পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তিনি আডবাণীকে ফোন করে জানিয়েছেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হলে তিনি সে দিনই এনডিএ ছাড়বেন। মোদীকে চাপে রাখার এমন সুযোগ হাতছাড়া করছেন না সঙ্ঘ-নেতৃত্বও। মোদীকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে, তিনি নিতিন গডকড়ীর সভাপতিত্বের মেয়াদ আর এক বার বাড়ানোর প্রস্তাব মেনে নিন। সে ক্ষেত্রে রাহুল গাঁধীর বিপক্ষে মোদীকে বিজেপির জাতীয় প্রচার কমিটির প্রধান করার কথা ভাবা হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, গডকড়ীর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব মোদী কেন মানবেন? আর একটি প্রস্তাব হল, জেটলিকে দলের সভাপতি করে মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান করা হোক। জেটলিকে নয়াদিল্লি বা অমৃতসর থেকে প্রার্থী করার প্রস্তাবও বিবেচনা করছে সঙ্ঘ। নীতীশকে বিজেপি জানিয়ে দিয়েছে, ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা হবে না ঠিকই। তবে মোদীকে প্রচার কমিটির প্রধান করা হতে পারে। সেটা দলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এনডিএ-র বিষয় নয়।
এখন মোদী কি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে জাতীয় স্তরে প্রচারে নামবেন? আপাতত জবাব, না। দল মনে করছে, মোদীর এখন মুখ্যমন্ত্রী পদ ছাড়া উচিত না। তাড়াহুড়ো করতে তাঁরা কোনও ভাবেই রাজি নন। |
|
|
|
|
|