ভাবমূর্তি ফিরিয়ে সবার মন পেতেই ক্ষমাপ্রার্থী
ক্ষমা চাইলেন নরেন্দ্র মোদী।
অকপটে বললেন, “মানুষ হিসেবে কোথাও যদি কোনও ত্রুটি বা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ছ’কোটি গুজরাতির কাছে ক্ষমা চাইছি।” তিন বারের জয়ের পর আমদাবাদে গত কালের বিজয় সভা। সেখানে আকস্মিক ভাবেই ক্ষমাপ্রার্থী মোদী।
গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার জন্য মোদী যাতে ক্ষমা চান, সেই দাবি উঠে আসছে গত এক দশক ধরে। কিন্তু প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের বক্তৃতায় কোথাও গোধরা বা দাঙ্গা নিয়ে টুঁ শব্দটি করেননি মোদী। কিন্তু ভোট প্রচারের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে বলার ফাঁকেই ক্ষমা চেয়ে বসেছেন গুজরাতের ‘বিকাশ-পুরুষ’।
এক বার নয়। বারবার। বক্তৃতার ফাঁকে অনেক বার ‘ভুল’ স্বীকার করলেন মোদী। এমনকী ভবিষ্যতে যাতে আর কোনও ‘ভুল’ না হয়, তার জন্য জনতার আশীর্বাদ চাইলেন। বললেন, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি চেষ্টা করেছি কারও খারাপ না করার। আপনারা আমাকে ক্ষমতা দিয়েছেন। এ বারে আশীর্বাদ করুন, যাতে ভবিষ্যতে কোনও ভুল না করি। আমার হাতে যাতে কারও অমঙ্গল না হয়॥
প্রশ্ন উঠছে, মোদী যদি ক্ষমাই চাইলেন, তা হলে গোধরার নাম উচ্চারণ করলেন না কেন? আর দাঙ্গার কথা যদি না-ই বললেন, তা হলে ক্ষমা চাইলেনই বা কেন?
সরাসরি বলেননি হয়তো, কিন্তু পরোক্ষ ভাবে দাঙ্গার স্মৃতি পিছনে ফেলে উন্নয়নের রথে সওয়ার হওয়ার ডাকই দিয়েছেন মোদী। যখন বলেছেন, “অতীতে কী ঘটেছিল, মানুষ ভুলে যাবে। উন্নয়ন হলে তারা সব কিছু ঠেলে উঠে দাঁড়াবে।”
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, মোদীর এই ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি, গোটাটাই তাঁর কৌশল। তিন বার জয়ের পর মোদীর এখন পাখির চোখ দিল্লি। তিনি জানেন, গুজরাত আর গোটা ভারত এক নয়। তাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সব ভারতীয়ের প্রধানমন্ত্রী হতে হবে। আর তার জন্য দরকার তাঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা।
প্রক্রিয়াটা অনেক আগেই মোদী শুরু করে দিয়েছিলেন। দাঙ্গা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার পরই মোদী বসলেন অনশনে। ‘সদ্ভাবনা মিশন’ নিয়ে।
প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেখানে হয়তো দাঙ্গার জন্য ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু মোদী এটুকু বলে ক্ষান্ত হয়েছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে রাজ্যের কোনও এক জনের বেদনাই আমার বেদনা। সকলের জন্য ন্যায় আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।” কিন্তু বহু-প্রচারিত সেই সদ্ভাবনা মিশনেও ‘ক্ষমা’ শব্দটি উচ্চারণ করেননি মোদী।
এ বারে করলেন। এমন একটা সময় করলেন, যখন তিনি উন্নয়নের ধ্বজা তুলে ভোটে লড়েছেন। তৃতীয় বার জিতেছেন। মোদী বিজয়-মঞ্চটিকে ব্যবহার করলেন এমন ভাবে, যাতে বোঝা যায় উগ্র হিন্দুত্বের রাজনীতি তিনি ফেলে এসেছেন পিছনে। এ বারে তিনি শুধু এবং শুধুই ‘বিকাশপুরুষ’। বিকাশের হাত ধরেই তিনি এখন গোটা দেশের মানুষের কাছে, সব ধর্মের মানুষের কাছে গ্রহণীয় হয়ে উঠতে চান। প্রধানমন্ত্রী হতে গেলে, জাতীয় নেতা হতে গেলে সেটা খুবই জরুরি তাঁর জন্য।
যদিও ‘ক্ষমা’ শব্দটি ব্যবহারের আগে সঙ্ঘ নেতৃত্বকে আগেভাগে জানিয়ে রেখেছিলেন মোদী। যাতে সঙ্ঘ নেতৃত্ব রুষ্ট না হন।
সরাসরি দাঙ্গার জন্য ক্ষমা চাওয়ার অর্থ, প্রত্যক্ষ ভাবে দাঙ্গায় তাঁর দায় স্বীকার করে নেওয়া। মোদী তা করতে পারেন না। মাস কয়েক আগে এক উর্দু কাগজে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও তিনি বলেছিলেন, “আমি অপরাধী হলে আমাকে ফাঁসি দিন। কিন্তু যে অপরাধ করিনি, তার জন্য ক্ষমা চাইব না।”
মোদী সে পথে হাঁটেনওনি। কিন্তু তাঁকে মনে রাখতেই হয়েছে, ঘরে-বাইরে তাঁর বিরোধী নেহাত কম নয়। এবং মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রধান অস্ত্রই কিন্তু সাম্প্রদায়িক তকমা। যখনই তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী করার চেষ্টা হবে, তখনই নীতীশ কুমারের মতো শরিক এনডিএ ছাড়বেন। বন্ধ হয়ে যেতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সম্ভাব্য শরিকের আসার পথও।
মোদী তাঁদের কাছেও নিজেকে এখন প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছেন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নেতা হিসাবে। এ বারের নির্বাচনে মোদীকে টক্কর দিতে ময়দানে নেমেছিলেন কেশুভাই পটেল। ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে ফল বেরোনোর পর মোদী ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে। পরশু গিয়েছিলেন রাজ্যের চার বারের মুখ্যমন্ত্রী মাধব সিংহ সোলাঙ্কির কাছেও।
মোদী এখন স্পষ্ট করে বলছেন, “রাজনৈতিক পণ্ডিতদেরও বুঝতে হবে, গুজরাতের মানুষ আর আশির দশকের জাত-পাতের রাজনীতিতে ফেরত যেতে চান না। তাই যখন ভোটের সময় এসেছে, সকলে সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে ভোট দিয়েছেন। গোটা বিশ্ব দেখেছে, এ বারের ভোট হয়েছে পারস্পরিক সৌহার্দ্যের সঙ্গে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.