|
|
|
|
বিজয়ের বক্তৃতায় তাঁর বার্তা ‘দেশ’কে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
থমকে গেলেন মোদী।
বলতে চান অনেক কিছু। তবু থামতেই হল। জনতার চিল-চিৎকার। ‘দিল্লি’, ‘দিল্লি’! ‘পিএম’, ‘পিএম’!
কাঁধের উত্তরীয়টি একটু সামলে লাজুক মুখ নরেন্দ্র মোদীর। কোনও রকমে জনতাকে শান্ত করে বললেন, “আপনাদের যদি এতই ইচ্ছা, তা হলে ২৭ তারিখ এক দিনের জন্য না হয় দিল্লি ঘুরে আসব।”
২৬ তারিখে শপথ নেবেন। পরদিন দিল্লিতে জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের বৈঠক। এমনিতেই তাঁর দিল্লি আসার কথা। জনতা কী বলতে চাইছে, বিলক্ষণ বুঝেছেন। গুজরাতের জনতা এ বারে তাঁকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে দেখতে চান। মোদীর শরীরের ভাষা
এবং মুখের ভাষা, দুইই বুঝিয়ে দিচ্ছে, তিনিও তা-ই চান। সেই কারণেই যে মোদী গোটা প্রচার-পর্ব জুড়ে গুজরাতি ছাড়া কিছু বলেননি, তিনি আমদাবাদে বিজয়-বক্তৃতা করলেন হিন্দিতে। রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু গুজরাত নয়। আসলে গোটা দেশের মানুষকে উদ্দেশ করেই কথা বলতে চাইছিলেন মোদী। নিজেকে জাতীয় নেতা হিসেবে তুলে ধরতেই তাই বেছে নিয়েছিলেন হিন্দি।
কেশুভাই পটেল হোন বা গুজরাত কংগ্রেসের তাবড় নেতা, ভোট প্রচারেও এঁদের কাউকে তেমন আক্রমণ করেননি মোদী। তাঁর লক্ষ্য বরাবরই ছিলেন মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধী। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিজেপি কর্মী ও নেতাদের মধ্য থেকে ক্রমাগত দাবি উঠছে, মোদীকে এখনই প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী করা হোক। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সঙ্ঘ ও বিজেপি নেতৃত্বকে। চাপ বাড়ানোর জন্য মোদী তাই সুকৌশলে বেছে নেন তাঁর হ্যাটট্রিকের মঞ্চটিকেই। |
|
জয়ের পর এক দলীয় সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার আমদাবাদে। ছবি: পিটিআই |
পঁয়তাল্লিশ মিনিটের বক্তৃতায় কমপক্ষে চব্বিশ বার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী উচ্চারণ করেছেন ‘দেশ’ শব্দটি। বলেছেন, “অসম হোক বা কেরল বা জম্মু-কাশ্মীর, গুজরাতের জয় গোটা ভারতের জয়, যাঁরা উন্নয়ন চান।” অর্থাৎ যে উন্নয়নের সাহস দেখিয়ে তিনি তৃতীয় বার মসনদ দখল করেছেন, তার শক্তিতে দিল্লি-জয়ও করতে চান তিনি। বলেছেন, এই জয় প্রমাণ করে, এ ‘দেশে’র মানুষ ভাল আর মন্দ-র তফাৎ করতে জানে। বলেছেন, “ম্যায় খেল দিল্লি সে জিতনা চাহতা থা, আজ উও খেল জনতা নে মুঝে জিতা দিয়া!”
গুজরাত বিজেপির আর হিমাচল কংগ্রেসের বলে যে কংগ্রেস নেতারা ফলাফল ১-১ বলে দাবি করেছেন, তাঁদেরও এক হাত নিয়েছেন। বলেছেন, “গুজরাত আর হিমাচলের কংগ্রেসের মোট আসন যোগ করলেও বিজেপির থেকে কম হবে।” একই সঙ্গে মোদী কটাক্ষ করলেন তথাকথিত সেই রাজনৈতিক পণ্ডিতদের, যাঁরা এক দশক
ধরে মোদীর সমালোচনা করে এসেছেন। মোদী তাঁদের উদ্দেশে বলেন, “মোদী আবার জিতে এল, সে তো তাঁদের রাতের ঘুম কেড়ে নেবে। আমিও প্রার্থনা করছি, আপনারাও করুন, যাতে তাঁরা স্বস্তিতে রাতে ঘুমোতে পারেন।”
মোদী জানেন, সব সমালোচনাই অমূলক নয়। গোধরা কলঙ্ক এখনও মোছেনি। তাই অতীতের ‘ভুলভ্রান্তি’র জন্য ক্ষমা চাইলেন। গুজরাতের উন্নয়নেও প্রদীপের নীচে অন্ধকার রয়েছে। চিদম্বরম বলেছেন, “মোদীর উন্নয়ন মুষ্টিমেয় কয়েক জনের জন্য।” তাই মোদীর প্রতিশ্রুতি, “আগামী পাঁচ বছরে আরও উন্নয়ন হবে। দলিত, শোষিত, গরিব সকলের উন্নয়ন।” নিজের কর্মপদ্ধতি ব্যাখ্যা করে বললেন, “আমি অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিই। তখন অনেকেই ভাবেন, মোদী এটা কেন করলেন? কিন্তু আমি দিনরাত পরিশ্রম করব। আপনারা আমাকে জিতিয়েছেন। আমিও আপনাদের জিততে চাই।” ‘আপনারা’ মানে, ভারত। |
|
|
|
|
|