কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ায় এবং অতিরিক্ত পণের দাবি পূরণ করতে না পারায় শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল এক বধূকে। অন্য দিকে, প্রতিবেশী যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় এবং সম্পত্তি হাতাতে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে নিজের পিসিমাকে পুড়িয়ে মেরেছিল এক ভাইঝি। শুক্রবার ওই দু’টি পৃথক মামলায় পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হল রামপুরহাটে।
প্রথমে রামপুরহাটের ফাস্ট ট্র্যাক প্রথম আদালতের বিচারক সুধীর কুমার ওই বধূ খুনের দোষী স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্তেরা হলেন সুখচাঁদ শেখ, ফটিক শেখ ও ময়না বিবি।
এ দিনই এক প্রতিবন্ধী প্রৌঢ়াকে পুড়িয়ে মারার অপর একটি মামলার সাজা ঘোষণা করেন রামপুরহাট আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক গুরুপদ মণ্ডল। ওই ঘটনায় বিচারক নিহতের ভাইঝি ও ভাইঝির প্রেমিককে যাবজ্জীবনের সাজা দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্তদের নাম মল্লিকা দাস বৈরাগ্য ও পলাশ দাস বৈরাগ্য।
সরকার পক্ষের আইনজীবী নজফুল হক বলেন, “২০০৯ সালে খুন হয়েছিলেন নাজিমা বিবি (৩৮)। ওই খুনের মামলায় বিচারক ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগে এবং ৪৯৮এ ধারায় বধূ নির্যাতনের মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। ওই বধূর এক দেবর লালচাঁদ শেখকে আদালত উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস করেছে। নাজিমা-খুনে আর এক অভিযুক্ত রূপচাঁদ শেখ এখনও পলাতক।”
জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের আসলপুর গ্রামের নাজিমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রামপুরহাট থানার চন্দনকুণ্ঠার সুখচাঁদের। ২০০৯ সালের ২৩ জুন নাজিমার বাবা মতিউর রহমান মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের অভিযোগ করেছিলেন। মতিউরবাবু অভিযোগ করেছিলেন, বিয়ের পর থেকেই অতিরিক্ত পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নাজিমার উপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার চালাতেন। পরপর দুই কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার পর অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে। মাঝে একবার সুখচাঁদ নাজিমার গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারারও চেষ্টা করেছিল বলে জানা গিয়েছে। মতিউরবাবুর অভিযোগ, ওই বছর ২২ জুন তাঁর মেয়েকে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দুই দেবর মিলে শ্বাসরোধ করে খুন করে।
অপর মামলাটিরও সরকারি আইনজীবী ছিলেন নজফুলবাবু। তিনি বলেন, “২০১২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ময়ূরেশ্বরের রাতমা গ্রামের মেনকা দাস বৈরাগ্যকে (৫৮) খুন করা হয়েছিল। ওই খুনের ঘটনায় বিচারক ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগে ও ৩২৬ ধারায় গুরুতর জখম করার অভিযোগে ভাইঝি মল্লিকা ও তার প্রেমিক পলাশকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছেন।”
জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মেনকাদেবীকে জ্বলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন তাঁর প্রতিবেশীরা। তাঁকে প্রথমে ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন গভীর রাতে হাসপাতালেই মারা যান মেনকাদেবী। তাঁকে উদ্ধারে সাহায্য করা এক প্রতিবেশী কবিতা সেনের দাবি ছিল, প্রতিবেশী জিতেন দাঁ-র বাড়িতে টিভি দেখতে যাওয়ার পথে তিনি মেনকাদেবীর চিৎকার শুনতে পান। পরে অনেকেই সেখানে জড়ো হয়ে যান। তাঁদের কাছেই মেনকাদেবী জানিয়েছেন, মল্লিকা ও পলাশ মিলে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। নজফুলবাবু বলেন, “পলাশের সঙ্গে মল্লিকার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। পিসিমা মেনকা তা মেনে নেননি। তারই আক্রোশে ও সম্পত্তির লোভে দু’জনে পরিকল্পিত ভাবে পিসিমাকে খুন করে। বাড়ির গ্রিলের সঙ্গে কাপড় দিয়ে বেঁধে মেনকাদেবীর গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা।” |