ফেল করা ছাত্রীদের পাশ করানোর দাবিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার আন্দোলনের রেশ পড়ল উত্তরবঙ্গেও। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট নদীপার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য ২৪ জন ছাত্রীকে পাশ করানোর দাবিতে শিক্ষিকাদের তালাবন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানো হল। পড়ুয়ারা তো বটেই, ওই বিক্ষোভে সামিল হন অভিভাবকদের একাংশও। স্কুল সূত্রের খবর, ওই সময়ে শিক্ষিকারা স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের নথিপত্র তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ঘর বন্দি হয়ে পড়ায় শিক্ষিকাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। পুলিশের কাছে খবর যায়। ওই স্কুলে পৌঁছনোর আগেই বিক্ষোভকারীরা তালা খুলে দিয়ে সরে পড়ে বলে অভিযোগ। এর পরে ঘটনার প্রতিবাদে পাল্টা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন শিক্ষিকারা। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অনুরাধা সেন বলেন, “আগের প্রশ্নপত্রেই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাতেও ওই ২৪ জন ছাত্রীর কেউই পাশ করতে পারেনি। ফলে টেস্টে পাশ করানোর কোনও উপায় নেই।” অভিভাবকদের সব জানানো সত্ত্বেও তাঁরা কয়েকদিন ধরেই স্কুলে এসে চাপ সৃষ্টি করছিলেন বলে প্রধান শিক্ষিকার অভিযোগ। তিনি বলেন, “এ দিন তালা ঝুলিয়ে যা করা হল তাতে আমরা আতঙ্কিত।”
পরে পুলিশ গিয়ে অভিযোগ দিলে প্রত্যেককে গ্রেফতার করা হবে বলে আশ্বস্ত করলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। প্রধান শিক্ষিকা পরিস্থিতি সম্পর্কে স্কুলের পরিচালন সমিতির প্রশাসক তথা জেলার সহকারী স্কুল পরিদর্শক কেশব সরকারকে ফোনে সব জানান। পরে সহকারী স্কুল পরিদর্শক কেশববাবু বলেন, “শুক্রবার বেলা ১২টায় বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” অকৃতকার্য ছাত্রীদের অভিভাবকদের অভিযোগ, “শিক্ষিকারা ঠিক মত পড়াননি বলে মেয়েরা কিছুই শিখতে পারেনি। কেন এক বছর মেয়ে গুলোকে আটকে রাখা হবে?” স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ফেল করা ২৪ জন ছাত্রীদের অধিকাংশের সারা বছরে স্কুলে উপস্থিতির হার গড়ে ২০ থেকে ২২ দিন। প্রধান শিক্ষিকার বক্তব্য, “ক্লাস হয় না বলে অভিভাবকদের অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। ফেল করা ওই ছাত্রীদের স্কুলে উপস্থিতির হার এত কম, যে এমনিতেই তাদের আটকে দেওয়া যায়।” প্রধান শিক্ষিকা জানান, স্কুলে ১২২ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩২ জন টেস্ট পরীক্ষায় সব বিষয়ে ফেল করে। তাদের দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে ১৭ ডিসেম্বর ফের মোট ১০০ নম্বরের উপর সব বিষয়ে আগের টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নেই লিখিত পরীক্ষা নেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই ৩২ জনের মধ্যে পরীক্ষা দেয় ২৪ জন ছাত্রী। তাতে দেখা যায়, সকলেই ফেল করেছে। কেউই ২০-র বেশি পায়নি। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “আমরা এটাও বলেছিলাম, ১০০-এর মধ্যে ২৫ নম্বর পেলেও তাকে তুলে দেওয়া হবে। তার পরেও কি করে অভিভাবকেরা পাশ করানোর দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখান! ভীষণ অবাক হয়েছি।” |