গত বছরের ডিসেম্বরে কলকাতায় আমরি হাসপাতালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি এখনও তাজা। স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে দিন কাটছে পরিবারগুলির। ঘটনার ভয়াবহতায় তড়িগড়ি খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছিল কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল থেকে মহকুমা হাসপাতালগুলির অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। বলাবাহুল্য প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নজরে পড়েছিল অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় হাসপাতালগুলির বেহাল পরিকাঠামো। এমনকী বহু হাসপাতাল দেখা গিয়েছে যেখানে অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থাই নেই। প্রশাসনের তরফে সমস্যা মেটাতে হাসপাতালগুলিকে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলা হয়েছিল। ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে একটা বছর। কিন্তু বিভিন্ন জেলা হাসাপাতাল বা মহকুমা হাসপাতাল ঘুরে দেখা গিয়েছে এখনও অগ্নিসুরক্ষা নিয়ে প্রশাসনের সেই নিদের্শ যথাযথ পালন করার ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে গিয়েছে। |
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ব্লকের কয়েক লক্ষ বাসিন্দার কাছে চিকিৎসা পরিষেবার ক্ষেত্রে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল গুরুত্বপূর্ণ। রোজ কয়েক হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। সম্প্রতি সেখানকার অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন তা দেখতে গিয়ে অবশ্য হতাশই হতে হল এই প্রতিবেদককে। দেখা গেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগ, শিশু বিভাগ, জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার প্রভৃতি জায়গায় দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। কিন্তু কোনও যন্ত্রের পাশেই সেটি কতদিন পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য সেই নির্দেশ সংক্রান্ত তথ্য নেই। আগুন লাগলে কী ভাবে ওই যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সেই প্রশিক্ষণ নেই। একই সঙ্গে হাসপাতালের মেডিসিনের স্টোর রুম ও রেকর্ড রুমে কোনও অগ্নিনির্বাপত যন্ত্র দেখতে পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল চত্বরে উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অফিসেও চোখে পড়েনি কোনও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের উপস্থিতি।
হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল সরকার বলেন, “আমরি কান্ডের পরেই আমরা হাসপাতালে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বসিয়েছিলাম। কিন্তু কোথায় কোথায় এই যন্ত্রগুলি বসানো হবে সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও নির্দেশিকা ছিল না। কী ভাবে ওই সব যন্ত্র ব্যবহার করা হবে সে ব্যাপারে দমকলের পক্ষ থেকে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দমকলের কাছে আমরা অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ছাড়পত্রের (এনওসি) জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু আজও দমকলের তরফে কেউ হাসপাতালের অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা দেখতে আসেননি।” অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবহার বিষয়ে যে নির্দেশিকা লাগানো প্রয়োজন তা তিনি জানতেন না স্বীকার করে ইন্দ্রনীলবাবু বলেন “অবিলম্বে প্রতিটি যন্ত্রের সঙ্গে ওই নির্দেশিকা লাগানোর ব্যবস্থা করছি।’’
এতদিনেও কেন ক্যানিং হাসপাতালকে ছাড়পত্র দেওয়া গেল না, সেই প্রশ্নের উত্তরে দমকল দফতরের বারুইপুরের ভারপ্রাপ্ত ওসি বলেন, “ক্যানিং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। আমরা সেই আবেদন দমকলের সদর দফতরে পাঠিয়েছি।” কিন্তু এতদিনেও হাসপাতালের অগ্নিসুরক্ষা ব্যবস্থা দেখতে কেন তাঁরা যাননি তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি ওসি। তবে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বসানো হলেও ক্যানিং-২, বাসন্তী, গোসাবা ব্লক হাসপাতালে এখনও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র বসানো হয়নি।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শিখা অধিকারী বলেন, “ক্যানিং-২, বাসন্তী, গোসাবা ব্লক হাসপাতালে দ্রুত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা চালু করা হবে। পাশপাশি যে নার্সিংহোমগুলির অগ্নিসুরক্ষা সংক্রান্ত ছাড়পত্র নেই, সেগুলির লাইসেন্স নবীকরণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” |