কলেজ-কর্তৃপক্ষের বলবৎ করা নিয়মের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের বিক্ষোভে ভুগলেন অসংখ্য রোগী। হাসপাতালের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় সকাল থেকে বাইরে বসে থাকতে হল দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রতিবন্ধী রোগীদের। অনেকেই ফিরে গেলেন চিকিৎসা না পেয়ে। বিক্ষোভে বাতিল করতে হল অস্ত্রোপচারও। বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটে বরাহনগরের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর দ্য অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপ্ড’ (এনআইওএইচ)-এ।
পুলিশ সূত্রের খবর, বরাহনগরের এই সংস্থাটি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত একটি ৬৫ শয্যার হাসপাতাল ও কলেজ। অস্থির চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি, পেশাগত রোগ ও কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয় এখানে। এটি রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। চারতলা এই হাসপাতালেই রয়েছে শ্রেণিকক্ষ। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা নাগাদ তিন-চারশো পড়ুয়া আচমকা হাসপাতালের মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। কর্তৃপক্ষের চালু করা নিয়মে তাঁদের সমস্যা করবে, এই অভিযোগে বিক্ষোভ শুরু করেন পড়ুয়ারা। ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ও পুর-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কারও সঙ্গেই কথায় রাজি হননি পড়ুয়ারা। পরিস্থিতি সামলাতে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। |
পড়ুয়াদের অভিযোগ, মেন পরীক্ষা না দিয়ে সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দেওয়া যাবে না, কোনও বছর সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা দিলে সে বছর আর মেন পরীক্ষা দেওয়া যাবে না, ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি থাকতে হবে এ রকম বেশ কিছু নিয়ম চালু করেছেন কর্তৃপক্ষ। গত সেপ্টেম্বরে স্নাতক স্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের ৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার পরেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পুরো পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। এক ছাত্রীর কথায়, “কলেজ বলছে এই নিয়মগুলি রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছেন, যা করার কলেজ করছে।”
হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পড়ুয়াদের এই বিক্ষোভের জেরে সকাল থেকেই পরিষেবা ব্যাহত হয়। রোজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই হাসপাতালে আউটডোর চলে। রোজ প্রায় তিনশো রোগী এলেও এ দিন সকালের দিকে কেউ ভিতরে ঢুকতে পারেননি। আগ্রা থেকে কৃত্রিম হাতের জন্য এসেছিলেন সুরজ রাই। বললেন, “হোটেল ভাড়া নিয়ে আছি। আজ ভোরে এখানে চলে এসেছিলাম। কিন্তু কথা বলা তো দূরের কথা, ভিতরে ঢুকতেই পারলাম না।”
একই রকম অবস্থা নদিয়ার সুমিতা বসাকের। পায়ে চোট পাওয়া ছেলেকে নিয়ে ভোরে চলে এসেছিলেন বরাহনগরে। বিক্ষোভের জেরে তাঁকেও ফিরে যেতে হচ্ছে। তিনি বললেন, “চিকিৎসা করাতে এসেও যদি এই অবস্থায় পড়তে হয়, তা হলে কোথায় যাব বলুন তো!” শুধু সুমিতাদেবী বা সুরজবাবুই নন, বিক্ষোভের জেরে অনেক রোগীই ফিরে গিয়েছেন। তবে বেলা ১২টার পরে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বিক্ষোভকারীরা হাসপাতালের পিছনের দরজা দিয়ে কিছু রোগীকে ভিতরে ঢুকতে দেন।
বরাহনগর রাষ্ট্রীয় অস্থি বিকলাঙ্গ সংস্থার সহ-অধিকর্তা আহমেদ ইকবাল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যে নিয়মগুলি চালু করেছেন, তার কয়েকটি মেনে চলা খুবই শক্ত। সেগুলির সংশোধন হওয়া উচিত। এ বিষয়ে আগে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। কিন্তু আচমকা রোগীদের পরিষেবা বন্ধ করে দিয়ে এই বিক্ষোভ ঠিক নয়। পাঁচটি শিশুর অস্ত্রোপচার বাতিল করতে হল। পরীক্ষা-নিয়ামক কান্তাপ্রসাদ সিংহ বলেন, “আগামী সোমবার একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। আমরা পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে নই। নিয়মনীতির কোনও বিষয় যদি খুব শক্ত হয়, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।” |