রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জট কিছুতেই খুলছে না। একটি বাতিল প্যানেল বা তালিকার প্রার্থীরা এ বার আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় নতুন গেরোয় পড়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া।
চারটি জেলায় ২০০৯ সাল থেকে শূন্য পড়ে থাকা পদে এখনও নিয়োগ হয়নি। ওই সব পদে লোক না-নিয়ে নতুন করে প্রাথমিক শিক্ষক পদে কী ভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায়, এ বার সেই প্রশ্ন উঠল। তিন বছর আগে রাজ্য সরকারের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি না-পাওয়া ২৩৮ জন প্রার্থী কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্তের আদালতে মামলা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ২০০৯ সালে বাম জমানায় প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য চার জেলায় যে-পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, তৃণমূল ক্ষমতায় এসে তার প্যানেল খারিজ করে দেয়। সেই শূন্য পদগুলি এ বারের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট পদের তালিকায় জুড়ে দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চান আবেদনকারীরা।
বিচারপতি করগুপ্তের আদালতই প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের পরীক্ষার প্রক্রিয়ার উপরে গত সপ্তাহে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। বুধবার ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ খারিজ করে জানায়, শর্তসাপেক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তাদের নির্ধারিত দিনেই পরীক্ষা নিতে পারবে। এই রায়ে কিঞ্চিৎ স্বস্তি ফিরেছিল শিক্ষা দফতরে। যদিও মূল মামলাটি বিচারপতি করগুপ্তের আদালতেই চলছে।
২৩৮ জন আবেদনকারী অন্য প্রশ্ন তুলে সেই আদালতেই ফের মামলা করায় শিক্ষা দফতর আবার অস্বস্তিতে পড়েছে। চার জেলায় ২০০৯ সালে যে-সব শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, সেই পদগুলি এ বারের ৪৪ হাজার শূন্য পদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কি না, রাজ্য সরকারের কাছে বৃহস্পতিবার তা জানতে চান বিচারপতি। সরকারি আইনজীবী সেই বিষয়ে তথ্য জমা দিতে পারেননি।
আবেদনকারীদের বক্তব্য, ২০০৬ সালে তদানীন্তন বাম সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। আবার ২০০৯ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেই বিজ্ঞপ্তির পরে জানা যায়, ২০০৬ সালের শূন্য পদ যোগ করেই তৈরি হয়েছে ২০০৯-এর খালি পদের তালিকা। ২০০৬-এর আবেদনকারীদের প্যানেল তৈরি করে নিয়োগের পরেই ২০০৯ সালের তালিকার প্রার্থীদের নিয়োগ করা যাবে বলে হাইকোর্ট সেই সময় নির্দেশ দিয়েছিল। এ দিন আবেদনকারীদের আইনজীবী অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ২০০৯ সালের সব শূন্য পদ পূরণ করা যায়নি। চারটি জেলায় আবেদনকারীদের নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এখন দেখা দরকার, রাজ্য সরকার সেই সব পদ এ বারের শূন্য পদের তালিকার সঙ্গে যুক্ত করেছে কি না। বিচারপতি করগুপ্ত রাজ্য সরকারকে বড়দিনের অবকাশের পরে দু’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দেন।
অন্য একটি মামলায় ব্লাইন্ড পার্সন্স অ্যাসোসিয়েশনের ৭৮ জন দৃষ্টিহীন ব্যক্তি মামলা করে বলেন, রাজ্য সরকারের প্রাথমিক শিক্ষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে দৃষ্টিহীনদের আবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। আবেদনকারীদের আইনজীবী প্রতীক ধর বলেন, নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে দৃষ্টিহীনদের বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী সুবীর সান্যাল বলেন, রাজ্য সরকারের ভুল হয়েছে। ভুল সংশোধন করা হচ্ছে। |