শিক্ষায় নয়া নৈরাজ্যে ব্যথিত অমর্ত্য
আলো দেখাচ্ছে চাপে অনড় বহু স্কুল
কেউ কেউ পারে, সকলে পারে না।
পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে অনুত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের মুখে দাঁড়িয়েও কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্তত পাঁচটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতি মানার সিদ্ধান্তে অনড়।
কিন্তু কয়েকটি স্কুল ছাত্রছাত্রীদের দাবির কাছে নতিস্বীকার করেছে।
সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করা পড়ুয়াদের ঘেরাও-আন্দোলনের রেশ গত তিন দিনে ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। কোথাও কোথাও সন্তোষপুরের মতোই এই দাবিতে অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তাঁদের অভিভাবকেরাও।
শিক্ষায় এ-হেন নৈরাজ্য দেখে ব্যথিত অমর্ত্য সেন। বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহের শান্তিদেব ঘোষ সভাঘরে প্রতীচী ট্রাস্টের এক অনুষ্ঠানে এই নোবেল-বিজয়ী বলেন, “ছাত্র-শিক্ষক হৃদ্যতা বাড়াতে হলে যা যা দরকার, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষাকে আকর্ষক করে তোলা তার মধ্যে নিশ্চয় খুব বড় ব্যাপার। তবে এর মধ্যে বেশি রাজনীতি আনা উচিত হবে না। আমি যদি মনে করি কম নম্বর পেলেও নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হবে, তা হলে সত্যিই আক্ষেপের যথেষ্ট কারণ আছে।” স্কুলে পরীক্ষা নেওয়ার প্রসঙ্গে তাঁর অভিমত, পরীক্ষা না-হলে বিচার হয় না। তিনি বলেন, “চিন, কোরিয়া, জাপানে পরীক্ষা ব্যবস্থা আছে। এমনটা তো হতে পারে না যে, ওদের প্রয়োজন আছে আর আমাদের নেই!”
যে-স্কুলকে কেন্দ্র করে শিক্ষায় নতুন ধারার নৈরাজ্যের সূত্রপাত, সেই ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের ফেল করা ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ ঝুলে রয়েছে। স্কুল-কর্তৃপক্ষ আজ, শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন। কুদঘাটের পুটিয়ারি ব্রজমোহন তিয়ারি গার্লস হাইস্কুল এবং ব্রজমোহন ইনস্টিটিউটের কর্তৃপক্ষ অবশ্য শুরুতেই রুখে দাঁড়িয়েছেন। ওই দু’টি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে মোট ১৮ জন ছাত্রছাত্রী অনুত্তীর্ণ। পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার দু’টি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও প্রধান শিক্ষকের ঘরের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান ফেল করা পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা। বিকেলে কিছু বহিরাগতকে নিয়ে অভিভাবকেরা স্কুলের গেটে হুমকিও দেন। তবু নতিস্বীকার করেননি স্কুল-কর্তৃপক্ষ। দু’টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা জানান, ছাত্রছাত্রীদের এই দাবি মানা হবে না। সিঁথির কস্তুরবা কন্যা বিদ্যাপীঠ স্কুলেও ছাত্রী-অভিভাবকেরা পাশ করানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। স্কুল-কর্তৃপক্ষ অনুত্তীর্ণদের ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে চান। বেগতিক বুঝে ছাত্রীরা তাতেই রাজি।
মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে গোরাবাজার বিজয়কুমার হাইস্কুলের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বুধবার বিক্ষোভ দেখান অনুত্তীর্ণেরা। স্কুল-কর্তৃপক্ষ অনড়। জেলার শিক্ষামহলে প্রশংসিত হচ্ছে তাঁদের ভূমিকা। মুর্শিদাবাদ জেলা পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিজয় পাণ্ডে বলেন, “অভিভাবকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার না-করার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা প্রশংসনীয়।” পাশ-ফেল নিয়ে সেখালিপুর হাইস্কুলও নিজেদের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এলাকার বিশিষ্ট জনেরা। বুধবার ন’ঘণ্টা ধরে ছাত্র-বিক্ষোভে আটক থাকার পরেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অনুত্তীর্ণ পড়ুয়াদের পাশ করাতে রাজি হননি স্কুল-কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল নেতারাও। প্রধান শিক্ষক সাহিন শরাফি বৃহস্পতিবার বলেন, “গ্রামবাসীরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন বলেই পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্যের প্রয়োজন পড়েনি।”
যারা অটল
• বহরমপুরের গোরাবাজার বিজয়কুমার হাইস্কুল • মুর্শিদাবাদের লালগোলা সেখালিপুর হাইস্কুল
• হুগলির গুপ্তিপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় • পুটিয়ারি ব্রজমোহন তিওয়ারি গার্লস হাইস্কুল
• পুটিয়ারি ব্রজমোহন ইনস্টিটিউট • সিঁথির কস্তুরবা কন্যা বিদ্যাপীঠ
যাদের বদল
• কালনার কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
• বাগুইআটির অন্নদাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয় • সরশুনা বাসুদেবপুর স্কুল
যারা দোলাচলে
• বালুরঘাট নদীপার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
তবে পুলিশের সাহায্য নিতে হয় গুপ্তিপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও বিজয়কুমার হাইস্কুলের কর্তৃপক্ষকে। দু’টি স্কুলেই বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয় পুলিশ। বিজয়কুমার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মলয় পাল বলেন, “২০০৯ থেকে ২০১১ তিন বছর আমাদের স্কুলে মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৯০-৯৫%। গত বছর সেই হার নামে ৬২.৫ শতাংশে। কড়া হাতে মোকাবিলা করা ছাড়া উপায় ছিল না।” গুপ্তিপাড়ার স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ মণ্ডলও বলেন, “স্কুলের সুনাম রক্ষার স্বার্থেই অকৃতকার্যদের পাশ করানো সম্ভব নয়।” তাঁর আশ্বাস, অকৃতকার্যদের অনেকেই গরিব। সামনের বছর তাদের পড়াশোনার ব্যয়ভার পরিচালন সমিতিই বহন করবে।
মুদ্রার অন্য পিঠের ছবিটা অবশ্য স্কুল-কর্তৃপক্ষের নতিস্বীকারের। বাগুইআটির অন্নদাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয় ও সরশুনা বাসুদেবপুর স্কুল অনুত্তীর্ণদের পাশ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাসুদেবপুর স্কুলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে অনুত্তীর্ণের সংখ্যা ১৯। বিক্ষোভের মুখে তাঁদের পাশ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল। এটা যে চাপের কাছে নতিস্বীকার, তা মেনে নিতেও আপত্তি নেই স্কুল-কর্তৃপক্ষের। কালনাতেও বিক্ষোভের চাপে টেস্টে অনুত্তীর্ণদের মাধ্যমিকে বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। বালুরঘাট নদীপার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে টেস্টে অনুত্তীর্ণদের পাশ করানোর দাবিতে শিক্ষিকাদের তালাবন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুলিশে খবর দিতেই বিক্ষোভকারীরা তালা খুলে সরে পড়েন। প্রধান শিক্ষিকা অনুরাধা সেন বলেন, “আগের প্রশ্নপত্রেই দ্বিতীয় বার পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২৪ জন পাশ করেনি।” জেলার সহকারী স্কুল পরিদর্শক কেশব সরকার জানান, স্কুল-কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের নিয়ে শুক্রবার আলোচনায় বসা হবে।
এ দিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে প্রথম ও তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু ক্লাসে উপস্থিতির হার ৪৫ শতাংশের কম থাকায় তিন ছাত্রকে পরীক্ষায় বসতে দেননি কলেজ-কর্তৃপক্ষ। ওই তিন জনকে পরীক্ষা বসতে দেওয়ার দাবিতে দুই বর্ষের প্রায় ৬০০ ছাত্র পরীক্ষা বয়কট করে বিক্ষোভ দেখান। কর্তৃপক্ষ দাবি মানেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.