অনুত্তীর্ণদের পাশ করানোর সিদ্ধান্তে সেখালিপুর হাইস্কুলের পাশের দাঁড়ালেন এলাকার বিশিষ্টজনেরা। বুধবার টানা ৯ ঘণ্টা ঘেরাও থাকার পরও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেস্টে অকৃতকার্য ৬০ জন পড়ুয়াকে পাশ করাতে রাজি হননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারাই। বুধবারের ঘটনার পর শিক্ষকেরা বৃহস্পতিবার স্কুলে এসে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ফর্ম পরীক্ষা করার কাজ করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহিন সরাফি বলেন, “স্কুলের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। দফায় দফায় আলোচনা করে বিক্ষোভকারীদের বোঝানো গিয়েছে কেন তাদের পাশ করানো যায়নি। গ্রামবাসী ও পরিচালন সমিতি স্কুলের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ না করায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পারা গিয়েছে।”
এলাকার বিধায়ক কংগ্রেসের আখতারুজ্জামান বলেন, “স্কুলের সিদ্ধান্তের উপর রাজ্য সরকার ও শিক্ষা সংসদের হস্তক্ষেপে আশকারা পেয়েছে সেখালিপুরের অনুত্তীর্ণ পড়ুয়ারা। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে সেখালিপুর নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে পথ দেখিয়েছে।” সিপিএমের লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাজাহান আলির কথায়, “গোটা রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সেখালিপুরের নেওয়া অনড় মনোভাবই সঠিক পথ। ঘেরাওয়ে উসকানিদাতাদের কড়া শাস্তি হওয়া দরকার।” জঙ্গিপুর কলেজের অধ্যক্ষ আবু এল সুকরানা নিজে বহু বার ছাত্রদের ঘেরাওয়ের কবলে পড়েছেন। তিনি বলেন, “স্কুলের সিদ্ধান্তের উপর সংসদের হস্তক্ষেপে রাজ্যজুড়ে অরাজকতা প্রশ্রয় পাবে। সেখালিপুরের পথই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের অনুসরনীয় হওয়া উচিত।”
সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত মনে করেন, “এই ধরনের ঘটনায় শিক্ষকেরা আতঙ্কিত। বৃহস্পতিবার ভীত সন্ত্রস্ত এক স্কুলের শিক্ষকেরা নবম শ্রেণিতে ৫টি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ পড়ুয়াকে পাশ করিয়ে দিয়েছেন। সেখালিপুরের পথেই হাঁটতে হবে সমস্ত শিক্ষকদের। আমরা সংগঠন ভাবে বৃহস্পতিবার থেকেই রাস্তায় নেমেছি।” পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলার সহ-সভাপতি আশিস তিওয়ারি বলেন, “স্কুলে শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল। এটা সরকারের জানা প্রয়োজন। কোনও শিক্ষকই ইচ্ছা করে পড়ুয়াদের ফেল করাতে চায় না। সেখালিপুর আমাদের সঠিক পথের দিশা দেখিয়েছে।” তৃণমূলের জেলা শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান শেখ ফুরকান বলেন, “শিক্ষাঙ্গনে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখতে বাইরের, এমনকী সংসদের হস্তক্ষেপও কাম্য নয়।” তাঁর কথায়, “বাইরের হস্তক্ষেপ অযথা জটিলতা বাড়াবে। সেখালিপুরের পথই সঠিক।” |