পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন বাবা, ছেলে সেই পুলিশের চাকরির নিয়োগপত্র পেলেন মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে। বৃহস্পতিবার তেহট্ট হাই স্কুল মাঠের জনসভার মঞ্চে এসেছিলেন হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা। নিহত অশোক সেনের বড় ছেলে অমিত সেনের হাতে হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্র ও অশোকবাবুর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবীর হাতে ক্ষতিপূরণের দুই লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে আহত দুই পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত সুধাময় ঘোষের পরিবারকে সরকারিভাবে ২৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে ও আহত অখিলেশ ঘোষের পরিবারকে দলীয়ভাবে নগদ ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
১৪ নভেম্বর তেহট্টের গুলি চলার জেরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। দফায় দফায় তেহট্টে এসেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। জনসভার পাশাপাশি হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল রাজনীতির কারবারিদের মধ্যে। তবে সে সব ছাপিয়ে মৃত ও আহতদের পরিবারের লোকজনদের একটাই আশঙ্কা ছিল সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখবে তো? ২৭ নভেম্বর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় মৃত অশোক সেনের বাড়িতে এসে বলেছিলেন, সরকার এক মাসের মধ্যে চাকরির ব্যবস্থা করবে। শ্রীঘ্রই মিলবে ক্ষতিপূরণের অর্থও।
অশোকবাবুর ভাই অজিত সেন এদিন বলেন, ‘‘মুকুলবাবু চলে যাওয়ার পর আমরা জানতে পারি যে মুখ্যমন্ত্রী এসেই চাকরির নিয়োগপত্র ও ক্ষতিপূরণের টাকা নিজের হাতে দেবেন। বৃহস্পতিবার সেটাই হল। সরকার কথা রাখায় আমরা খুশি।’’ নিহতের বড় ছেলে অমিত সেন বলেন, ‘‘বাবা মারা গিয়েছে পুলিশের গুলিতে আমিও সেই পুলিশের চাকরিতেই যোগ দেওয়ার নিয়োগপত্র হাতে পেলাম। বাবা চলে যাওয়ার পর সংসারে আয় করার মতো কেউ ছিল না। এই চাকরিটা না পেলে আমাদের সংসারটাই ভেসে যেত। এখন আমি অন্তত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারব।’’ আহত সুধাময় ঘোষের স্ত্রী রীতা ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ২৫ হাজার টাকার চেক দিয়েছেন। স্বামী দিনকয়েক আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছে। এখনও চিকিৎসাবাবদ বিস্তর টাকা খরচ হবে। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও আমাদেরও প্রচুর খরচ হয়েছে। তাছাড়া ও তো আগের মতো আর কাজও করতে পারবে না। নাবালক দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমি যে কি করব বুঝতে পারছি না। তাই আমি মুখ্যমন্ত্রীকে আমার জন্য একটা চাকরির কথাও বলেছি। উনি বলেছেন দেখব্নে।’’ আহত অখিলেশ ঘোষ বলেন, ‘‘এদিন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী আমাকে নগদ ২৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। চাকরির কথা বলাতে তিনি বলেন পরে বিষয়টি দেখবেন।’’ নিহত অশোক সেনকে মুখ্যমন্ত্রী এদিন ভাই সম্বোধন করে বলেন, ‘‘কেউ মারা গেলে সে আর ফিরে আসে না। এমন ঘটনা যাতে আর কোনওদিন না ঘটে সেই বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। আমাদের এটা দেখতে হবে যে অশোক ভাইয়ের মতো আর কারও যেন এই পরিণতি না হয়। আমার একটা অশোক ভাই হারিয়ে গিয়েছে, আর একটা রহিম ভাই যেন হারিয়ে ্না যায়।’’ পাশাপাশি ওই ঘটনাকে দুঃখজনক বলে তিনি বলেন,‘‘ নিহত অশোক সেনের ছোট ছেলে এখন পড়াশোনা করছে। তার ও আহতদের পরিবারের লোকজনের চাকরির বিষয়টি মাথায় আছে। ওদের বায়োডাটা নিয়ে যাচ্ছি আমি কথা দিলে সেই কথা রাখি’’ এদিনের জনসভার শেষে তৃণমূলের তাপস সাহা আহতদের পরিবারের বায়োডাটা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। |