মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস সাংসদ মান্নান হোসেনের সদ্যপ্রয়াত শাশুড়ি রেবা দাসের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গেলেন তৃণমূল সাংসদ সোমেন মিত্র। তিনি কি কংগ্রেসে ফিরছেন? সোমেনবাবুর জবাব, “সামাজিক অনুষ্ঠানে এসে আজকে এ সব (কংগ্রেসে ফেরার প্রসঙ্গ) নিয়ে কিছু বলব না।”
তখন সোমেন মিত্রের এক পাশে বসে বিধানসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরব, অন্য পাশে মান্নান হোসেন আর ঘর ভর্তি জেলা কংগ্রেসের নেতানেত্রীরা। তৃণমূলে সম্প্রতি যে দলের ভিতর থেকেই ক্ষোবের কথা উঠেছে সে প্রসঙ্গে সোমেনবাবুর সোজা কথা, ‘‘দলের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব আমার নয়। সাত বারের বিধায়ক হিসেবে আমি আমার কতর্ব্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।’’ |
কংগ্রেস সাংসদের বাড়ির অনুষ্ঠানে এসে তৃণমূলের লক্ষণ রেখা অতিক্রম করায় দল যদি শাস্তি দেয়?
সোমেনের জবাব, “মান্নানের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সর্ম্পক। মানুষের রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি সামাজিক জীবনও আছে। দল ছাড়তে পারি, কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছাড়তে পারি না। লক্ষণ রেখা কি, তা আমিও জানি। বাড়ির পাশের সিপিএমের কোনও নেতা মারা গেলে তখন কি যাব না? সেখানেও যাব।” দল যদি এর উপর বিধি নিষেধ আরোপ করে? তাঁর জবাব, “তখন দেখা যাবে।”
তাঁর স্ত্রী শিখা মিত্রের দলীয় ‘সাসপেনশন’ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ সোমেন মিত্র বলেন, “তাঁকে কেন সাসপেন্ড করা হয়েছে তা দলই জানে। তবে আজও ওই বিষয়ে দলীয় কোনও চিঠি পাইনি।” সোমেন মিত্রের ওই বক্তব্যের পরই সেখানে পৌঁছন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান ও অমিতাভ চক্রবর্তী। সোমেনবাবুর সঙ্গে কুশল বিনিময় করার পর বাড়ির বাইরে গিয়ে পৃথক ভাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আব্দুল মান্নান। দলত্যগী প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের কংগ্রেসে ফেরার প্রসঙ্গে আব্দুল মান্নান বলেন, “সোমেনদা যে কোনও দলের সম্পদ। তিনি চলে যাওয়ায় দলের ক্ষতি হয়েছে। তিনি সবার উপরে। তিনি তো বটেই, এ ছাড়াও তৃণমূলের যে সব বিধায়ক, সাংসদ অন্তরে অন্তরে জ্বলছেন তাঁরাও কংগ্রেসে ফিরে আসুন সেটাই আমরা চাই।” তিনি বলেন, “দেড় বছরের শাসনে মানুষ তৃণমূলকে চিনে ফেলেছেন। তৃণমূল আর কিছু দিন পর অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। মানুষ সিপিএম-কেও চায় না। গুজরাত, হিমাচল প্রদেশের আজকের নির্বাচনী ফলাফলই বলছে, রাজ্যেও কংগ্রেস ফিরে আসবে। যাঁদের নীতি আদর্শ আছে, ত্যাগ আছে তাঁরা সবাই তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফিরে এসে সদর্থক ভূমিকা পালন করুন।”
সোমেন মিত্র অনুষ্ঠান বাড়ি ছেড়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার একটু পরেই ওই অনুষ্ঠান বাড়িতে পৌঁছে যান প্রদেশ কংগ্রেসের আর এক প্রাক্তন সভাপতি মানস ভুইঞা। |
মানসবাবুও বলেন, ‘‘দেশের মানুষ কংগ্রেস, মনমোহন সিংহ ও সোনিয়া গাঁধীর কৃষিনীতি, অর্থনীতি, এফডিআই-এর পক্ষে তা গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনী ফলাফলেই প্রমাণিত। তাই সোমেন মিত্র-সহ যাঁরাই দল ছেড়ে গিয়েছেন, তাঁরা সবাই কংগ্রেসে ফিরে আসুন। এটাই আমার চাই।” মঙ্গলবার বিকালে কলকাতা বিমান বন্দরে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ মান্নান হোসেনের দেখা হয়। সেখানেই মমতা মান্নানকে তৃণমূলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন বলে মান্নানের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি। তার দু’দিন পর মান্নান হোসেনই ডাক দিলেন, “সোমেনদা বাংলার বাঘ। তিনি এখন খাঁচা বন্দি হয়ে আছেন। তিনি সেই খাঁচা থেকে বের হয়ে কংগ্রেসে ফিরে এসে দলের হাল ধরুন।” সোমেন বলেন, “মান্নান আমার ছোট ভাই! তাই আমাকে বাঘ বলছে। আমি বাঘটাগ নই!”
|
বহরমপুরে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি। |