পরিবর্তনের সরকারই প্রত্যাবর্তন ঘটালো বহিষ্কৃত নেতার। ২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রচারে এসে তেহট্টের বেতাই কলেজ মাঠের এক জনসভায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে দলের স্থানীয় নেতা তাপস সাহাকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরেও তাপসবাবু নির্দল হয়েই লড়াইয়ে নামেন তৃণমূলের প্রার্থী গৌরীশঙ্কর দত্তের সঙ্গে। গৌরীবাবুর চেয়ে বেশি ভোটও পেয়েছিলেন, তবে জিততে পারেননি।
সেই তাপসবাবুকেই বৃহস্পতিবার দেখা গেল তেহট্টের জনসভার মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রীর পাশে। মঞ্চেই দলনেত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েক বার ঘনিষ্ঠভাবে কথাও বললেন। গত ২৭ নভেম্বর তাপসবাবুকে নদিয়া জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তেহট্টে দলের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব তাপসবাবুর হাতেই থাকবে, এমন কথাও সম্প্রতি বলে গিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য স্তরের নেতারা।
সেই মতো বুধবার থেকেই মঞ্চ তৈরির তদারকি থেকে শুরু করে সর্বত্রই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে তাপসবাবুকে। তেহট্টে পুলিশের গুলিচালনার ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারের দরখাস্ত ও কাগজপত্র মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার মতো দায়িত্বও সামলাতে দেখা গেল তাঁকেই। দলনেত্রীর সামনেই বেশ কয়েকবার ভিড়ের সামলানোর দায়িত্বও নিলেন তিনি।
তাপসবাবু বলেন, “দল আমাকে দায়িত্ব দেওয়ায় আমি খুশি। আমি বরাবরই তৃণমূলেরই একনিষ্ঠ কর্মী। আগেও ছিলাম, এখনও আছি। নেত্রী আমাকে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়ায় আমি খুশি। খুশি স্থানীয় তৃণমূলের কর্মীরাও।” তেহট্টে তৃণমূলের পরপর ভরাডুবির পর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে তাঁর হাতে এই দায়িত্ব দেওয়ার পরে তাপসবাবুর কথায়, “অতীত ভুলে গিয়ে এখন দায়িত্বটাই ঠিকমতো পালন করা ও তেহট্টে দলকে চাঙ্গা করাই এখন আমার একমাত্র কাজ।” স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও বললেন, “বিধানসভাতে কিন্তু এখানে আমরা জিতিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের জেতান। আমরা উন্নয়ন করব। আবার এখানে আসব।” বিধানসভা তেহট্ট কেন্দ্রে তৃণমূলের গৌরীশঙ্কর দত্ত’র বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়ার সময়ে দলের উপর তলা থেকে একাধিকবার চাপ এলেও তাপসবাবু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তেহট্ট বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ৭৫৪৪৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন সিপিএমের রণজিত মণ্ডল। তৃণমূলের গৌরীশঙ্করবাবু পান মোট ৩৫১২৭টি ভোট। নির্দল প্রার্থী তাপসবাবু ভোট পান ৫৬২৪৮ টি। অর্থাৎ গৌরীবাবু ও তাপসবাবুর ভোট কাটাকাটি না হলে তেহট্ট কেন্দ্রে অ-বাম প্রার্থীই জিততেন। তবে তেহট্ট ছাড়াও মহকুমার আরও দু’টি কেন্দ্র পলাশীপাড়া ও করিমপুরেও জয়ী হয়েছিল সিপিএম। |
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে দলে ফেরার চেষ্টা করতে থাকেন তাপসবাবু। দলীয়সূত্রে জানা গিয়েছে এবছর ফেব্রুয়ারিতে জেলায় মুখ্যমন্ত্রী আসার পরেই মোটামুটি ঠিক হয়ে গিয়েছিল যে, তাপসবাবুকে ফের দলে নেওয়া হবে। তারপর জুলাই মাসে তিনি ফের তৃণমূলে যোগ দেন। এরপর তেহট্টে গুলি-কান্ডের পরে প্রকাশ্যে কয়েকজন তৃণমূ্ল নেতার নাম চলে আসায় অস্বস্তিতে পরে দল। প্রকাশ্যে চলে আসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। এরপর দলের ‘সাধারণ কর্মী’ তাপসবাবুকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে সরব হন তাপস অনুগামীরা। গত ২৭ নভেম্বর তেহট্টের কমিউনিটি হলে যে কারণে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল স্বয়ং মুকুলবাবুকেও। তেহট্টে এই পরিস্থিতিতে তাপসবাবুকে দায়িত্ব দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূল নিজেদের জমি শক্ত করতে চাইছে বলে মনে করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল। রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌরীশঙ্করবাবু বলেন, “সামনে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে বিভিন্ন জায়গায় দলের অনেককেই নতুনভাবে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাপস ওই এলাকায় বেশ শক্তিশালী সংগঠক। তাই তাকেও এমন দায়িত্ব দেওয়া হল।” |