|
|
|
|
নন্দীগ্রামে চোলাই, নারী-হিংসা নিয়ে নালিশ মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ফের সমস্যায় নন্দীগ্রাম। জমি নিয়ে গোলমাল নয়। শাসক দলের অর্ন্তকলহের জেরেও নয়। চোলাই মদ আর তার প্রভাবে নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে নন্দীগ্রামেএমন অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে।
রাজ্যে চোলাই মদের রমরমা নতুন ঘটনা নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট, হুগলির পাণ্ডুয়ায় চোলাই মদের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু জায়গাটার নাম নন্দীগ্রাম (রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার প্রেক্ষিতে) বলেই হয়তো এমন অভিযোগ পাওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। তড়িঘড়ি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশ সুপারকে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকেও জানানো হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “নন্দীগ্রামের চোলাইয়ের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ওই এলাকায় পুলিশ অভিযান করছে।” তাঁর দাবি, দিন কয়েক আগে চণ্ডীপুর থেকে প্রায় ১২ হাজার লিটার চোলাই ধরা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগে নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের খোদামবাডি ১ পঞ্চায়েতের কৃষ্ণনগর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বিভিন্ন দফতরে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও। অভিযোগকারীদের ফোন করে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়। বিশদ তথ্য জেনে ফোন করা হয় পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপারক। তাঁকে গোটা বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পরে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। চোলাই মদের কারবারিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
এলাকায় চোলাইয়ের রমরমার কথা স্বীকার করেছেন খোদামবাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পরিরানি মণ্ডল। তিনি বলেন, “প্রতিদিন দেখছি, চোলাই খেয়ে এলাকার যুব সম্প্রদায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ব্লক থেকে জেলা স্তরসবাইকে জানিয়েছি। নিজেরা সচেতনতা প্রচারের কাজ করেছি। কিন্তু কোনও প্রভাব পড়েনি। সত্যিই আমরা অসহায়।”
চোলাইয়ের রমরমার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা নাড়ুগোপাল জানা। নিজেকে দলীয় পঞ্চায়েত সভাপতি বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “এলাকায় এমন হচ্ছে, এটা সত্যিই লজ্জার। আমরা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু হচ্ছে না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দারা অবশ্য তৃণমূল নেতৃত্বের এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের অভিযোগ, “নন্দীগ্রামের দু’টি ব্লকের সমস্ত পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। চোলাইয়ের ব্যবসা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অগোচরে হচ্ছে বিশ্বাস করা কঠিন। তৃণমূল নেতৃত্বের কারও কারও মদতও থাকতে পারে। বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানিয়েছি।” পঞ্চায়েত প্রধান পরিরানিদেবী দাবি করেছেন, ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ দিয়ে চোলাই কারবারিদের বিকল্প পেশার ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি।
কী ভাবে ওই এলাকায় চোলাই আসে? বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরের দিকে মোটর বাইকে চেপে অপরিচিত কিছু লোক গ্রামের নির্দিষ্ট ঠেকে মাল দিয়ে টাকা নিয়ে যায়। ওই যুবকেরা সাধারণত কেন্দুমারি জলপাই পঞ্চায়েতের দিকে থাকে। এলাকায় কোনও চোলাইয়ের ভাটি নেই। জলপথে বাইরে থেকে চোলাই আসে। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা বলেন, “এলাকায় সকলে জানেন কারা এর পিছনে রয়েছে। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে চান না। দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে জলপথে কাঁচামাল নিয়ে এসে তৈরি করে এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই এলাকায় চোলাইয়ের রমরমার ফলে নারী নির্যাতন বাড়ছে। সেটাও চিন্তার বিষয়। আমরা নজর দিচ্ছি। ব্লক প্রশাসনকেও সচেতনতা বাড়াতে প্রচারের জন্য বলা হয়েছে।” জেলাশাসক পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি বলেন, “নিয়মিত অভিযান চালিয়ে চোলাই বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে কারবারিদের। সচেতনতা-প্রচারও চালানো হচ্ছে।” তবে তার প্রভাব নন্দীগ্রামে পড়ছে কি না, তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি জেলাশাসক। |
|
|
|
|
|