|
|
|
|
এ বার ছাত্র-যুব উৎসবেও ‘আমরা-ওরা’ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষে রাজ্য যুব কল্যাণ দফতর আয়োজিত এ বছরের বিবেক ছাত্র-যুব উৎসবের মঞ্চেও ট্র্যাডিশন বজায় রেখেই পড়তে চলেছে আমরা-ওরা’র ছায়া। সেখানে ব্রাত্য থাকছেন বিরোধী দলের বিধায়কেরা। অভিযোগ, যে সব এলাকায় তৃণমূল বিধায়ক রয়েছেন, সেখানে তাঁদেরই উৎসব কমিটির পৃষ্ঠপোষকের পদে বসানো হয়েছে। কিন্তু, যে সব এলাকায় তৃণমূলের বিধায়ক নেই, বিরোধী দলের বিধায়ক রয়েছেন, সেখানে পৃষ্টপোষকের পদেও থাকছেন তৃণমূল নেতারা। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ উৎসবের আয়োজক যুবকল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরা। জেলার এক আধিকারিক শুধু বলেন, “দফতর থেকে যে ভাবে নির্দেশ এসেছে, সে ভাবেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কোন এলাকায় কে পৃষ্ঠপোষক হবেন, তার তালিকাও দফতর থেকে পাঠানো হয়েছে। সেই মতো কমিটি গঠিত হচ্ছে।”
তবে তৃণমূল সরকারের এই মনোভাব এই প্রথম নয়। কয়েক সপ্তাহ আগে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেও বিরোধী দলের বিধায়কদের আমন্ত্রণ জানিয়ে পরে আসতে বারণ করা হয়েছিল। এই বিভাজনের ছায়া পড়েছে সেচ দফতরের বৈঠকেও। সম্প্রতি জেলা প্রাথমিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানেও ফের দেখা যায় আমরা-ওরা। সেখানে ব্রাত্য ছিলেন কংগ্রেস-বামফ্রন্টের বিধায়কেরা, আমন্ত্রণপত্রে তৃণমূল বিধায়কদের নাম থাকলেও ছিল না বিরোধী বিধায়কদের নাম।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭ জন তৃণমূল বিধায়ক রয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজন মন্ত্রী। এঁরা প্রত্যেকেই নিজের এলাকায় পৃষ্ঠপোষকের পদ পেয়েছেন। যেমন, মেদিনীপুর সদর ব্লকে পৃষ্ঠপোষক হয়েছেন মৃগেন মাইতি, ডেবরায় রাধাকান্ত মাইতি, শালবনিতে শ্রীকান্ত মাহাতো, দাসপুর ১ ও ২ ব্লকে মমতা ভুঁইয়া, গোপীবল্লভপুর ১ ও ২ ব্লকে চূড়ামণি মাহাতো, নয়াগ্রামে দুলাল মুর্মু এবং ঝাড়গ্রামে সুকুমার হাঁসদা। সুকুমারবাবু পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রীও। তাই তাঁকে ঝাড়গ্রাম ব্লকের পাশাপাশি জেলাস্তরের উৎসব কমিটিরও পৃষ্ঠপোষকের পদে বসানো হয়েছে। কিন্তু, যে সব এলাকায় তৃণমূলের বিধায়ক নেই সেখানে ছবিটা ঠিক উল্টো। বিরোধী বিধায়ক নন বরং সেখানে পৃষ্ঠপোষকের পদেও রয়েছেন তৃণমূল নেতারা। যেমন, গড়বেতা ব্লকে জয় রায়, লালগড়ে (বিনপুর ১) তন্ময় রায়, কেশপুরে শেখ আলহাজউদ্দিন। এঁরা সকলেই যুব তৃণমূল নেতা, সংগঠনের বিভিন্ন পদে রয়েছেন। শহরের ক্ষেত্রেও একই ছবি। যেমন, মেদিনীপুর শহরে উৎসব কমিটির পৃষ্ঠপোষক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী, খড়্গপুর শহরে আশিস সেনগুপ্ত, ঝাড়গ্রামে দশরথ হেমব্রম। প্রসেনজিৎ এক সময় যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি ছিলেন। আশিস এখন যুব তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি।
সরকারের এই আমরা-ওরা’র মনোভাব নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলের বিধায়কেরা। বিনপুরের সিপিএম বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা বলেন, “নতুন করে আর কী বলব? সবেতেই দলবাজি চলছে। মানুষ সব দেখছেন।” কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলেন, “বিধানসভার অধিবেশনেও এই পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি তুলেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম, কেন বিধায়কদের প্রাপ্য সন্মান দেওয়া হচ্ছে না? সরকারি অনুষ্ঠানে ডাকা হচ্ছে না?” তাঁর কথায়, “আগে ছাত্র-যুব উৎসব ঘিরে কত উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। এখন তার নিয়ন্ত্রণ এক গোষ্ঠীর দখলে চলে যাচ্ছে।”
এই উৎসবে ক্যুইজ, প্রবন্ধ রচনা, বসে আঁকো, আবৃত্তি প্রভৃতি প্রতিযোগিতার আয়োজনও রয়েছে। ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে যে কোনও ছাত্রছাত্রী ও যুবক-যুবতী এতে যোগ দিতে পারে। ব্লকস্তরে প্রতিযোগিতা হবে ২৬-২৮ ডিসেম্বর, জেলাস্তরে ২-৩ জানুয়ারি, এবং রাজ্যস্তরে ৬-৭ জানুয়ারি। বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও ছাত্র-যুব উৎসব নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। অভিযোগ ছিল, উৎসব কমিটিতে বেছে বেছে সিপিএমের ছাত্র-যুব নেতাদেরই জায়গা দেওয়া হত। অনেকে মনে করেছিলেন, রাজ্যে পালাবদলের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। তবে নতুন সরকারের পদক্ষেপে দেখা যাচ্ছে, সেই ট্র্যাডিশন চলছেই। শুধু বদলে যাচ্ছে কে ‘আমরা’ আর কে ‘ওরা’। |
|
|
|
|
|