মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম ইন্ডিয়ার মতো ফুটবলের টিম মোহনবাগানের একটা বৃত্ত মনে হয় শেষ হতে চলল!
আই লিগে খেলা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার খাঁড়া ঝুলছে মাথার ওপর। বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের মূল পর্বে যাওয়ার রাস্তাটাও অর্ধেক বন্ধ করে দিল মহমেডান। অলোক মুখোপাধ্যায় সসম্মানে নিজের চাকরি তো বাঁচালেনই, মহমেডানের জন্য মূল পর্বের দরজাও হাট করে খুলে দিলেন। মোহনবাগানের ভাগ্য ঝুলে থাকল পরিসংখ্যানের প্যাঁচালো জটে।
প্রায় দশ সপ্তাহ বাদে মাঠে ফিরলেন টোলগে ওজবে। কোনও চমক তো দেখাতে পারলেনই না, উলটে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকারের ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। পঁয়তাল্লিশ মিনিট খেললেন, বল ধরলেন মাত্র তিনটে। একটা সাইড পোস্টে লাগল, বাকি দু’টোর কোনও ঠিকানা নেই। দু’বার হোঁচট, দু’টো মিস পাস, এক বার অযথা ধাক্কাধাক্কি। নিখুঁত টার্নিং, বিদ্যুৎ-গতির দৌড় এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব স্পষ্ট। বাগানের অস্থায়ী কোচ মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্বীকার করে নিলেন, “ও এখনও সম্পূর্ণ ফিট নয়।” |
ওডাফা ওকোলির চোট নিয়েও কি নতুন ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে মোহনবাগানে? পঁয়ষট্টি মিনিটে নামার পর দেখে মনে হচ্ছিল, ফুটবলের প্রতি কী অনীহা! জোর করে খেলছেন! দল জিতুক-হারুক তাঁর যেন হেলদোল নেই। মোহনবাগান হারছে, নাইজিরিয়ান গোলমেশিন হাত নাড়ছেন গ্যালারির দিকে তাকিয়ে। ইনজুরি টাইমে চোট পেয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লেন। ড্রেসিংরুমে ঢুকলেন খোঁড়াতে খোঁড়াতে ডাক্তারের কাঁধে হাত রেখে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, নিজের গাড়িতে উঠলেন গটগট করে। কর্তারা বলছেন, “পাঁজরে চোট।” ওডাফা বলছেন, “হাঁটুতে লেগেছে।” রহস্য থাকছেই।
মহমেডানের বিরুদ্ধে মোহনবাগান যখন দাঁড়াল তখন ছক মনে হচ্ছিল ৩-১-৩-৩। পাঁচ মিনিটর মধ্যেই বোঝা গেল, ওটা দাঁড়ানোর জন্য দাঁড়ানো। একটু চাপ বাড়তেই পুরো দল নীচে নেমে আসছে নিজেদের বক্সে। মৃদুল নির্দ্বিধায় প্রশ্ন করতে পারেন, কোচিংয়ের কোন পাঠ্য বইয়ে লেখা আছে, নব্বই মিনিট টানা আক্রমণ করতে হবে। সত্যিই তো এখন টানা আক্রমণ কোনও দলই করে না।
কিন্তু একটানা না হোক কখনও কখনও তো আক্রমণে উঠতে হয়। একটা সময় মৃদুলের বাগানের রক্ষণাত্মক ফুটবল দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, ডিফেন্সিভ অনুশীলন চলছে। আই লিগের পরবর্তী ম্যাচের জন্য (২৪ তারিখ যদি ছাড়পত্র পায়)। রক্ষণাত্মক ফুটবলে দোষ নেই। কিন্তু মেহরাজউদ্দিন-রাজীব ঘোষদের সময় কাটিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাসহীন চেষ্টাটা দৃষ্টিকটু। একটা সেটপিস নেই। হ-য-ব-র-ল ফাইনাল পাস ও আগোছালো ফুটবলে ভরা। সাসপেন্ড হওয়ার ভয় কি এ বার মানসিক ভাবেও পঙ্গু করে দিচ্ছে সবুজ-মেরুন ফুটবলারদের? ম্যাচ শেষ হওয়ার আট মিনিট আগে আলফ্রেডকে লাথি মারার অপরাধে লাল কার্ডও দেখতে হয় সৌরভ চক্রবর্তীকে।
মোহনবাগান যতটা খারাপ খেলল, ততটাই ভাল খেলল অলোক মুখোপাধ্যায়ের দল। বিরতির ঠিক আগে ফ্রি কিক থেকে ডান পায়ের ইনসুইংয়ে গোল করলেন কোরিয়ান ফুটবলার ইয়োজুন। মোহনবাগানের বাতিল আজিম ও জয়ন্ত সেনও অনবদ্য ফুটবল খেললেন। অলোক বলছিলেন, “এই ম্যাচ আমার কাছে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই ছিল। ফুটবলার জীবনে এত টেনশন হয়নি, যত এই ম্যাচে কোচ হিসেবে হল।” |