দুঃসংবাদটা প্রথম আনন্দবাজারের থেকেই পেলাম। লেসলি স্যর নেই শোনার পর কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একটা যন্ত্রণা যেন গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠল।
ছোট থেকে যিনি আমার ‘আইডল’, সেই লেসলি ক্লডিয়াস চেয়েছিলেন এ বছর লন্ডন অলিম্পিকে আমার অধিনায়কত্বে ভারতের সাফল্য দেখতে। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। আর এটাই আমাকে আজ সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে।
লন্ডনে যাওয়ার আগে কলকাতায় একটা বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে এসে আমার প্রথম আলাপ লেসলি স্যরের সঙ্গে। তার আগে যে কোনও কারণেই হোক কোনও দিন সেই সুযোগ আসেনি। ফলে সেই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান দিন ছিল। আমার হাত ধরে লেসলি স্যর বলেছিলেন, “লন্ডন অলিম্পিকেই আমরা স্বাধীন ভারতে প্রথম হকিতে সোনা জিতেছিলাম। চৌষট্টি বছর পর লন্ডনে তোমাদেরও কিন্তু সফল হতে হবে।” কিন্তু আমার সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না আমার স্বপ্নের নায়ক।
এই মুহূর্তে মনে ভিড় করে আসছে কত কথা। ১৯৪৮-এ স্বাধীন ভারত প্রথম বার হকি-বিশ্ব শাসন করেছিল লেসলি স্যরদের হাত ধরেই। ১৯৪৮-’৫৬ টানা তিন বার অলিম্পিকে সোনা জিতেছিলেন লেসলি স্যর। ১৯৬০-এ রুপো। সেটাই ছিল ভারতীয় হকির স্বর্ণযুগ। তখন লেসলি স্যারদের দাপটে বাকি হকি দুনিয়া রীতিমতো কাঁপত! |
সে সব দিনের গল্প আমরা জাতীয় শিবিরে থাকার সময় বহু বার শুনেছি। লেসলি স্যরদের প্রসঙ্গ টেনে আমাদের উদ্বুদ্ধ করা হত। ষাটের রোম অলিম্পিক ফাইনালের কিছু ক্লিপিংস আমাদের দেখানো হয়েছিল। আসলে ওই সময় তো এখনকার মতো এত সংবাদমাধ্যম ছিল না। তাই লেসলি স্যরের অসাধারণ সব কীর্তি সেই ভাবে প্রচার পায়নি।
লেসলি স্যরদের সময়কার খেলার ভিডিও আমরা এখন আর সে ভাবে পাই না। যদি পেতাম তবে অনেক কিছু শিখতে পারতাম। উনি যে কত বড়মাপের খেলোয়াড় ছিলেন এখনকার প্রজন্মের হয়তো অনেকেই জানে না! হকি না খেললে আমিও বা কতটুকু জানার সুযোগ পেতাম!
আমি শুধু ভাবি লেসলি স্যরের ফিটনেস নিয়ে। একটা-দু’টো নয়, চারটে অলিম্পিক থেকে যিনি পদক এনেছেন তাঁর কী পরিমাণ ফিটনেস থাকতে পারে! টানা ১২-১৪ বছর হকির সর্বোচ্চ মঞ্চে সাফল্যের খেলে যাওয়াটা মোটেও সহজ নয়। কঠোর পরিশ্রম আর চূড়ান্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ না হলে এ রকম পারফরম্যান্স সম্ভব নয়। আসলে যে ভালবাসা আর একাগ্রতা নিয়ে লেসলি স্যর হকি খেলতেন সেটা হয়তো আমাদের প্রজন্মে কমে এসেছে! সে কারণেই আমরা ওঁর সময়কার সাফল্যের ধারেকাছে পৌঁছতে পারিনি।
হকি খেলার স্টাইলে এখন অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। এখন হকি হয় অ্যাস্ট্রো টার্ফে। হকি স্টিকের পর্যন্ত পরিবর্তন হয়েছে। অনেক নিয়ম পাল্টে গিয়েছে। তবে লেসলি স্যরের মতো ‘অলটাইম গ্রেট’এখন জন্মালেও উনি একই রকম ভাবে সফল হতেন।
এখন হকি মাঠে আমাদের সাফল্যের জন্য ‘চক দে ইন্ডিয়া’ সিনেমার দরকার হয়, মোটিভেশনাল টোটকা হিসেবে। কিন্তু লেসলি স্যরদের দলটাই ছিল একেবারে ‘চক দে... ’!
|
স্টিকে হাত |
ফুটবলটাই চুটিয়ে খেলতেন। এবং ফুটবল খেলতে খেলতে হঠাৎ একদিন বিএনআরের হকি প্র্যাক্টিসে ডাক পান লেসলি ক্লডিয়াস। বয়স তখন ১৯ বছর। বার্লিন অলিম্পিয়ান ডিকি কারের নজরে পড়েন তখনই। সেখান থেকে ১৯৪৬ সালে বিএনআরের হয়ে বেটন কাপে। সেখানেই ফুটবলে ইতি। এবং হকিতে প্রবেশ। |
|
|
এগিয়ে চলা |
ছেলে হেনরির সঙ্গে। |
’৪৮ সাল। পোর্ট কমিশনারের টিমের হয়ে সেন্টার হাফে খেলেন আগা খান টুর্নামেন্টে। তারপরেই অলিম্পিক ট্রায়ালে খেলতে নেমে আঙুলে চিড়। তা সত্ত্বেও এতটাই নজর কাড়েন যে ’৪৮ অলিম্পিক দলের জন্য নির্বাচিত। বয়স ২১। |
|
অলিম্পিকে |
১৯৪৮ থেকে ’৬০ টানা চার বার ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রথম তিনটে গেমসে সোনা, চতুর্থ অলিম্পিকে অধিনায়ক হিসাবে নেমে রুপো। |
লেটার বক্সে চোখ। |
|
মুকুটে পালক |
পিকে-চুনীর মধ্যমণি। |
অলিম্পিক হকিতে সব থেকে বেশি পদক জেতার কৃতিত্ব (তিনটে সোনা, একটা রুপো)। প্রথম ভারতীয় হকি প্লেয়ার হিসাবে টানা চারটে অলিম্পিকে খেলা। পদ্মশ্রী (১৯৭১)। |
|
ক্লডিয়াস না খেললে হকি দেখার কোনও মানেই হয় না।
১৯৪৮ সালে লন্ডন টাইমস
টিম করতে বসে ক্লডিয়াসের নামটা আগে লিখতেই হয়। পরে বাকি দশ জনের নাম।
ধ্যানচাঁদ (নির্বাচকপ্রধান থাকার সময়) |
ধনরাজের স্টিক পরীক্ষা। |
|
কাস্টমস ক্লাবে। পাশে গুরবক্স। |
|