অভিষেক চট্টোপাধ্যায় • ডোমজুড় |
এই না হলে মেলা! দশ দিনে তিন তিনটে যাত্রা, সেই সঙ্গে নাটক, নৃত্যনাট্য,বাউল গান। এক দিন গান শোনাবে বাংলা ব্যান্ড ক্যাকটাস, তো আরেক দিন গাইবেন স্বাগতালক্ষী দাশগুপ্ত, অনুরাধা পড়োয়াল। মঞ্চস্থ হবে বন্দিদের অভিনীত অলোকানন্দা রায়ের পরিচালনায় ‘বাল্মিকী প্রতিভা’। রয়েছে নবীন শিল্পীদের ‘ট্যালেন্ট হান্ট’। বাদ নেই সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা সভাও। আর ফুচকা থেকে এগ রোল, মোগলাই তো রয়েইছে।
এতো ‘আইটেম নাম্বার’-এর ভিড়ে মেলার আসল গল্পটাই না বাদ পড়ে যায়। মেলাটা আসলে যে বইমেলা! ডোমজুড় বইমেলা।
২০০৫ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এসেছিলেন প্রথম ডোমজুড় বইমেলার উদ্বোধনে। সুনীলবাবু নেই। কিন্তু ডোমজুড় বইমেলা আছে। অনেক অনিশ্চয়তা নিয়ে ‘সম্প্রীতি’র উদ্যোগে যে বইমেলা শুরু হয়েছিল হাওড়ার ডোমজুড়ের প্রাচ্যভারতী ক্রীড়াঙ্গনের মাঠে সেটি আজ জেলার অন্যতম জনপ্রিয় বইমেলা। অন্তত মানুষের উপস্থিতি তো তাই বলে।
কিন্তু মানুষের ভিড় জমাতে এত বিনোদনের ভিড়ে বই কেনাটা গৌণ হয়ে যায় না তো? প্রশ্নটার জন্য হয়তো প্রস্তুতই ছিলেন মেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক বাপি ঠাকুর। বললেন, “সত্যি বলতে কী, শুধু বইমেলার কথা বললে গ্রামের মানুষ কম আসে। আমাদের এখানে যারা যাত্রা, নাটক দেখতে আসেন তাঁরাই তো বই কেনেন। |
ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়। |
গত বছর প্রায় ৮ লক্ষ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল। এ বছর আমাদের লক্ষ্য ১৫ লক্ষ টাকার বই বিক্রি করা। বিনোদনকে মাধ্যম করে বইয়ের প্রচার করি আমি। যাত্রা তো বাংলার সংস্কৃতি।” বইমেলা কমিটির পক্ষ থেকে ডোমজুড় থানাকে একটি শববাহী গাড়ি দেওয়ার ইচ্ছাও আছে, জানালেন তিনি। মানে সংস্কৃতির সঙ্গে সমাজসেবাকেও জুড়ে দিল ডোমজুড়। উদ্যেক্তারা জানালেন এ বছর ডোমজুড় বইমেলার বাজেট প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা। থাকছে ৭৬ টি স্টল। দশ দিনের বইমেলা চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বইমেলার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক শক্তিপদ রাজগুরু, রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যাপক স্বামী কৃষ্ণনাথানন্দ, রাজ্য সরকারের মন্ত্রী অরূপ রায়।
কলেজ পড়ুয়া থেকে আশি-পেরোন প্রৌঢ় ডোমজুড় বইমেলার ভিড়ে আছেন সকলেই। যাত্রা শুরু হওয়ার প্রথম বেল পড়ার পরে জনতা উপচে পড়ছে ডায়াসের সামনে পাতা শতরঞ্চিতে। তার কিছুটা দূরেই এক দঙ্গল কলেজ পড়ুয়া বইয়ের স্টলে ‘বর্তমান ভারত’-এর পাল্টা ওল্টাতে ব্যস্ত। এ বছর ডোমজুড় বইমেলার থিম যে ভারতের অন্যতম ‘বেস্ট সেলার’ স্বামী বিবেকানন্দ! |