গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • সিঙ্গুর |
ফের সিঙ্গুরে দেখা যাচ্ছে সিপিএমকে।
২০০৮-এ টাটারা কারখানা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে বিক্ষিপ্ত কিছু কর্মসূচি বাদে, যে রাজনৈতিক দলটিকে এলাকায় দেখতেই পেতেন না স্থানীয় বাসিন্দারা।
সিঙ্গুরে এ বার সই সংগ্রহ অভিযানে নেমেছে সিপিএম। টাটা-প্রকল্পের জন্য অধিগৃহীত জমিতে শিল্পের দাবিই প্রধান। তা ছাড়া, বর্তমান বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘ইচ্ছুক’-‘অনিচ্ছুক’ সব পরিবারের জন্যই সরকারি আর্থিক সাহায্য বাড়ানো এবং চাল দেওয়ার দাবিও রয়েছে। বৃহস্পতিবার অভিযান হল বলরামবাটিতে। একই সঙ্গে চলে দাবি সংবলিত লিফলেট বিলিও।
২০০৭-এর জুন মাসে তাপসী মালিক হত্যা মামলায় দলের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক সুহৃদ দত্ত গ্রেফতার হওয়ার পরে সিপিএমের নেতা-কর্মীরা পা-ই রাখতে পারছিলেন না এলাকায়। ২০০৮-এ পঞ্চায়েত ভোটে সিঙ্গুরে প্রায় নির্মূল হয় সিপিএম। ফের সিঙ্গুরে পা রাখা কি আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে পাখির চোখ করেই? |
চলছে স্বাক্ষর সংগ্রহ। বলরামবাটিতে।—নিজস্ব চিত্র |
জেলা সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’দের। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। ‘অনিচ্ছুক’রা ধৈর্য হারাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ‘অনিচ্ছুক’দের মন পাওয়ার চেষ্টা করছে দল। একই সঙ্গে চাইছে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে। তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, “সিঙ্গুরের যা পরিস্থিতি, তাতে চাষিদের স্বার্থে দ্রুত সমস্যা সমাধানে আদালতের বাইরে গিয়ে টাটাদের সঙ্গে বসে জট কাটাতে উদ্যোগী হতে হবে সব পক্ষকেই।”
সিপিএমের দাবি, তাদের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা পর্যায়ক্রমে সিঙ্গুরের ১৬টি পঞ্চায়েতের প্রতিটি বাড়িতেই যাবেন। বাজেমেলিয়া, খাসেরভেড়ি, গোপালনগর, বেড়াবেড়ির মতো ‘আন্দোলন-এলাকায়’ এ পর্যন্ত তাঁরা যাননি। তবে দলের সিঙ্গুর জোনাল কমিটির সম্পাদক পাঁচকড়ি দাসের দাবি, “এলাকার মানুষের মধ্যে যথেষ্ট ভাল সাড়া পড়েছে। সংগৃহীত সই নিয়ে বামফ্রন্টের তরফে রাজ্যপালের কাছে শীঘ্রই দরবার করা হবে।” বলরামবাটির গৃহবধূ রূপালি পাল, রুমা মাল, টুম্পা পালেরা সই করেছেন সিপিএমের নেতা-কর্মীদের বাড়িয়ে দেওয়া আবেদনপত্রে। তাঁদের যুক্তি, “কারখানাটা হলে ভাল হত। বেকার ছেলেমেয়েরা চাকরি পেত। সমস্যাটা মিটুক।”
তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য তথা সিঙ্গুরের কৃষি-জমি রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মানিক দাসের দাবি, “সিপিএম চাষিদের বিভ্রান্ত করার খেলায় নেমেছে।”
গোপালনগরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষি শ্রীকান্ত ঘোষ, সানাপাড়ার ‘অনিচ্ছুক’ চাষি মীরা পাঁজারা অবশ্য বলছেন, “যেটা ভাল হয়, সেটাই তাড়াতাড়ি হোক। আর ধৈর্য থাকছে না!” |