ইউএপিএ নিয়েও হঠাৎ বেঁকে বসল তৃণমূল
লোকপাল বিল নাটকেরই পুনরাভিনয় তৃণমূলের। এ বারের বিষয়বস্তু বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ)-এর সংশোধনী বিল।
লোকপাল ও লোকায়ুক্ত বিলের সময় লোকসভায় বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যসভায় ওই বিলের বিপক্ষে সরব হয় তৃণমূল শিবির। এ বারেও ঠিক এক ঘটনা। লোকসভায় ইউএপিএ সংশোধনী বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছিল তৃণমূল। গত কাল রাজ্যসভায় বিলের পক্ষে বক্তব্যও রেখেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। কিন্তু আজ রাজ্যসভায় ভোটাভুটির সময় হঠাৎই তাঁরা ওয়াকআউট করেন। ভোটপর্ব মিটে গেলে ফিরেও আসেন। সংসদের উভয় কক্ষে বিলের পক্ষে মুখ খোলার পরেও কেন তৃণমূলের এই পদক্ষেপ, তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যান রাজনীতির কারবারিরা।
ইউএপিএ আইনে কিছু সংশোধনী এনে সংসদের উভয় কক্ষে বিলটি পেশ করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ওই সমস্ত সংশোধনীতে বিশেষত সন্ত্রাসে আর্থিক মদত দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়া আইন আনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ভারতের বেশ কিছু মাদ্রাসাকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। ওই টাকার একটি বড় অংশ ব্যবহার হয় সন্ত্রাসে। এই ধরনের সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ইউএপিএ-আইনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, এই নতুন বিলটি সংখ্যালঘু সমাজের স্বার্থের পরিপন্থী বলে দলের একাংশ মনে করছেন। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তাই সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই ভোটদানে বিরত থেকেছেন রাজ্যসভার সাংসদরা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভায় বিলটির পক্ষে ভোট দেওয়া বা গত কাল রাজ্যসভায় সেটির পক্ষে বলার সময়ে কি তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝতে পারেননি যে, এই বিলে সমর্থন দিলে ভোটবাক্সে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে? একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, বিষয়টি প্রায় তা-ই। অন্তত গত কাল পর্যন্ত এ দিকটি খতিয়ে দেখা হয়নি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, আজ দলের রাজ্যসভা সাংসদ নাদিমুল হক আইনের ওই ধারাগুলি নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বোঝান। সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের প্রসঙ্গও তোলেন। কিছু তৃণমূল সাংসদ অবশ্য বিলটির পক্ষেই ভোট দেওয়ার কথা বলছিলেন। এ নিয়ে মতপার্থক্য সৃষ্টি হওয়ায় তড়িঘড়ি কলকাতায় শীর্ষ নেতৃত্বকে ফোন করা হয়। তৃণমূলের এক সাংসদের কথায়, “কলকাতা থেকে বার্তা আসে ভোট না দেওয়ার জন্য। সেই জন্য আমরা ঠিক ভোটাভুটির আগে চা খেতে চলে যাই।” পরে নাদিমুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি এখনই এ বিষয়ে কিছু জানাতে চাই না। কলকাতা ফিরে গিয়ে জানাব।” রাজ্যসভায় দলের মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন অবশ্য বলেছেন, “আমরা ওয়াকআউট করিনি। হুইপ না থাকায় ভোটের সময় থাকা বা না থাকা বাধ্যতামূলক ছিল না। তা ছাড়া দল ইতিমধ্যেই বিলটি নিয়ে সংসদে নিজের বক্তব্য পেশ করেছে। সুতরাং সংবাদমাধ্যম মনগড়া কিছু লিখতে চাইলে লিখতেই পারে।”
সাংসদরা যা-ই বলুন, গোটা বিষয়টিতে দুই সভার তৃণমূল সাংসদদের সমন্বয়হীনতাই প্রকট হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, বিভিন্ন বিলের ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা ঠিক করতে সব দলের লোকসভা ও রাজ্যসভার জন্য আলাদা বিল কমিটি থাকে।
সেই দুই কমিটির মধ্যে সমন্বয় খুব জরুরি, যেটা তৃণমূলের ক্ষেত্রে নেই। বস্তুত, দলের লোকসভার এক সাংসদ এ নিয়েই আক্ষেপ করে বলেছেন, “দু’কক্ষের মধ্যে কোনও সমঝোতা নেই। কে কী করছে, কার নির্দেশে করছে কেউ জানে না। যত দিন যাচ্ছে, তত বোঝাপড়ার চূড়ান্ত অভাব দেখা দিচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.