হিমাচলের পর লক্ষ্য কর্নাটক
মোদীকে রুখতে হাতের তাস সাজাচ্ছে কংগ্রেস
গুজরাতে ভরাডুবি হল ঠিকই। কিন্তু কংগ্রেসের হতাশা কিছুটা লাঘব করল হিমাচল প্রদেশ।
লোকসভা ভোটের দেড় বছর বাকি। তার আগে কংগ্রেস অন্তত বলার সুযোগ পেল, ফলাফল ১-১। দুর্নীতির অভিযোগ ও সংস্কারের বিরোধিতা করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার চালিয়েছিল যে বিজেপি, তাদের থেকেই একটি রাজ্য ছিনিয়ে নিল কংগ্রেস। তা ছাড়া রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েও যে ভোটে জেতা যায়, সেই বোধোদয়েও বল পেলেন কংগ্রেস নেতারা। আবার রাজনীতির কারবারিদের মতে, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের ক্ষেত্র প্রস্তুত হওয়াতেও সম্ভাবনার একটা দরজা খুলল কংগ্রেসের সামনে। লোকসভা ভোটের আগে মোদী-জুজু দেখিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের তাস খেলার সুযোগ পেলেন সনিয়া-রাহুল।
শেষ পর্যন্ত মোদী বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হলে তাঁদের কৌশল কী হবে, আর না হলেই বা কী হবে, সেই ভাবনা তলে তলে আজ থেকেই ব্যস্ত রেখেছে কংগ্রেসকে। কেননা রাজনীতির অলিন্দে প্রচলিত ধারণা হল, মোদী প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হলে রাজনৈতিক আক্রমণে ফের সজীব হবে গুজরাত দাঙ্গার স্মৃতি। সেক্ষেত্রে এনডিএ ভঙ্গুর হবে। নীতীশ কুমার জোট ছাড়তে চাইবেন। এবং তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শুরু করে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ফের জোট গড়তে চাইবে কংগ্রেসের ছাতার তলায়। এমনকী উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যেও মুসলিমরা বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসে আস্থা রাখবেন।
এর বিরুদ্ধ মতও কম ভারী নয়। দলের একাধিক বর্ষীয়ান নেতা আজ প্রশ্ন তোলেন, ধর্মীয় মেরুকরণ হলে সত্যিই কি লাভ হবে কংগ্রেসের? দেশে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা কমবেশি কুড়ি শতাংশ। সংখ্যাগুরুরা ৮০ শতাংশ। ধর্মীয় মেরুকরণ হলে মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি যদি সংখ্যাগুরু ভোটের অর্ধেকও পায়, তা হলে কংগ্রেসের হাতে থাকবে পেনসিল। বড় কথা হল, মেরুকরণের রাজনীতি কংগ্রেস কখনও করেনি। দলে বহু ব্রাহ্মণ নেতা রয়েছেন। দলিত, মুসলিম ছাড়াও উচ্চবর্ণ বরাবরই কংগ্রেসের বড় ভোট ব্যাঙ্ক। সে জন্য মেরুকরণের প্রশ্নে কংগ্রেসের মধ্যে দ্বন্দ্বও চিরন্তুন। তা ছাড়া নরেন্দ্র মোদীও নিজের ‘রিমডেলিংয়ের’ চেষ্টা করবেন। তাই জানুয়ারি মাসে জয়পুরে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরে ভবিষ্যৎ রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হবে বলে ঠিক হয়েছে।
আপাতত প্রকাশ্যে মোদী প্রসঙ্গ এড়াতে চাইছেন কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা। তাঁরা মনে করছেন, মোদীকে ঘিরে এই সব আশঙ্কা আগাম প্রকাশ পেলে তাঁকে অহেতুক গুরুত্ব দেওয়া হবে। উল্টে কংগ্রেস আশা করছে, মোদীকে নিয়ে বিজেপিই এখন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে। বিজেপির সেই অন্তর্দ্বন্দ্ব সামনে এলে কংগ্রেসের
ভাল বই মন্দ নয়। সেই কৌশলেই কপিল সিব্বল থেকে দিগ্বিজয় সিংহরা আজ বলেন, “মিডিয়া মোদী-মোহ ছাড়ুক। আগে বিজেপি স্থির করুক কাকে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী করবে।” এমনকী কটাক্ষ করে কপিল সিব্বল এ-ও বলেন, “বিজেপি এখন মাল্টিব্র্যান্ডের পার্টি।”
এই সব সাত-পাঁচ বাদ দিলে গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশের ভোট ফলাফল থেকে আজ ঘুরে দাঁড়ানোর রসদই সংগ্রহ করতে চেয়েছে কংগ্রেস। মনীশ তিওয়ারি, সলমন খুরশিদের মতো নেতারা বলছেন, এখন পরিষ্কার যে কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতি ভ্রান্ত নয়। গুজরাতের ভোট ফলাফলই দেখিয়ে দিচ্ছে যে শহরাঞ্চলে ভাল ফল করেছে বিজেপি। কারণ সেখানে উন্নয়ন হয়েছে। সেটাই যদি ধারা হয়, তা হলে লোকসভা ভোটে সংস্কার নীতি রূপায়ণের সুফল পাবে কংগ্রেসও। আর গ্রামের মানুষের স্বার্থরক্ষায় নগদ হস্তান্তরের প্রকল্প রূপায়ণ করা হবে, তেমনই খাদ্য সুরক্ষা আইনও আসবে। আম আদমির সামাজিক সুরক্ষার লক্ষ্যে বাজেটে বড় ধরনের ঘোষণাও করবে কেন্দ্র।
দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, দুই রাজ্যে ফল প্রকাশের পর অহমেদ পটেল, দিগ্বিজয় সিংহদের নিয়ে আজ বৈঠক করেন সনিয়া গাঁধী। সেখানে স্থির হয়, কংগ্রেসকে এ বার পাখির চোখের মতো দেখতে হবে কর্নাটককে। হিমাচল প্রদেশে জয় নিশ্চিত করে বিজেপিকে এক প্রস্ত ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে। তার পর কর্নাটকেও বিজেপি পর্যুদস্ত হলে তাদের মনোবল আরও ভেঙে যাবে। দক্ষিণের এই রাজ্যে অন্তর্কলহে জেরবার বিজেপিকে সেই ধাক্কা দেওয়াটা পাহাড়প্রমাণ চ্যালেঞ্জ হবে না বলেই আশা কংগ্রেসের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.