ভোট কেটে কংগ্রেসকেই বেগ দিলেন কেশুভাই |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
ব্র্যান্ড-মোদীর ধাক্কায় চুরমার হয়ে গেল কেশুভাই পটেল আর শঙ্করসিন বাঘেলাদের স্বপ্ন। মোদীকে উৎখাত করা তো দূরস্থান, মোদীর গড়ে সে ভাবে আঁচড়ও কাটতে পারলেন না তাঁরা।
অথচ এ বারের ভোটেই নরেন্দ্র মোদীর ভিত নড়িয়ে দিতে বিজেপি ছেড়ে নতুন দল গড়েছিলেন কেশুভাই। সৌরাষ্ট্রে তাঁর প্রতি পটেল সম্প্রদায়ের সহানুভূতিকে কাজে লাগিয়ে মোদীর কপালে ভাঁজও ফেলেছিলেন। আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলের একাংশও সমর্থন করছিল কেশুভাইকে। কংগ্রেসও কেশুভাইয়ের গর্জনে অনেকটাই বেশি স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু ভোটের ফল বেরনোর পর দেখা গেল, মাত্র দু’টি আসন ছাড়া আর কোথাও তেমন ছাপ ফেলতে পারেননি কেশুভাই। এবং অসহায় কংগ্রেস এখন বুঝতে পারছে, কেশুভাইয়ের জন্য বিজেপির থেকে তাদেরই খেসারত দিতে হয়েছে ঢের বেশি। মোদী-বিরোধী ভোটে থাবা বসিয়ে বিজেপিরই সুবিধা করে দিয়েছেন এই প্রবীণ নেতা। |
|
মিঠে বার্তা: মোদীর যাত্রা ভঙ্গ করতে পারেননি। তাঁরই হাতে
মিষ্টিমুখ কেশুভাই পটেলের। বৃহস্পতিবার গাঁধীনগরে। ছবি: পিটিআই |
তার মানে অবশ্য এ নয় যে, কেশুভাইকে নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন মোদী। পটেল সম্প্রদায়, বিশেষ করে লেওবা পটেলদের উপর কেশুভাইয়ের প্রভাব এখনও অটুট। আজ বিজয়-বক্তৃতা দেওয়ার আগেই তাই কেশুভাইয়ের বাড়িতে ছুটেছেন মোদী। আশীর্বাদ নিয়েছেন কেশুভাইয়ের থেকে। মিষ্টিমুখ করেছেন।
গুজরাতের বিজেপি নেতা হারিন পাঠক অবশ্য কবুল করছেন, “আমাদের আশঙ্কা ছিল, সৌরাষ্ট্রে অন্তত দশটি আসন জিতবেন কেশুভাই। তাঁর পিছনে শুধু একটি সম্প্রদায় নয়, সমর্থন রয়েছে স্থানীয় স্তরের সঙ্ঘ শিবিরেরও।”
কেন তবে মোদী-ঝড় থামাতে পারলেন না কেশুভাইরা?
বিজেপি নেতাদের বিশ্লেষণ, সেটি মোদীর উন্নয়নের রাজনীতির জন্যই। গুজরাতের মানুষ ব্যবসা বোঝেন। কেশুভাইয়ের প্রতি তাঁদের আবেগ থাকতে পারে। কিন্তু মোদী যখন উন্নয়ন করছেন, সরকার গড়ার চাবিকাঠি তাঁর হাতেই রয়েছে, তখন অন্য কাউকে ভোট দিয়ে সেটি নষ্ট করার পক্ষপাতী নন তাঁরা।
সংখ্যালঘু ভোট মোদী তেমন না পান, এক জন সংখ্যালঘু প্রার্থীও তিনি না দিন কিন্তু উন্নয়নের স্বার্থে মোদীকে হারাতে মানুষ রাজি ছিলেন না। এ বারে আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে শহরের সংখ্যা বেড়েছে। শহরাঞ্চলে বিজেপির ভোট বরাবরই বেশি। তবে কেশুভাইয়ের দলের নেতা সুরেশ মেটার দাবি, “আমাদের তেমন ক্যাডার ছিল না। মোদীর সঙ্গে ভোটে লড়ার মতো যথেষ্ট রসদ ছিল না। নইলে মোদীর উন্নয়নের ফানুস ফাটিয়ে দেওয়া অসম্ভব হত না।” |
জয় |
নরেন্দ্র মোদী
মুখ্যমন্ত্রী
কেন্দ্র-মণিনগর |
অমিত শাহ
কেন্দ্র- নারানপুরা
সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো সংঘর্ষ
মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত |
কেশুভাই পটেল
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
কেন্দ্র-ভিসাভাদর |
বিঠঠল রাদাদিয়া
কেন্দ্র-ধোরাজি
বন্দুক বিতর্কে জড়িত
কংগ্রেস সাংসদ। |
শঙ্করসিন বাগেলা
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
কেন্দ্র-কপদওয়াঞ্জ |
|
|
পরাজয় |
অর্জুন মোধওয়াদিয়া
কংগ্রেস সভাপতি
কেন্দ্র-পোরবন্দর |
কানু কালসারিয়া
বিদ্রোহী বিজেপি নেতা
কেন্দ্র- গরিয়াধর |
শক্তিসিন গোহিল
বিরোধী দলনেতা
কেন্দ্র-ভাবনগর গ্রামীণ |
শ্বেতা ভট্ট
কেন্দ্র-মণিনগর
সাসপেন্ড হওয়া
আইপিএস সঞ্জীব ভট্টের স্ত্রী। |
|
এ বারে বিধানসভা নির্বাচনে অনেক বিধায়কের বিরুদ্ধেই এলাকার মানুষের নানা অভিযোগ, অসন্তোষ ছিল। মোদীর মন্ত্রিসভার পাঁচ জন মন্ত্রী এই নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন। কিন্তু মোদী সর্বত্র প্রচার করে গিয়েছেন, পদ্মে ভোট দেওয়ার অর্থই হল সরাসরি মোদীকে ভোট দেওয়া। বিজেপির গোটা প্রচারটিই ছিল মোদী-ময়। তার পাশে কংগ্রেস তেমন কোনও নেতাকে দাঁড় করাতে পারেনি। ফলে মুখহীন কংগ্রেসের সঙ্গে দৌড়ে এমনিই এগিয়ে গিয়েছিলেন মোদী।
কংগ্রেস যখন সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর দিকে তাকিয়ে ছিল, মোদী কিন্তু তার অনেক আগেই ‘বিবেকানন্দ যাত্রা’র মাধ্যমে নিজের প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন। শেষ লগ্নে সনিয়া-রাহুলের মুখে মোদীর উন্নয়নের নেতিবাচক প্রচারও সাহায্যই করেছে বিজেপিকে। |
|