গ্রেফতার প্রিন্সেপ ঘাট থেকে
খাদিম কর্তা অপহরণে হুজি জঙ্গি ধৃত
গারো বছর ধরে তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে এ দেশের কয়েকটি রাজ্যের পুলিশ। বারাণসীতে বিস্ফোরণ, খাদিম কর্তা পার্থপ্রতিম রায়বর্মণকে অপহরণ-সহ একাধিক নাশকতামূলক কাজে অভিযুক্ত ওই জঙ্গির নাগাল মেলেনি। শেষমেশ কলকাতায় এসে ধরা পড়ল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-জিহাদ অল-ইসলাম (হুজি)-র নেতা মিজানুর রহমান। ২০০৭ সালে বারাণসী বিস্ফোরণে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল মিজানুরের ভাই আজিজুর রহমানকে।
কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, খাদিম কর্তা অপহরণের আট বছর পর ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে এ রাজ্যে প্রথম প্রবেশ করে মিজানুর ওরফে বাবলু। বসিরহাটে নিজের বাড়িতে না থেকে অন্য একটি বাড়ি ভাড়া নেয় মিজানুর। গোয়েন্দাদের মিজানুর জানিয়েছে, ওই বছর বাড়ির কাছেই সুন্দরবনে সে তিন বিঘা জমি কেনে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এর পরে সে আবার বাংলাদেশে চলে যায়। তদন্তকারীদের দাবি, মাস তিনেক আগে বসিরহাট এবং মহেশতলায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে মিজানুর। গোয়েন্দারা তার বাড়ির পাশে এক ‘সোর্স’কে নজরদারিতে লাগান। এর মধ্যে গোয়েন্দারা খবর পান, মিজানুর খাদিম কর্তার অপহরণের আর এক অভিযুক্ত পলাতক নাটা ওরফে আবদুল্লা ওরফে খৈয়ম খুররমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। গোয়েন্দাদের দাবি, বুধবার রাত পৌনে দশটা নাগাদ মিজানুর ওরফে শাহজাহান ওরফে বাবলুর (৪৫) প্রিন্সেপ ঘাটে আসার খবর মেলে। প্রিন্সেপ ঘাট থেকেই তাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ।

মিজানুর রহমান
১৯৯৮

১৯৯৯
জুন ২০০১

ডিসেম্বর ২০০১

২০০৮

২০০৯

ডিসেম্বর ২০১২
কলকাতা থেকে গ্রেফতার
ধৃত মিজানুর রহমানকে লালবাজারে বুধবার রাত থেকে দফায়-দফায় জেরার পর গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ২০০১ সালে খাদিম কর্তা অপহরণের পর হাড়োয়ার পুকুরিয়ায় দেড় লক্ষ টাকায় বাড়ি ভাড়া করে সে। সেখানেই রাখা হয় খাদিম-কর্তাকে। জঙ্গি নেতা আসিফ রেজা খানই তাকে বাড়ি ভাড়া করতে নির্দেশ দিয়েছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। খাদিম কর্তাকে পাহারার দায়িত্বও ছিল মিজানুরের উপরে। পার্থবাবু আহত হওয়ার পর তাঁর চিকিৎসা করেছিল মিজানুর। ঘটনাচক্রে, ২০০১ সালেই ডিসেম্বর মাসে আসিফ রেজা খান পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর নাটা ও মৌলানা মনসুর নামে আর এক জঙ্গির সঙ্গে সে ঢাকায় পালিয়ে যায় বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।
পুলিশকে মিজানুর জানিয়েছে, ১৯৯৮-এ হুজি নেতা মৌলানা মনসুরের হাত ধরে হুজি জঙ্গি সংগঠনে তার প্রবেশ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বসিরহাটের সংগ্রামপুরের বিরামনগরে বাড়ি হওয়ায় বাংলাদেশ যাতায়াতে তার কোনও অসুবিধা ছিল না। আর তাই সংগঠনে তার গুরুত্ব ছিল বেশি। ১৯৯৯ সালে মৌলানার মাধ্যমেই তার যোগাযোগ হয় পশ্চিমবঙ্গে হুজির দায়িত্বে থাকা বাবুভাই ওরফে জালালুদ্দিনের সঙ্গে। জালালুদ্দিনের কথা মতো সে কয়েক জন যুবককে ওই সংগঠনে নিয়োগ করে। এর পরেই তার আলাপ হয় নাটা ওরফে আবদুল্লা ওরফে খৈয়ম খুররমের সঙ্গে।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (এসটিএফ) রাজীব মিশ্র বলেন, “খাদিম কর্তাকে অপহরণের পর তাঁকে হাড়োয়ার পুকুরিয়ার কোন বাড়িতে রাখা হবে তা ঠিক করেছিল মিজানুরই। খাদিম কর্তাকে পাহারা দেওয়া, অপহরণকারী দলের সদস্যদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার দায়িত্বও ছিল তার উপরে। ধৃতের কাছ থেকে জঙ্গি সংগঠন হুজি-র কিছু কাগজপত্র মিলেছে। সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।”
মিজানুরের গ্রেফতারের পর কলকাতা পুলিশের দাবি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের (আইএম) প্রতিষ্ঠাতা আমির রেজা খানের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। ২০০৮ সালে আমির রেজা খানের সঙ্গে ঢাকায় তার বৈঠক হয়। মিজানুরের পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল। সে কারণে শাহজাদা সর্দার নামে বাংলাদেশে ভুয়ো পাসপোর্টও তৈরি করেছিল সে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার পাকিস্তান যাওয়া হয়নি। গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত বাবুভাইয়ের নির্দেশেই মিজানুর কাজ করত। গোয়েন্দাদের সে জানিয়েছে, আট-ন’জন সক্রিয় হুজি সদস্য এ রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, খাদিম কর্তাকে অপহরণের পর মিজানুরকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল আসিফ রেজা খান। ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে সে নিয়মিত টাকা পেত পাকিস্তানে থাকা আমির রেজা খানের কাছ থেকে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের টাকা পাকিস্তান থেকে নাটার মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হত।
চলতি বছরের জুলাই মাসে পার্থ রায়বর্মণ অপহরণ-কাণ্ডে জড়িত হুজির আরও এক সদস্য আখতার হোসেনকে গ্রেফতার করে এসটিএফ। সিবিআই-য়ের কাছে একটি অন্য মামলায় আত্মসমপর্ণ করেছিল হরিয়ানার বাসিন্দা আখতার।
সিআইডি সূত্রে খবর আজ শুক্রবার গোয়েন্দারা লালবাজারে গিয়ে মিজানুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। খাদিম কর্তা অপহরণ মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.