বোধোদয় হয়েছিল আগেই। এ বার কার্যত ভুল স্বীকার করে নিতে চলেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। স্কুলের পরীক্ষায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যে স্কুল-কর্তৃপক্ষেরই, সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষিকাকে চিঠি লিখে তা জানাবে সংসদ। সেই সঙ্গেই সংসদ-কর্তারা জানাবেন, সমস্যা মেটাতে মঙ্গলবার সকালে তাঁরা ‘বন্ধু’র মতো স্কুলে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে সংসদ কর্তাদের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে ফেল করা এক দল ছাত্রীর হাতে সোমবার ২২ ঘণ্টা ঘেরাও হয়ে থাকার পরে মঙ্গলবার দুপুরে সংসদের সচিব ও উপসচিবের (পরীক্ষা) মধ্যস্থতায় মুক্ত হন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা এবং অন্য শিক্ষিকারা। পরে স্কুল থেকে টেস্টের খাতা ও ট্যাবুলেশন শিট নিয়ে যায় সংসদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই স্কুলে ফের টেস্ট নেওয়ার কথা বলে তারা। বুধবার অবস্থান বদলে সংসদ-কর্তারা জানান, স্কুলকে নিজেদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। স্কুলের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ব্যাপারে সংসদ কেন নাক গলাবে, সেই প্রশ্নে তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েন সংসদ-কর্তারা। ওই স্কুলকে নজির করে রাজ্যে একের পর এক স্কুলে টেস্টে ফেল করা পড়ুয়ারা গোলমাল শুরু করেছেন। শিক্ষামন্ত্রীও বলেন, “স্কুলের পরীক্ষায় স্কুল-কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”
বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পরে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে মন্ত্রী বলেন, “সংসদ-কর্তারা যে-ভাবে স্কুলে গিয়ে ঘেরাও তোলেন এবং প্রধান শিক্ষিকা ও অন্য শিক্ষিকাদের মুক্ত করেন, তার প্রশংসা করেছি।” সংসদ যে আগ বাড়িয়ে স্কুলের পরীক্ষায় হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলেছে, মন্ত্রী কি তারও প্রশংসা করছেন? মন্তব্য করতে চাননি ব্রাত্যবাবু। সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “ওই ঘটনার সামগ্রিক পর্যালোচনা হয়েছে। সংসদের প্রতিনিধিরা যে-ভাবে মঙ্গলবার স্কুলের শিক্ষিকাদের ঘেরাওমুক্ত করেন, তার জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।” তবে বৈঠকে উপস্থিত অন্য এক কর্তা জানান, মঙ্গলবার থেকে ওখানকার ঘটনাক্রম নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, স্কুলকে চিঠি দিয়ে সংসদ জানাবে, এ ক্ষেত্রে স্কুল যেটা যথোপযুক্ত মনে করবে, সেই সিদ্ধান্তই নেবে। এতে সংসদের বক্তব্য নেই। বৈঠকে সংসদ-কর্তাদের কাছে গোটা ঘটনার বিবরণ চান মন্ত্রী। কেন সংসদ দ্বিতীয় বার টেস্ট নিতে বলেছিল, আইনে সংসদকে সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে কি না, মন্ত্রী তা-ও জানতে চান। তবে ব্রাত্যবাবু এ-সব নিয়ে পরে কথা বলতে চাননি।
এ দিনই স্কুলে টেস্টের খাতা ও ট্যাবুলেশন শিট ফেরত পাঠায় সংসদ। স্কুল জানায়, পরিচালন সমিতিতে সিদ্ধান্ত হবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতী ঘোষ বুধবার অভিযোগ জানান, সংসদ-কর্তারা জোর করে ট্যাবুলেশন শিটের ফোটোকপি নিয়েছিলেন, ছাত্রীদের সামনে টেস্টের ফলে ‘অসঙ্গতি’ নিয়ে শিক্ষিকাদের দিকে আঙুলও তোলেন। যদিও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদের এক কর্তা বলেন, “ফোটোকপি উনিই দিয়েছিলেন। ঘেরাও তুলে ওঁদের মুক্ত করার জন্য প্রধান শিক্ষিকাই সংসদকে অনুরোধ করেন।” |