চকবাজার থেকে চৌরাস্তা কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা নেমে এসেছেন পথে। শীতের মরসুমে ম্যালের চারদিকে পর্যটকদের ভিড়। বলিউড তারকার ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তরুণীর দল। তাঁদের মধ্যে কেউ দার্জিলিংয়ের তো কেউ কলকাতার। এক কথায়, চা ও পর্যটন উৎসবকে ঘিরে মেতে উঠেছে দার্জিলিং। যা দেখে আপ্লুত গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান বিমল গুরুঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব।
মঞ্চে উঠে বলিউড তারকা কুণাল খেমু বললেন, “এত দিন দার্জিলিংকে দেখেছি সিনেমার পর্দায়। এ বারে প্রথম কাছ থেকে দেখলাম দার্জিলিংয়ের মহিমা। আমার মনে হচ্ছে যেন এক সৌন্দর্যভূমিতে দাঁড়িয়ে আছি। এই দার্জিলিংয়ে বার বার আসতে চাই।” আর বিমল গুরুঙ্গ ঘোষণা করলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে ভারতের পর্যটন মানচিত্রে দার্জিলিংকে মডেল হিসেবে তুলে ধরা হবে। সে প্রসঙ্গ ধরেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বললেন, “শীতের মরসুমে দার্জিলিংয়ে এ ভাবে পর্যটকরা আসবেন কেউ ভাবতে পারেননি। হোটেল মালিকরা তো অবাক হয়ে গিয়েছেন। এই উৎসবের জন্য এটা হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ক্রমশ দার্জিলিং তার গরিমা ফিরে পাচ্ছে। আমরা চাই দার্জিলিংয়ের উন্নয়ন। সেদিকে তাকিয়েই জিটিএ’কে সর্বতোভাবে সাহায্য করা হবে।” |
উৎসবে উপস্থিত জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন, জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গ,
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: রবিন রাই। |
এ দিন পনেরো দিনের জন্য দার্জিলিংয়ে শুরু হল চা ও পর্যটন উৎসব। প্রথমদিন, চকবাজারের মোটর স্ট্যান্ড থেকে দশটি ট্যাবলো সহ একটি র্যালি সকাল ১১টা নাগাদ চৌরাস্তার দিকে রওনা হয়। সে র্যালি যখন দার্জিলিং মেন সড়ক ধরে লাডেন লা রোড হয়ে চৌরাস্তায় পৌঁছয় তখন জনপ্লাবনের আকার নিয়েছে গোটা এলাকা। সিংহি, নেওড়ালি নৃত্যের সঙ্গে পা মেলাতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। নিজেদের পোশাক পড়ে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছেন পাহাড়ের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। র্যালির প্রথম সারিতে বিমল গুরুঙ্গ, গৌতম দেব, কুণাল খেমু। এই উৎসবের কথা জানতে পেরেই বেহালা থেকে স্ত্রী, মেয়ে ও মাকে নিয়ে দার্জিলিংয়ে চলে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তাঁর মেয়ে মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে বার বার মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করার চেষ্টা করছেন কুণালের ছবি। রফিকুলবাবু বার বার খোঁজ নিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বলিউড তারকা শাহরুখ খান কি আসবেন উৎসবে? সঠিক উত্তর অবশ্য কেউ জানাতে পারেননি। রফিকুলবাবু বলেন, “সংবাদপত্রে জানতে পেরেছি চা ও পর্যটন উৎসবের কথা। পরিবারের সকলকে নিয়ে এসেছি। খুব ভাল লাগছে। আরও কয়েকদিন থাকব। মুখ্যমন্ত্রী ও শাহরুখ খান আসবেন বলে শুনেছিলাম। তা হলে আরও ভাল লাগত।”
শুধু রফিকুলবাবুই নন, দমদম থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন অনিতা চট্টোপাধ্যায়। হাড়-কাপানো ঠান্ডায় শীতের জামাকাপড় পড়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে নিয়ে তিনি হাজির হয়েছেন অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে। তিনি বলেন, “একসঙ্গে সাত হাজার গিটারবাদক অনুষ্ঠান করবে বলে শুনেছি। ওই মুহূর্তটা ভাবছি আর শিহরিত হচ্ছি। তা দেখার জন্যই পাহাড়ে এসেছি।”
পর্যটকদের ওই উন্মাদনায় খুশি দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক তথা উৎসব কমিটির সভাপতি এবং গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান সচিব সৌমিত্র মোহন। তিনি জানান, পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই শীতের মরসুমে উৎসব করার কথা ভাবা হয়। তা এবারে সফল হয়েছে বলেই তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “দেশের প্রত্যেকটি পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে উৎসব হয়। একমাত্র দার্জিলিং তা থেকে বঞ্চিত ছিল। সেদিকে চিন্তা করেই গত বছর থেকে চা ও পর্যটন উৎসব শুরু করা হয়। এবারে আমাদের দ্বিতীয় বছর। মুখ্যমন্ত্রী থেকে জিটিএ’ সকলেই সর্বতোভাবে এগিয়ে এসেছেন। তার ফলেই এই শীতের সময়ে কোথাও কোনও হোটেল খালি নেই।” এ দিনের অনুষ্ঠানে বলিউডের ডিরেক্টর বিশাল মাহাৎকার, সিনেমাটোগ্রাফার নিগম বমজান ছিলেন। আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলবে। |