পরিচয় গোপন করে চেন্নাইয়ে একটি স্টিলের কারখানায় কাজ জুটিয়েছিল গোপাল শেখ। সেই খবর বীরভূম জেলা পুলিশের কাছে পৌঁছয়। পরিচয় গোপন করে ওই কারখানায় কাজ নেন এক পুলিশ কর্মী। টানা সাতদিন তার উপরে চলে নজরদারি। প্রকৃত পরিচয় জানার পরই বীরভূম থেকে পুলিশের একটি দল গিয়ে তাকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে।
এই খবর পৌঁছতে নিহত তৃণমূলের বুথ কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের বাবা ধ্বজাধারীবাবু যেমন খুশি হয়েছিলেন, তেমনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নানুরের বাসিন্দারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপাল আদতে নানুরের সাওতা গ্রামের বাসিন্দা। তার পোশাকি নাম শেখ মেহেরুল। এক সময়ে গ্রাম তথা এলাকা দখলকে ঘিরে সিপিএমের হয়ে শরিক আরএসপি-র সঙ্গে ঝামেলা পাকানোর অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ থেকে দুষ্কৃতীদের এনে নানুরে ঝামেলা পাকানোর অভিযোগও রয়েছে। এর বিনিময়ে বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ থেকে আনা দুষ্কৃতীদের ডাকে গোপাল ওই সব এলাকায় ঝামেলা পাকাতে যেত বলে পুলিশের দাবি। সব মিলিয়ে নানুর, লাভপুর, বর্ধমান থানায় খুন, খুনের চেষ্টা, লুঠ, অগ্নিসংযোগ, বেআইনি অস্ত্র রাখা-সহ ২৫-৩০টি অভিযোগ রয়েছে ধৃতের বিরুদ্ধে। |
নানুরের চারকল গ্রামের বাসিন্দা তথা তৃণমূলের স্থানীয় অঞ্চল কমিটির সম্পাদক অশোক দাস, তৃণমূলের নানুর ব্লক সাধারণ সম্পাদক মুন্সি নুরুল ইসলাম ওরফে সোনা চৌধুরীকে খুন-সহ খুনের চেষ্টা ও নানুরে সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ রয়েছে গোপালের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে জেলার সর্বত্র পোস্টারও পড়েছিল। এত কিছুর পরেও অধরা ছিল লাভপুর, নানুরে নানা খুনে অন্যতম অভিযুক্ত গোপাল শেখ। জেলা পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিলাম চেন্নাইয়ে একটি কারখানায় কাজ নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে গোপাল। ফাঁদ পেতে তাকে ধরে বীরভূমে নিয়ে আসা হয়। জেরা করে তার কাছ থেকে বাকি তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।” নিহত অশোক দাসের স্ত্রী ঝর্নাদেবী, সোনা চৌধুরীর স্ত্রী বিউটি বিবিরা বলেন, “ওর মতো খুনিদের চরম শাস্তি হোক। যেন আর কোনও পরিবারকে তাদের প্রিয়জনদের হারাতে না হয়।”
এ দিকে, গোপাল ধরা পড়ার খরবে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষের দাবি, “সিপিএমের মদতে গোপালের মতো দুষ্কৃতীরা এলাকায় ‘ত্রাস’ হয়ে উঠেছিল। এ বার মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে।” সিপিএমের নানুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হাসিবুর রহমান অবশ্য বলেন, “শুধু গোপাল কেন, কোনও দুষ্কৃতীকে আমরা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করি না। আমরাও চাই তার বিরুদ্ধে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিক।” |