অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক বধূর মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং ভাসুরকে আট বছর কারাদণ্ড ও দু’হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিল কালনা আদালত। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছ’মাস কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার কালনার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অভিষেককুমার পাণ্ডে এই নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মন্তেশ্বরের মামুদপুরের বাসিন্দা জামশেদ আলি শেখ ২০০৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর পূর্বস্থলী থানায় অভিযোগ করেন, অর্জুনপুকুর গ্রামের নসিবুল মণ্ডলের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর মেয়ে সান্ত্বনার। বিয়ের সময়ে নগদ টাকা ও গয়না যৌতুক হিসেবে দেওয়া হলেও তার পরে বাপেরবাড়ি থেকে আরও টাকা নিয়ে আসার দাবিতে সান্ত্বনার উপরে নির্যাতন শুরু করে স্বামী নসিবুল, শ্বশুর-শাশুড়ি মোজাম্মেল হক মণ্ডল ও এহিদা বিবি এবং ভাসুর ইজাবুল মণ্ডল। কিন্তু সান্ত্বনা জানায়,বাপেরবাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। এর পরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বাড়ে।
২০০৬-এর ২২ ডিসেম্বর জামশেদ আলি শেখরা জানতে পারেন, শ্বশুরবাড়িতে মেয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। প্রতিবেশীরা তাঁকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। জামশেদ আলির অভিযোগ, হয় তার মেয়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন, অথবা শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালে ৪৫ দিন ভর্তি থাকার পরে মৃত্যু হয় সান্ত্বনার। জামশেদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মৃতার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর ও ননদকে গ্রেফতার করে।
এ দিন সাজা ঘোষণার পরে সান্ত্বনার ভাই বুলবুল আহমেদ বলেন, “৪৫ দিন ধরে হাসপাতালে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে দিদি। এই সাজায় আমরা খুশি।” সাজাপ্রাপ্তদের পরিবারের দাবি, তাঁরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন। মামলার সরকারি আইনজীবী তপনকুমার গণ বলেন, “মৃত্যুর আগে চিকিৎসককে দেওয়া জবানবন্দিতে ওই বধূ জানান, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগান তিনি। মৃত্যুকালীন এই জবানবন্দি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।” পুলিশ জানায়, সান্ত্বনার ননদ মিনা খাতুন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় জুভেনাইল আদালতে তার বিচার চলছে। |