সংবাদমাধ্যমের হইচইয়ে কালনা মহকুমা হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে এক জন স্থায়ী চিকিৎসক পাঠাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু মহকুমার ব্লক থেকে গ্রামীণ স্তর পর্যন্ত বাকি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থা এখনও সেই তিমিরেই।
কালনা মহকুমার পাঁচটি ব্লক কালনা ১ ও ২, পূর্বস্থলী ১ ও ২ এবং মন্তেশ্বরের জনসংখ্যা দশ লক্ষেরও বেশি। এঁদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে ১৭টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চারটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং একটি গ্রামীণ হাসপাতাল। পূর্বস্থলী ১ ব্লকে শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতে রয়েছে গ্রামীণ হাসপাতালটি। বাকি সব এলাকায় সারা বছর গ্রামে-গঞ্জের মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার ভরসা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি।
কিন্তু স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিই এখন চিকিৎসকের অভাবে ভুগছে। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ১৬ জন চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। কোথাও চিকিৎসককে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তুলে নেওয়া হয়েছে। কোথাও বা দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসকের পদ খালি। পূর্বস্থলী ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং মন্তেশ্বর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’টি করে পদ শূন্য। কালনা ১ ব্লকে আটঘোড়িয়া সিমলন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই এক চিকিৎসক। শ্রীরামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ছয় চিকিৎসকের দরকার থাকলেও রয়েছেন মোটে চার জন। নাদনঘাট, সিঙ্গারি, পুঁড়শুড়ি, সহজপুর, আঙ্গারসন, বৈদ্যপুর এবং কুবাজপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক জন করে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে।
সব থেকে খারাপ অবস্থা মন্তেশ্বর ব্লকে। এখানকার ১৩টি পঞ্চায়েত রয়েছে একটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি রয়েছে মন্তেশ্বরে, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র তিনটি পুঁড়শুড়ি, ময়নামপুর এবং ধান্যখেড়ুর এলাকায়। এর মধ্যে পুঁড়শুড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভবনের ভগ্নদশা। স্থানীয় পঞ্চায়েতের একটি বাড়িতে কোনও রকমে কাজ চলে। এক জনও চিকিৎসক নেই। রোগী সামলান এক নার্স এবং এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। ময়নামপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অতীতে শয্যা থাকলেও এখন নেই। চলে শুধু বহির্বিভাগ। ধান্যখেড়ুরে আবার শয্যা থাকলেও কর্মীর অভাবে দেওয়া যায় না পরিষেবা। সেখানেও শুধু বহির্বিভাগই ভরসা।
এক মাত্র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির অবস্থাও নড়বড়ে। অভাব রয়েছে চিকিৎসক, নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং সাফাইকর্মীর। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, যেখানে পাঁচ চিকিৎসকের দরকার, সেখানে রয়েছেন মোটে তিন জন। নার্সের সংখ্যা পাঁচ, দরকার আরও বেশি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সংখ্যা পাঁচ, চাই আরও তিন। এক বছর আগে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি ওয়ার্ড সংক্রামক রোগীদের জন্য তৈরি করা হয়। নার্সের অভাবে তা আজও চালু হয়নি। প্রসূতিদের জন্য নেই অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছাকাছি হাসপাতাল বলতে ৫৫ কিলোমিটার দূরে কালনা মহকুমা হাসপাতাল, ৪০ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল। মন্তেশ্বর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির হাল খারাপ হওয়ায় প্রতি দিনই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাপ বাড়ছে। এখানেও পরিকাঠামোর সমস্যা থাকায় পরিষেবা ঠিকঠাক দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে।”
মহকুমা জুড়ে চিকিৎসকের সঙ্কটের কথা স্বীকার করেছেন জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুভাষচন্দ্র মণ্ডল। তাঁর বক্তব্য, “শূন্যপদগুলিতে কয়েক জন যোগ দিয়েছেন। কয়েক জন যোগ দেবেন বলে খবর পেয়েছি। আশা করি, সমস্যা দ্রুত মিটবে।” সম্প্রতি মহকুমা হাসপাতালের হাল হকিকত জানতে কালনায় আসেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান, মেডিসিন, দন্ত, বক্ষ ও চর্ম বিভাগে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। তাঁর মতে, উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ২৩ জন চিকিৎসককে ছেড়ে দিতে হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাঁর দাবি, “শীঘ্রই আমরা ৪২ জন চিকিৎসক পাচ্ছি। ইতিমধ্যে কয়েক জন কাজে যোগ দিয়েছেন। বাকিরাও শীঘ্রই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কাজে যোগ দেবেন।” |