নিয়মিত আলতো চাপ। আর তাতেই ঠেকিয়ে রাখা যাবে স্তন ক্যানসারকে, এমনই দাবি করছেন কিছু গবেষক। এমনকী ক্যানসার হওয়ার পরেও যদি স্তনে নিয়মিত চাপ দেওয়া যায়, তা হলে রোগ ছড়িয়ে পড়া আটকানো সম্ভব বলে মনে করছেন বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষকের। সান ফ্রান্সিসকোর আমেরিকান সোসাইটি অফ সেল বায়োলজি-র বার্ষিক সভায় এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে।
এখানকার ক্যানসার চিকিৎসকেরা অবশ্য একে নিছক নতুন তথ্য হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের মতে, ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে আশাবাদী হওয়া ঠিক নয়।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, সিলিকনের তৈরি স্তনের ভিতরে তাঁরা ক্যানসারযুক্ত কোষ ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর নিয়মিত বাইরে থেকে সেই সিলিকন-বক্ষে চাপ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অন্য কয়েকটি সিলিকন-বক্ষে ক্যানসার-কোষ প্রবেশ করানো হলেও বাইরে থেকে চাপ দেওয়া হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা গিয়েছে, যে সব ক্ষেত্রে চাপ দেওয়া হয়েছে, সেখানে ম্যালিগন্যান্ট কোষগুলির ছড়িয়ে পড়া কমেছে। এমনকী কোষের বিকৃতিও কমেরই দিকে। অন্য দিকে চাপ না দেওয়া ক্যানসার-কোষ বেড়ে গিয়েছে হু হু করে। বার্কলের ওই গবেষক দলের অন্যতম সদস্য গৌতম বেণুগোপালনের কথায়, “ক্যানসার হলে রুগণ কোষগুলি নিজেদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রক্রিয়া একেবারে ভুলে যায়, তা নয়। তাদের সেই প্রক্রিয়া মনে করাতে হয়। বাইরে থেকে চাপ এলে সেই সজাগ করার কাজটা করে।” গবেষণাগারের মুখ্য বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ফ্লেচার-ও বলেন, “বাইরে থেকে স্তনে চাপ দেওয়াটা হল এক ধরনের সঙ্কেত। যা থেকে ক্যানসার-যুক্ত কোষগুলি নিজেদের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারে।”
তবে গবেষকরা এখনই একে কোনও বিশেষ চিকিৎসা-পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ওষুধপত্র যেমন চলবে চলুক। পাশাপাশি এই চাপের বিষয়টা যদি কেউ দৈনন্দিন রুটিনে এনে ফেলেন, তা হলে তাঁর লাভ বই ক্ষতি হবে না। বেণুগোপালনের কথায়, “শারীরিক কসরত করে পেশিকে শক্তপোক্ত করার ঐতিহ্য বহু বছরের। যে ভাবে শরীরচর্চার জন্য লোকে ওজন তোলে, ঠিক সে ভাবেই ক্যানসারের সঙ্গে লড়ার জন্য স্তনে চাপ দেওয়াটা জরুরি।”
এখানে ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “ক্যানসারের মতো রোগকে ঠেকানোর জন্য যে কোনও ধরনের গবেষণাই স্বাগত। তবে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। এখনই চূড়ান্ত কথা বলার সময় আসেনি।” ক্যানসার চিকিৎসক অরুন্ধতী চক্রবর্তী বলেন, “এটা কতটা কার্যকরী তা বলা সম্ভব নয়। এমন কোনও তথ্য কখনও শুনিনি।” ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য এই গবেষণার সঙ্গে বহু পুরনো একটি ধারণার যোগসূত্র দেখেছেন। তিনি বলেন, “নিঃসন্তান মহিলাদের স্তন ক্যানসারের ভয় বেশি, এটা সব সময়েই বলা
হয়। শিশুকে স্তন্যপান করালে এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয় যা নাকি ক্যানসারকে প্রতিরোধ করে। শিশুর স্তন্যপানের সময়ে স্তনে যে চাপ থাকে, সেটাও কি তা হলে ক্যানসার ঠেকানোর একটা অস্ত্র?” |