থানা ও সালিশি সভায় শ্লীলতাহানি, অভিযোগ
চার পুলিশকর্মী, এক কংগ্রেস নেতা-সহ
আট জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের
থানায় অভিযোগ জানাতে যাওয়া এক মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে পুলিশ মহলে আলোড়ন পড়েছে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় থাকা নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়িতে গত নভেম্বর মাসের শেষার্ধে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে ফুলবাড়ির এক কংগ্রেস নেতার উদ্যোগে আয়োজিত সালিশি সভায় হাজির হলে সেখানেও তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে মহিলার অভিযোগ। অভিযোগ পেয়ে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমারের নির্দেশে ভক্তিনগর থানায় একটি শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ভক্তিনগর থানার এক অফিসারকে বিশদে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার।
শিলিগুড়ির সহকারী পুলিশ কমিশনার প্রদীপ পাল বলেন, “অভিযোগ পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত চলছে। আপাতত এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।” ফুলবাড়ির কংগ্রেস সংগঠন দেখেন জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। জলপাইগুড়ি জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহন বসু বলেন, “আমাদের নেতাদের নামে অনেক সময়ই মিথ্যা অভিযোগ হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব।”
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগকারিণীর বাড়ি রাজগঞ্জ থানা এলাকায়। ফুলবাড়ি এলাকার এক ব্যবসায়ী আইনুল হক ওরফে মুন্সির সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই বিবাদ চলছিল তাঁর। আইনুলবাবুর দাবি, তিনি ওই মহিলাকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেছেন। কিন্তু, ওই মহিলা এখন সম্পর্ক চুকিয়ে সরে যাওয়ার জন্য ছক কষে মিথ্যে অভিযোগ করেছেন বলে আইনুলবাবুর অভিযোগ। ঘটনাচক্রে, অভিযোগকারিণী তাঁর অভিযোগপত্রে মুন্সি ওরফে আইনুলবাবুকেই অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর অভিযোগের মর্মার্থ, আইনুলবাবু তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থা করায় তিনি নিউ জলপাইগুড়ি থানায় যান। কিন্তু, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতার বাড়িতে সালিশি সভা ডাকা হয়। দু’দফায় সালিশি হলেও নিষ্পত্তি হয়নি। মহিলার দাবি, তিনি গোটা ঘটনাটি জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে দু’দফায় এনজেপি ফাঁড়িতে যান। মহিলার অভিযোগ, সালিশি সভা ও থানায়, তাঁকে নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্যের পরে তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয়।
সম্প্রতি গোটা ঘটনা পুলিশ কমিশনার জানতে পারেন। তিনি অভিযোগপত্র পাওয়ার পরে মামলা রুজু করে তদন্তের নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৮ নভেম্বর ভক্তিনগর থানায় এনজেপি ফাঁড়ির ওসি সহ চার পুলিশকর্মী, আইনুলবাবু, এক কংগ্রেস নেতা ও তাঁর তিন অনুগামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। আইনুলবাবুর অভিযোগ, যাবতীয় অভিযোগ মিথ্যে। তাঁর দাবি, “ওই মহিলার পরিবারের জমি সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে সাহায্য করেছিলাম। আলাপের পরে সম্পর্ক তৈরি হলে আমাদের রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়। বর্তমানে মহিলা থাকতে চাইছেন না। সে জন্য নানা অভিযোগ তুলছেন। তা নিয়ে সালিশি সভা হলে সেখানে মহিলার মা ও দাদাও ছিলেন। হেনস্থার কোনও প্রশ্নই নেই।” পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলেই সব স্পষ্ট হবে বলে আইনুলবাবুর দাবি। পাশাপাশি, পুলিশ কমিশনারেটের অন্দরেও অভিযোগ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ভক্তিনগর থানার অভিযুক্ত অফিসাররাও যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। একাধিক পুলিশ অফিসারের দাবি, কোনও মহিলা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ বাড়তি সতর্কতা নিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে মহিলা পুলিশকর্মীদের সাহায্য নিয়েই প্রশ্ন করা হয় বলে পুলিশ কর্তাদের কয়েকজনের দাবি। যে দু’দিন ওই মহিলা থানায় গিয়েছিলেন, সে সময়ে মহিলা পুলিশকর্মীরাও থানায় উপস্থিত ছিলেন বলে পুলিশের একাংশের তরফে দাবি করা হয়। কিন্তু, অভিযোগকারিণীর তরফে দাবি করা হয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, “অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা বাধ্যতামূলক। তাই মামলা রুজু করে তদন্ত হচ্ছে। কে সত্যি, কে মিথ্যে বলছেন, তা তদন্তে প্রমাণিত হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.