সব আসনেই লড়তে হবে, বার্তা বিমানের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পঞ্চায়েত ভোটে হারার আগেই হেরে বসে থাকলে চলবে না। প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে সব আসনেই। রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশের ভারসাম্য বদলে দেওয়ার লড়াই হিসাবে এই নির্বাচনকে ব্যবহার করতে হবে। দলের রাজ্য কমিটির বর্ধিত বৈঠক থেকে জেলার নেতাদের সাফ বার্তা দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করার জন্য গণসংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গড়ার নির্দেশও জারি হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে সিপিএমের সাংগঠনিক স্তরে যে তৎপরতা নজিরবিহীন।
ইদানীং কালে রাজ্য কমিটির একাধিক বৈঠকে বেশ কিছু জেলার প্রতিনিধিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, শাসক দলের সন্ত্রাসের জেরে বহু জায়গায় বামেদের প্রার্থী দেওয়ার মতো অবস্থা থাকবে না। আলিমুদ্দিনে এ বারের রাজ্য কমিটির আলোচনাতেও দক্ষিণবঙ্গের অন্তত ৭টি জেলা থেকে নেতিবাচক পরিস্থিতির রিপোর্ট এসেছে। দলের একাংশের এই নেতিবাচক মানসিকতারই উল্টো দিকে হাঁটার চেষ্টা করেছেন বিমানবাবু। বর্ধিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে মঙ্গলবার তিনি বুঝিয়েছেন, গত ৬ মাসে রাজ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না, এমন তো নয়! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজে জনমানসে অসন্তোষ বাড়ছে। বিভিন্ন জেলায় স্কুল পরিচালন সমিতি ও সমবায়ের নির্বাচনে বামপন্থীরা জিতেছেন। এই অবস্থায় সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার ‘দৃঢ় প্রত্যয়’ নিয়ে এগোনোর কথাই বলেছেন বিমানবাবু। তৃণমূলের সরকার যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকেই ভেঙে দিতে চায়, এই প্রচার সামনে রেখে গ্রামের মানুষকে সমবেত করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদক।
বস্তুত, যে সব জায়গায় একান্তই প্রার্থী দেওয়া যাবে না, সেখানে নির্দলদের সমর্থন করার বিকল্প আলিমুদ্দিন ভেবে রেখেছে। কিন্তু বিমানবাবুরা চাইছেন, প্রার্থী দিতে পারব না এটা ধরে নিয়ে সংগঠন যেন আগে থেকেই বসে না পড়ে! পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত রাজ্য ও জেলা নেতাদের নিয়ে বর্ধিত বৈঠকে বিমানবাবুর আহ্বান, গা ঝাড়া দিয়ে দাঁড়াতে হবে সকলকে! রাজ্য কমিটির এক সদস্যের ব্যাখ্যা, “বামেরা প্রার্থী দিতে না-পারলে এ বারের পঞ্চায়েতে সেই জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে কংগ্রেস। রাজ্যে বিরোধী ভূমিকায় গিয়ে এখন তারা অনেকটাই উজ্জীবিত। আবার বিজেপি-ও অনেক জায়গায় উঠে আসে। এই অবস্থায় জমি হাতছাড়া করা উচিত হবে না।”
পঞ্চায়েতের প্রস্তুতির জন্য এ দিনের বৈঠক থেকে বেনজির ভাবেই রাজ্য ও জেলা স্তরে নজরদারি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। নিরুপম সেন, সূর্যকান্ত মিশ্র, মদন ঘোষ, রবীন দেবদের নিয়ে রাজ্য স্তরের কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন কৃষক সভার কার্যকরী রাজ্য সম্পাদক নৃপেন চৌধুরী। প্রতি জেলার ক্ষেত্রে জেলা সম্পাদকের নেতৃত্বে যে কমিটি তৈরি করতে বলা হয়েছে, তাতে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর তিন সদস্য এবং কৃষক, ছাত্র, যুব ও মহিলা গণসংগঠনের প্রতিনিধিরা থাকবেন। বাম শরিকদের সঙ্গে আসন নিয়ে আলোচনা থেকে শুরু করে প্রার্থী বাছাই পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়াই এই কমিটির তত্ত্বাবধানে হবে। জেলার নীচে জোনাল ও লোকাল স্তরেও এই ধরনের কমিটি তৈরি করে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলায় কমিটি গড়ার কাজ শেষ করতে হবে ১০ জানুয়ারির মধ্যে, রাজ্য স্তরে তার পর্যালোচনা সেরে ফেলতে হবে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে।
পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যবাবু ও কৃষক সভার নৃপেনবাবু বৈঠকে ব্যাখ্যা করেছেন, বাম জমানায় পঞ্চায়েতের সাফল্যের সঙ্গে তৃণমূলের আমলে তার ক্ষমতা খর্বের কথা বলতে হবে প্রচারে। রবীনবাবুর ব্যাখ্যা, সীমানা পুনর্বিন্যাস ও আসন সংরক্ষণের খুঁটিনাটি। প্রথমে সূর্যবাবু ও তার পরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে দিয়ে পঞ্চায়েতের প্রচার শুরু করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। |