জমি নিয়েই মমতাকে চাপ কংগ্রেসের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনকে হাতিয়ার করেই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ তৃণমূল সরকারকে চাপে ফেলতে এ বার মমতার জমি নীতিকেই হাতিয়ার করছে কংগ্রেস।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য আজ দিল্লিতে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে লগ্নি আনতে চাইছেন। অথচ তাঁর জমি নীতিই স্পষ্ট নয়। ল্যান্ড ব্যাঙ্কের নাম করে শিল্পমহলকে ভাঁওতা দিচ্ছেন তিনি।” কংগ্রেসের দাবি, ল্যান্ড ব্যাঙ্ক নিয়ে অবিলম্বে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে রাজ্য সরকারকে। জেলাওয়াড়ি কোথায় কত জমি শিল্পের জন্য রাখা হয়েছে, তার দাগ-খতিয়ান সবিস্তারে জানাতে হবে। প্রদীপবাবু আরও বলেন, জানুয়ারিতে শিল্পপতিদের নিয়ে কলকাতায় একটি সম্মেলন করবে কংগ্রেস। টাটা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদেরও তাতে ডাকা হবে। রাজ্যে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে শিল্পপতিরা কী কী সংশয় প্রকাশ করছেন এবং তা কাটিয়ে ওঠার জন্য কোন কোন বিষয় সুপারিশ করছেন, সে সম্পর্কে একটি রিপোর্ট তৈরি করে তাঁরা সরকারের কাছে পেশ করবেন।
গত কালই দিল্লিতে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির ক্ষেত্রে শিল্পপতিদের সংশয় মুছতে মুখ্যমন্ত্রী কোনও আশ্বাসবাণী দিতে পারেননি। রাজ্যে নতুন কোনও লগ্নির প্রতিশ্রুতিও দেয়নি শিল্পমহল। অম্বানী বা টাটাদের মতো কোনও বড় শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিনিধিও ছিলেন না বৈঠকে।
শিল্পায়নের প্রশ্নে রাজ্যে মমতা সরকারের দুর্বলতাকেই এ বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে অস্ত্র করছে কংগ্রেস। দলের সর্বভারতীয় নেতারা মনে করছেন, ক্ষমতা পরিবর্তনের পরেও রাজ্যে শিল্পায়ন ও উন্নয়নের চাকা না ঘোরায় মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে। তার সুযোগ নিতে পারে কংগ্রেস। এ ব্যাপারে হাইকম্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদীপবাবু বলেন, রাজ্যে শিল্পায়নের পরিবেশ ও পরিকাঠামো তৈরি না করে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, তা নেহাতই লোক দেখানো। তাঁর কথায়, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে রাজ্যের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরির জন্য প্রথমত দায়ী বামেরা। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শেষ পর্যন্ত শিল্পায়নের লক্ষ্যে পদক্ষেপ করলেও তাঁর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া ও নীতি ভ্রান্ত ছিল। রাজ্যের মানুষের আশা ছিল, পরিবর্তনের পর বুঝি পরিবেশ বদলাবে। কিন্তু দেখা গেল, সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষীদের অসন্তোষকে রাজনীতির জামা পরিয়ে মমতা জমি নীতি নিয়ে এমন এক অবস্থান নিলেন, যে এর পর আর রাজ্যে শিল্প হওয়া সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী ল্যান্ড ব্যাঙ্কের কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু কোথায় সেই জমি রয়েছে, কেউ জানে না। যদিও প্রদীপবাবুর এই অভিযোগের জবাবে তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্যে শিল্পোন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইটেই ল্যান্ড ব্যাঙ্কের জমির হিসাব রয়েছে। এ জন্য শ্বেতপত্র প্রকাশের প্রয়োজন নেই।
তবে জমি ব্যাঙ্ক নিয়ে হিসাব চাওয়ার পাশাপাশি সিঙ্গুর প্রশ্নেও তৃণমূল সরকারের অস্বস্তি বাড়াতে চাইছে কংগ্রেস। প্রদীপবাবু আজ বলেন, গত কাল শিল্পপতির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে কেন টাটা গোষ্ঠীকে ডাকা হল না সেটাই বিষ্ময়ের। টাটারা পশ্চিমবঙ্গে দারুণ কাজ করছেন। সল্টলেকে তাঁদের ক্যান্সার হাসপাতাল তার এক বড় দৃষ্টান্ত। কংগ্রেসের দাবি, আদালতের বাইরে টাটাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে সিঙ্গুর বিবাদ মীমাংসা করুক রাজ্য সরকার।
শিল্পপতিদের নিয়ে আগামী মাসে কংগ্রেস যে সম্মেলন কলকাতায় ডাকতে চলেছে, তার মধ্যেও কৌশল রয়েছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, গত কাল শিল্পপতিদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন মমতা। যাতে রাজ্যে লগ্নির ক্ষেত্রে শিল্পপতিরা যে সব সংশয়ের কথা তুলে ধরেছেন, তা প্রকাশ্যে না আসে। কিন্তু কংগ্রেস শিল্পপতির সেই সংশয় ও সুপারিশের কথা
মানুষের সামনে তুলে ধরবে। আর সেই কারণে চেষ্টা করা হবে যাতে কংগ্রেসের সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন টাটাদের কোনও প্রতিনিধি। প্রদীপবাবুর কথায়, পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি করার ক্ষেত্রে শিল্পপতিদের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে। এক সময় জমিতে লাল পতাকা পুঁতে আর কারখানার গেটে লাল পতাকা লাগিয়ে বামেরা ভয় দেখাতেন। এখন তৃণমূল সেই ভয় দেখাচ্ছে। হলদিয়া ও দুর্গাপুরের ঘটনা তারই প্রমাণ। |