অভিযোগ রদ, তবে মুখ্যমন্ত্রীর বাকসংযম চায় কোর্ট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আদালত অবমাননার অভিযোগ খারিজ করলেও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করার জন্য মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সতর্ক করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাঁর প্রতি আদালতের বার্তা, প্রশাসনিক প্রধানের পদে থেকে কথা বলার সময়ে আরও সংযত হোন।
চার মাস আগে বিধানসভায় এক অনুষ্ঠানে মমতা বলেছিলেন, এ দেশে বিচার কেনা যায়। কেন তা হবে, সেই প্রশ্নও তুলে বলেছিলেন, এই মন্তব্যের জন্য তাঁকে জেলে যেতে হতে পারে। তাঁর মন্তব্যে বিচার ব্যবস্থার সম্মানহানি হয়েছে এই অভিযোগে হাইকোর্টে জনস্বার্থ-মামলা দায়ের হয়। আবেদনকারীর আর্জি ছিল, হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করুক। এ দিন সেই আবেদনই খারিজ হল। কেন?
মুখ্যমন্ত্রী যে নির্দিষ্ট কোনও মামলা বা আদালত সম্পর্কে মন্তব্যটি করেননি, প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার সেই অভিমত প্রকাশ করেছিল। আর এ দিন মামলা খারিজের ব্যাখ্যা দিয়ে বেঞ্চ বলেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে আদালত অবমাননা হতে পারে, তার নির্ধারিত গণ্ডি রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই লক্ষণরেখা অতিক্রম করেননি, তাই অবমাননার অভিযোগ টেকে না। “তবে মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন থেকে এ জাতীয় মন্তব্য করা তাঁর উচিত হয়নি।” বলেছে বেঞ্চ।
বস্তুত অবমাননা-মামলা খারিজ করার অর্থ যে মমতার মন্তব্যকে সমর্থন করা নয়, বেঞ্চের রায়ে তা জানিয়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে: মুখ্যমন্ত্রীর উক্তি কোর্ট অনুমোদন করে না। বরং ওঁকে মনে রাখতে হবে, তিনি প্রশাসনিক প্রধান। সুতরাং কথাবার্তায় উনি আরও পরিমার্জিত ও পরিশীলিত হবেন, সেটাই কাম্য। আদালতের মতে, সাংবিধানিক পদে বসে অভিব্যক্তি প্রকাশে নমনীয়তা জরুরি। তাই মমতার উদ্দেশে হাইকোর্টের বার্তা: ভাষা ব্যবহারে আরও সংযম এনে প্রকৃত প্রশাসনিক প্রধান হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। প্রসঙ্গত, প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজুও সম্প্রতি মমতাকে প্রকৃত প্রশাসক হয়ে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন, যা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি।
মামলাটির শুনানি হয়েছে তিনটি ডিভিশন বেঞ্চে। প্রথম শুনানি বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্তের বেঞ্চে। রায় ঘোষণার আগে তিনি উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে বদলি হয়ে যান। পরে হাইকোর্টের তৎকালীন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি প্রতাপ রায়ের বেঞ্চ মামলা শোনে। তার মাঝপথে অরুণ মিশ্র প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেন। তাঁরই বেঞ্চে সোমবার শুনানি শেষ হয়।
বেঞ্চ তখনই জানিয়ে দেয়, নির্দিষ্ট আদালত বা নির্দেশ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী কথাটি বলেননি, সার্বিক দুর্নীতি প্রসঙ্গেই তাঁর মন্তব্য। বেঞ্চ এ-ও জানায়, সমাজে দুর্নীতি রয়েছে, বিচার ব্যবস্থাও সমাজের বাইরে নয়। তাই এ ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত অবমাননা-মামলা হবে কেন, বেঞ্চ প্রশ্নটা তুলেই রেখেছিল।
ফলে মামলা খারিজের একটা ইঙ্গিত সোমবারই মিলেছিল। হাইকোর্ট-সূত্রের খবর: ষাটের দশকে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেন ছানা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত মামলার রায় সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ায় বলেছিলেন, ‘এমন রায় তো কতই হয়!’ আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত প্রফুল্লবাবুর এক টাকা জরিমানা হয়।
তার পরে রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এটাই ছিল প্রথম অবমাননা-মামলা। এ দিন যা খারিজ হওয়ার পরে আবেদনকারী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে হাইকোর্ট সমর্থন করেনি। ওই পদে বসে এ ভাবে লঘু কথা বলা যায় না।” |