খেলার খবর |
‘বুড়ির লাঠি’
অর্ঘ্য ঘোষ • নানুর |
|
|
বুড়িমা, বুড়িমা যাচ্ছ কোথায়?
যাচ্ছি আমি গঙ্গাস্নানে
সে তো বহুদূর
হলেই বা, উপায় কি আছে?
কেন, এই তো পুকুর কাছে।
এই ছড়াটি যে-খেলার অঙ্গ তার নাম আমরা এখন অনেকেই ভুলতে বসেছি। তা হল ‘বুড়ির লাঠি খেলা’। গঙ্গাস্নানযাত্রী বুড়িকে আটকে তার লাঠি হাতানোটাই এই খেলার অন্যতম উদ্দেশ্য। ১০-১২ জন ছেলেমেয়ে একসঙ্গে বা পৃথক ভাগে ওই খেলা চলে। অন্য খেলায় ‘মোড়’ নির্ধারণের মতোই এই খেলাতেও গণনার মাধ্যমে একজন ‘বুড়ি’ নির্বাচিত করা হয়। তবে বাকি খেলায় মোড় হওয়াটা দুর্ভাগ্যের হলেও এই খেলায় কিন্তু বুড়ি হওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার! তার কারণ বুড়ির লাঠিটাই এই খেলার সবথেকে আকর্ষণীয় সামগ্রী। অন্য খেলা যেমন ‘হেলু দেওয়া’ খেলায়, মোড় এড়ানোর জন্য মোড়ধারীর ছোঁয়া বাঁচাতে ছুটে পালাতে হয়। এ ক্ষেত্রে লাঠি হাতানোর জন্য বাকি খেলোয়াড়দের সবার প্রথম ছুটতে হয় বুড়িকে ছোঁওয়ার জন্যই।
প্রথমে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নেওয়া হয় কত সংখ্যক লাঠি হাতানো হলে এক ‘গেম’ হবে। এর পর বুড়িকে বাদ দিয়ে বাকি খেলোয়াড়েরা হাত ধরাধরি করে বৃত্তাকারে ঘুরবে। ঠিক ওই সময় লাঠি ঠুকতে ঠুকতে গঙ্গাস্নানে যাবে বুড়ি। তাকে দেখে দু’পক্ষের মধ্যে উপরে বর্ণিত ছড়া কেটে কথোপকথন চলবে। এর পর একটি হাত খুলে বুড়িকে |
বুড়ির লাঠি খেলার ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি। |
বৃত্তাকার ওই কাল্পনিক জলাশয়ে ঢুকিয়ে নেবে খেলোয়াড়েরা। কিন্তু কিছুতেই আর হাত খুলে বাইরে যেতে দেবে না। তখন বুড়ি একে একে খেলোয়াড়দের দু’হাতের বাঁধনে ঝাঁকুনি দিয়ে ‘এই বাঁধটি কাটব’ বলে পাকে পাকে ঘুরবে। আর খেলোয়াড়েরা তখন নিজেদের হাতের বাঁধন আরও শক্ত করে কখনও ‘শিল ছুড়ে মারব’ কখনও ‘নোড়া ছুড়ে মারব’ বলে জবাব দেয়। এই বাদানুবাদের মধ্যে কোনও খেলোয়াড়ের অন্যমনস্কতার সুযোগ পেলেই হাতের বাঁধন ছাড়িয়ে লাঠি নিয়ে দূরে ছুটে পালাবে বুড়ি। আর বাকি খেলোয়াড়েরা তখন নিজেদের হাতের বাঁধন ছেড়ে বুড়ির পিছনে দৌড়বে। যে সবার আগে বুড়িকে ছুঁতে পারবে সেই পাবে লাঠির দখল। পাশাপাশি সেই হবে নতুন বুড়ি। তবে কখনও কখনও লাঠি হাতানোর জন্য সবার আগে দৌড়নোর সুযোগ নিতে ইচ্ছাকৃত ভাবে হাতের বাঁধন আলগা করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কোনও কোনও খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে। ওই কারচুপি ধরা পড়লে সেই ক্ষেত্রে অভিযুক্ত খেলোয়াড়কে খেলা থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়। একটি গেমে যে খেলোয়াড় সব থেকে বেশি লাঠি হাতাতে পারে সে-ই হয় বিজয়ী।
নানুরের দাসকলগ্রামের অভিজিৎ সিংহ কিংবা ময়ূরেশ্বরের মহুলাগ্রামের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিষ্ণু লেট, দু’জনেরই আক্ষেপ, “ছোটবেলায় আমরাও বুড়ির লাঠি খেলেছি। আজকের প্রজন্মে এমন খেলার চল কোথায়! এমন করেই কত খেলাই তো হারিয়ে গেল।” |
(হারিয়ে যাওয়া খেলা। পর্ব ৩১) |