বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিগত সংগ্রহের বই-এর পাহাড় রয়েছে তাঁর বাড়িতে। বিদ্যাসাগরের বংশধররা ওই বিপুল বই বিক্রি করে দিতে চান। কথাটি পৌঁছল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অগ্রদূত রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর কাছে। কান্দির ভূমিপুত্র আবার লালগোলার দানবীর ও বিদ্যুৎসাহী রাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ রায়ের আত্মীয়ও। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান ৭৫ বছরের সৌমেন্দ্রনাথ গুপ্ত বলেন, “রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর কথায় বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিগত সংগ্রহের বইগুলি ১০ হাজার টাকায় কিনে নিলেন লালগোলার রাজা যোগেন্দ্রনারায়ণ। ওই বই-এর একটি অংশ তিনি দান করলেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে। বাকি বই দিয়ে সমৃদ্ধ হল ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত লালগোলা মহেশ নারায়ণ রায় পাবলিক লাইব্রেরি।” সংক্ষেপে লালগোলা এম এন লাইব্রেরি। আজ বুধবার সন্ধ্যায় দ্বিতল ওই লাইব্ররি ভবন আলোকোজ্জ্বল করার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শতবর্ষপূতি অনুষ্ঠান। আগামী শুক্রবার আলোচনা সভার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হবে। আলোচনা করবেন লালবাগ ও লালগোলা কলেজের দুই অধ্যক্ষ যথাক্রমে প্রভাস সামন্ত ও জগন্নাথ ভট্টাচার্য, স্থানীয় পূর্বতন সাংসদ জয়নাল আবেদিন ও মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক।
বিদ্যাসাগরের বই কিনে ওই লাইব্রেরি সমৃদ্ধ হলেও শুরুর কাহিনিটি একটু অন্য রকম। গল্পকার নীহারুল ইসলামের বাড়ি লালগোলায়। তিনি বলেন, “একটি নয়, লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার দুটি কাহিনি রয়েছে। নিঃসন্তান রাজা মহেশনারায়ণ তাঁর দত্তক পুত্রের শিক্ষাদীক্ষার জন্য দেশ-বিদেশের বিস্তর বই কিনেছিলেন। তা থেকেই শুরু হয়ে যায় রাজবাড়ির পাঠাগার। দ্বিতীয় লোককথাটি হল, লালগোলা-রাজের দাতব্য চিকিৎসালয়ের চিকিৎসকদের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সুশিক্ষিত করতে অনেক বই কেনা হয়েছিল। তা থেকেই শুরু ওই পাঠাগারের।” বর্তমান গ্রন্থাগারিক দীপক মিশ্র বলেন, “এখানে এখনও ১৬ হাজার বই রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল দান্তের লেখা ১৮৭২ সালে প্রকাশিত দ্যা ডিভাইন কমেডি, ১৯০২ সালে প্রকাশিত মেজর জে এইচ টি ওয়ালসের লেখা ‘এ হিস্ট্রি অব মুর্শিদাবাদ’, ১৯০৭ সালে প্রকাশিত এ সি ক্যাম্পবেলের লেখা ‘গ্লিমসেস অব বেঙ্গল’।” |