ইংল্যান্ডকে অভিনন্দন। ওরা একটা দুর্দান্ত কাজ করে দেখাল। চার টেস্টের সিরিজে অ্যালিস্টার কুকের টিমকে অনেক ভাল দেখিয়েছে। ২-১-এ সিরিজ জয়েরও ওরা যোগ্য। সেই ১৯৮৪-৮৫-র পর আবার ভারতে টেস্ট সিরিজ জিতল ইংরেজরা। এই গর্বের জয়ের পর ইংল্যান্ড যেমন উৎসবে ডুববে, তেমনই ভারতকে এখন কয়েকটা জিনিস শিখতে হবে। জানতে হবে। মেনে নিতে হবে।
নাগপুরের উইকেট দেখে আমি হতাশ হয়েছি। ওই টেস্ট জেতাটা ভারতের দরকার ছিল। সিরিজে সমতা ফেরাতে হত। উইকেট আমি আরও জীবন্ত দেখব বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখলাম, ম্যাচ যত এগোচ্ছে, উইকেট পাটা হয়ে যাচ্ছে। সহজ হয়ে পড়ছে ব্যাট করাটা। ভুল না করলে ব্যাটসম্যানদের নাগপুরে আউট করা প্রায় অসম্ভব ছিল। আর গোটা সিরিজেই ইংল্যান্ড যা বেশির ভাগ সময় করে দেখিয়েছে, নাগপুরেও সেটাই করল। ভুলভ্রান্তি করলই না বলতে গেলে।
শেষ টেস্টের চতুর্থ দিনে ভারতীয়দের মনোভাবও আবার ঠিক ততটাই হতাশাজনক। টেস্টটা কিন্তু তখনও সমানে-সমানে চলছিল। আমি আশা করছিলাম, এমএস ওই ২৯৭-৮-এই ডিক্লেয়ার করে দেবে। তৃতীয় দিনের শেষে যা স্কোর ছিল। সেটা করলে ভারত ৩৩ রানে পিছিয়ে থাকত ঠিকই। কিন্তু তখন যা পরিস্থিতি ছিল, তাতে ইংল্যান্ডের হারানোর কিছু ছিল না। বরং ভারতের অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। বিশেষ করে দেশের মাটিতে গর্বের রেকর্ড রক্ষার ব্যাপারটা যখন আছে। এমএস যদি ওই স্কোরে ডিক্লেয়ার করে দিত, ইংল্যান্ড চাপে পড়ত নিঃসন্দেহে। অনেক বেশি ওভার টিকে থাকতে হত ওদের ব্যাটসম্যানদের। পাশাপাশি ভারতীয় বোলারদের কাছেও একটা বার্তা পৌঁছত যে, ওদের উপর অধিনায়কের আস্থা আছে। উল্টে দেখলাম, ভারত ব্যাট করল পনেরো ওভার, তুলল ২৯ রান। দেখে মনে হল, ভারতের টেস্টটা জেতার মরিয়া খিদেটাই নেই।
ডিক্লেয়ার করার পরও ভেবেছিলাম, এমএস ফিল্ডিংয়ে আরও বেশি ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে। ফিল্ড প্লেসিংয়ের কথা বলছি। রান ওঠাটা ফ্যাক্টর ছিল ঠিকই, কিন্তু ভারতীয়দের কাছেও তো মাত্র একটা রাস্তা পড়ে ছিল টেস্ট জেতার। যে কোনও উপায়ে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইংল্যান্ডকে আউট করতে হবে। যার জন্য দরকার, আক্রমণাত্মক ফিল্ড প্লেসিং। মাঝে-মধ্যে বাউন্ডারি হলে হবে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, সেটাও দেখলাম না।
এই টেস্ট জিততে হলে ভারতের দরকার ছিল তাড়াতাড়ি রান তোলা। এবং একই সঙ্গে বড় রান তোলা। কিন্তু অ্যান্ডারসন এমন একটা বলে বীরুকে আউট করল, যেটা খেলা প্রায় অসম্ভব। গৌতম আর সচিনকে ফেরাল রিভার্স সুইংয়ের অবিশ্বাস্য কিছু নমুনা দেখিয়ে। আরও একটা ব্যাটিং-বিপর্যয়ের আশঙ্কা যখন তৈরি হচ্ছে, তখনই বিরাট আর এমএস দুর্দান্ত দু’টো ইনিংস খেলে গেল। বিরাট যে ভাবে দায়িত্ব নিয়েছে, সেটা দেখে আমি অসম্ভব খুশি। বিরাট এবং এমএস দু’জনেই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। পিটারসেন যেমন। কিন্তু ওদেরও বুঝেশুনে খেলতে হয়েছে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিরাট এখন দুর্দান্ত খেলছে। টেস্ট ম্যাচ ব্যাটিংয়ের সঙ্গেও এ বার ওকে মানিয়ে নিতে দেখে স্বস্তি পাচ্ছি। বিশেষ করে, ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলে অনুভূতিটা আরও হবে। বিরাট দেখাল, ওর মধ্যে একটা ইস্পাত-কঠিন মানসিকতা আছে। টেম্পারামেন্ট আছে। যা ওকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি মুগ্ধ হয়েছি, প্রথম ইনিংসে পিটারসেনের ব্যাটিং দেখে। ঠিক একই রকম আমাকে মুগ্ধ করেছে দ্বিতীয় ইনিংসে বেল আর ট্রটের ইনিংস। কলকাতায় কুকের সেঞ্চুরি যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, মুম্বইয়ে পিটারসেনেরটা, নাগপুরে ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ট্রটের সেঞ্চুরি। এই সিরিজে ভারতকে অনেক জায়গাতেই পিছনে ফেলেছে ইংল্যান্ড। আগে ব্যাট করে ওরা দেখিয়েছে উপমহাদেশের পরিবেশ সম্পর্কে ওরা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। কুকের সিদ্ধান্তটা ওর বিপক্ষে গেল। কিন্তু যতটুকু সময় ও ক্রিজে ছিল বুঝিয়ে দিয়েছে, এই পিচে কিছু করতে গেলে ভাল খাটাখাটনির প্রয়োজন আছে।
পিটারসেন পরে যেটা দেখাল। স্বাভাবিক দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ববোধ মিশিয়ে, ম্যাচ এবং পিচের চরিত্র বুঝে একটা দুর্দান্ত ইনিংস খেলল পিটারসেন। জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নামা জো রুট নজর কেড়েছে। লোয়ার অর্ডারে সোয়ানও গুরুত্বপূর্ণ কিছু রান করে তিনশোর গণ্ডি পার করে দিয়েছে। যা টপকে গেলে মনস্তাত্ত্বিক সুবিধাটা পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা হল, ম্যাচে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা অনেকক্ষণ ধরে ক্রিজে পড়ে থেকেছে। আর পিচের চরিত্র ধরলে, সব সময়ই একটা ফ্যাক্টর ছিল। |