সিরিজটা যে ভাবে শেষ হল তাতে ভারত নিশ্চয়ই হতাশ হবে। গত পনেরো-ষোলো মাসে ভারতের টেস্ট পারফরম্যান্স নিয়ে জাতীয় নির্বাচক এবং ক্রিকেটাররা নিশ্চয়ই চিন্তিত। ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায় হার তো ছিলই। এখন দেশের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছে হারের পর ভারতীয় টেস্ট দল নিয়ে নানা ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ব্যাপারগুলো কিন্তু খতিয়ে দেখতে হবে। এই সিরিজে সব বিভাগে ভারতকে টেক্কা দিয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ড। যেটা খুবই বিরল।
ভারতকে এগিয়ে যেতে হলে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় জিনিস হল এটা স্বীকার করা যে, গত ষোলো মাসে ওদের পারফরম্যান্স খুব সাধারণ ছিল। দলের প্রত্যেককে এখন ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে এখান থেকে কী ভাবে উন্নতি করা যায়। ক্রিকেট একটা টিম স্পোর্ট। তাই ম্যাচ জিততে গেলে টিমের সবার পারফরম্যান্সই গুরুত্বপূর্ণ। উপমহাদেশের পরিবেশে যে স্পিন ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি, সেই স্পিনই ওদের খুব বাজে ভাবে ডুবিয়ে দিয়েছে। টেকনিক্যাল দিক থেকে বলছি, স্লো-ক্যামেরায় বলের ঘোরাটা দেখলেই বুঝতে পারবেন পাঁচ দিনের ব্যবহৃত পিচেও ভারতীয় স্পিনাররা কেন বল ঘোরাতে পারেনি। বল টার্ন করানোর জন্য সব সময় ফুটমার্ক দরকার হয় না। অশ্বিন আর প্রজ্ঞান দু’জনকেই এটা দেখতে হবে। ওদের দু’জনেরই বয়স কম, এখনও শিখছে। কিন্তু ওদের খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি করতে হবে। ওদের মনে রাখতে হবে, কেরিয়ারের মেয়াদ বাড়াতে গেলে কিন্তু ভাল সারফেসে উইকেট নেওয়া দরকার। নির্বাচকদের এটাও মনে রাখা দরকার যে, হরভজনকে একেবারে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ভারতীয় ক্রিকেটকে ওর অনেক কিছু দেওয়ার ক্ষমতা আছে।
ভারতীয় ব্যাটিং ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি। ভাল বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ওদের আরও লড়াই দেখানো দরকার। তবে চাপের মুখে ধোনি আর বিরাটের ব্যাটিং দেখে খুব ভাল লাগল। কঠিন পরিস্থিতিতে ধোনির এ রকম নাছোড় মনোভাব দেখানো ওর তরুণ টিমের জন্য খুব জরুরি। ধোনির অধিনায়কত্বের রেকর্ড যে গত কয়েক মাসে নেমে চলেছে, সেটা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। নাগপুরে চতুর্থ দিনে ওর অধিনায়কত্ব সত্যিই চিন্তার বিষয়। যখন ভারতকে ম্যাচে ফেরানোর দরকার ছিল, তখন ও লড়তে চায়নি। ও বিশ্বাস করেছিল পিচে কিছু নেই। ব্যাপারটা হজম করা সত্যিই বেশ কঠিন।
আগেও ভারতের মাঠে টেস্ট ম্যাচ জেতার মতো অবস্থায় গিয়েছে ইংল্যান্ড। কিন্তু এ বার ওদের মধ্যে একটা নাছোড় মনোভাব দেখলাম। যার সঙ্গে ছিল সিরিজ জেতার খিদে। আগে অনেক বার ভারতে খেলতে এসে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ইংল্যান্ড লড়তে পারেনি। যে পরিস্থিতিতে সিরিজ যে কোনও দিকে যেতে পারত, সে সময় জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েনি। কিন্তু এই দলটা একেবারে অন্য রকম। যার জন্য বেশির ভাগ কৃতিত্ব দেওয়া উচিত অ্যালিস্টার কুক আর ওদের সাপোর্ট স্টাফকে। সিরিজের জন্য ওরা দারুণ প্রস্তুতি নিয়েছিল। কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াইয়ের খিদে দেখিয়েছে ইংল্যান্ড। আর সঠিক মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভয়ডরহীন মনোভাবও। যার আদর্শ উদাহরণ নাগপুর টেস্টে দ্বিতীয় দিন সকালে জো রুট আর সোয়ানের পারফরম্যান্স। ম্যাচের প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল ওটা। অভিষেক ঘটানো রুটকে নিয়ে কী অসাধারণ ভাবে ব্যাট করল সোয়ান! দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ইংল্যান্ড ৯৪-৩ ছিল আর ভারত সহজেই ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নিতে পারত, তখন ট্রট আর বেলের পারফরম্যান্সও দেখিয়ে দেয়, ওদের গোটা দলের মানসিকতা কী রকম লড়াকু ছিল। যে কোনও ভাল দলে বিভিন্ন প্লেয়ার বিভিন্ন সময় দলকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গত কয়েক বছরে ঠিক এটাই করে আসছে ইংল্যান্ড। |