পঁচিশ বছর আগের দুই ইডেন-অধিনায়ক। দু’জনেই ধুরন্ধর। চরম ডাকাবুকো। ওয়াঘার এ-পারের এক জন। অন্য জন, ও-পারের।
এঁরাকপিল দেব নিখাঞ্জ এবং ইমরান খান। ’৮৭-র ইডেনের প্রথম ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দু’দেশের দুই অধিনায়ক।
এবং সিকি-শতাব্দী পর শীতের ইডেনে আবার আসতে চলেছেন তাঁরা। নতুন বছরের শুরুতে ইডেনে আরও এক ভারত-পাক ম্যাচে। সিএবি-র ভারত-পাক ম্যাচের ‘সিলভার জুবিলি’-র প্রেক্ষাপটে। ’৮৭-র ইডেনে কপিল বনাম ইমরান যুদ্ধ আজও তো ভুলতে পারেননি কেউ। শ্রীকান্তের বেধড়ক মার দেখে ধুরন্ধর ইমরানের ওভার রেট কমিয়ে দেওয়া, সেলিম মালিকের ‘পুনর্জন্ম’, ভারতের জেতা ম্যাচ হেরে বসাস্মৃতির সরণি ধরে হাঁটলে এখনও ঘটনাগুলো পরপর মনে পড়বে শহরবাসীর। আর নতুন যুদ্ধের উত্তপ্ত মেজাজের মধ্যে সিএবি চাইছে সেই পুরনো আবহকেও ফিরিয়ে আনতে। যাতে লোকে মনে রাখে ইডেনে ভারত-পাক ম্যাচের ‘সিলভার জুবিলি।’
কপিল-ইমরান দু’জনকেই ইতিমধ্যে আমন্ত্রণ পাঠিয়ে দিয়েছে সিএবি। কপিলের সম্মতি পাওয়াও শেষ। সিএবিকে ’৮৩-র বিশ্বজয়ী অধিনায়ক জানিয়ে দিয়েছেন, আসছেন। বাকি ছিলেন শুধু ইমরান। আসন্ন ভারত-পাক সিরিজে ওয়াঘার ও পার থেকে যে দশ প্রাক্তন ক্রিকেটারকে অতিথি হিসেবে পাঠানো হচ্ছে, তার মধ্যে এক সময় ইমরানের নামও ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কাজকর্মে এতটাই ব্যস্ত যে, ‘কিং খান’ বলে দিয়েছিলেন মিসবা-উল-হকের টিমের সঙ্গে ভারত সফরে আসা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু সিএবি তাঁকে শুধুমাত্র ইডেন ম্যাচের জন্য আনতে চাইছে। দিন দশেক আগে সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে একপ্রস্থ কথাও হয় ইমরানের। “উনি একদিনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন আসার। সম্ভাবনাও আছে ভাল রকম। আর কপিল আসছেন,” বলে দিচ্ছেন সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। |
‘সিলভার জুবিলি’-র জাঁকজমকের এখানেই শেষ নয়। এক বিশেষ স্বর্ণমুদ্রার কথা ভাবা হচ্ছে। দু’দেশের ক্রিকেট-বন্ধনকে তুলে ধরতে। তবে একমাত্র দু’দেশের প্রেসিডেন্টকে ইডেনে পাওয়া গেলে এই স্বর্ণমুদ্রার উদ্বোধন হবে। ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায় আসছেন। কিন্তু পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারিকে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ থাকছে। পাক সরকারের তরফ থেকে এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানানো হয়নি। তবে সেটা যদি শেষ পর্যন্ত না-ও হয়, বৈচিত্রের অভাব থাকছে না। কপিল-ইমরানকে নিয়ে বিশেষ এক অনুষ্ঠানের কথা ভাবা হচ্ছে।
আর দু’জনেই শেষ পর্যন্ত এলে দেখতে পাবেন, ইডেনে ভারত-পাক ম্যাচের টিকিটকে ঘিরে উন্মাদনার ধরন-ধারণে সেই আটের দশকের মেজাজ। কী রকম? আগামী ৩ জানুয়ারির ইডেনের ভারত-পাক ম্যাচে সাধারণ দর্শকদের জন্য কাউন্টার থেকে কোনও টিকিট ছাড়া হবে না! বরং ফিরছে আট বা নয়ের দশকের চেনা টিকিট-বিতরণ পদ্ধতি। কাউন্টার থেকে সরাসরি টিকিট বিক্রি নয়, ছাড়া হবে ‘কুপন’। ওই ‘কুপন’ যাঁরা কিনবেন, তাঁদের ছাড়পত্র মিলবে লটারিতে যোগ দেওয়ার। লটারির মাধ্যমে টিকিট দেওয়া হবে সাধারণ দর্শকদের। অর্থাৎ, যাঁরা ভাগ্যবান, তাঁরাই হাতে ইডেন ম্যাচের টিকিট পাবেন। যাঁরা নন, পাবেন না।কেন এই অবস্থা? সিএবি-র বক্তব্য, ইডেনের দর্শকাসন কমে যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি। ইডেনের মোট দর্শকাসন এখন মোটামুটি ছেষট্টি হাজার। যার মধ্যে ১২১-টি অনুমোদিত সংস্থা, আজীবন সদস্য এবং বাকিদের দিতেই বেরিয়ে যাবে হাজার ষাট-বাষট্টি টিকিট। পাক সমর্থকদের জন্য বরাদ্দ সাড়ে পাঁচশো টিকিট এ দিনই পাঠিয়ে যেওয়া হল। অতএব, সাধারণের জন্য খুব বেশি হলে থাকবে হাজার তিনেক। কর্তারা ভয় পাচ্ছেন, কাউন্টার থেকে টিকিট ছাড়তে গেলে গণ্ডগোল হতে পারে। দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। অতএব, ‘পুরনো-পন্থী’ হওয়াই ভাল! |