সোল্লাসে চড়ুইভাতি, গড়চুমুকে শঙ্কিত হরিণ
নেকক্ষণ থেকেই নাতিকে হরিণ দেখাবার চেষ্টা করছিলেন হাওড়ার বড়গাছিয়ার সমর কর। কিন্তু হরিণ কোথায়? পাশেই চড়ুইভাতি করতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে আনা ‘শব্দদানবে’র অত্যাচারে হরিণের দল তখন প্রাণভয়ে বাবলা গাছের ছায়ায় দল বেঁধে জটলা করছে। ঘটনাটি হাওড়ার শ্যামপুরের গড়চুমুক মৃগদাবের।
দামোদরের ধারে অবস্থিত এই মৃগদাবটির একটি অংশে রয়েছে হরিণ প্রকল্পটি। এটি ‘সেন্ট্রাল জু অথরিটি’-র তরফ থেকে মিনি চিড়িয়াখানার মর্যাদা পেয়েছে। হরিণ-প্রকল্পটি মোটা তারের জাল দিয়ে ঘেরা। মৃগদাবের অন্য অংশে রয়েছে ফাঁকা জায়গা। এখানেই হয় চড়ুইভাতি। ফি বছর শীতের সময় হাজার হাজার মানুষ ছুটির দিনগুলিতে দল বেঁধে এখানে চড়ুইভাতি করতে আসেন। প্রায় প্রতিটি দলের সঙ্গেই থাকে মিউজিক বক্স। যার আওয়াজেই হরিণদের প্রাণ বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে!
আমার হরিণ চাই...। সন্ধানী পর্যটক। ছবি: সুব্রত জানা।
জোরে বক্স বাজানো এবং হইচই করা যে হরিণগুলির কাছে অস্বস্তির সে কথা স্বীকার করে জেলা বনাধিকারিক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “বাড়াবাড়ি হলে আমাদের দফতরের কর্মীরা মাঝে মাঝে তা নিয়ন্ত্রণ করেন। চড়ুইভাতি করতে আসা মানুষের সচেতনার বৃদ্ধি দরকার।” জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” কিন্তু সচেতনতা কী সত্যি নেই, নাকি সব জেনেই শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যেই তারস্বরে বক্স বাজান গড়চুমুকে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা? বক্স চালিয়ে আনন্দ করছিল বাগনান থেকে আসা একটি দল। বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন করার পর সঙ্গে সঙ্গেই বক্সের আওয়াজ প্রায় অর্ধেক করে দিলেন তাঁরা!
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মৃগদাবের পুরো জমিটি জেলা পরিষদের। তবে হরিণ-প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে বন দফতর। এখানে রয়েছে ৭৮টি হরিণ, ২টি শজারু এবং চারটি ময়ূর। এ ছাড়াও রয়েছে ৫৭ প্রজাতির পাখি। পশুদের খাঁচার অধিকাংশই ভেঙে গিয়েছিল। কিছু দিন আগেই জেলা পরিষদ এবং বন দফতরের যৌথ উদ্যোগে সেগুলি নতুন করে মেরামত করা হয়েছে। শজারুর জন্য তৈরি হয়েছে নতুন খাঁচা। বনকর্মীদের রাতে থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে আবাসন। খাঁচার ধার বরাবর হয়েছে বাঁধানো রাস্তা। জেলা বন দফতর সূত্রে খবর, ভবিষ্যতে এটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। দফতরের এক কর্তা জানান, সম্প্রসারণ পরিকল্পনাটি পাঠানো হয়েছে ‘সেন্ট্রাল জু অথরিটি’র কাছে। এটি অনুমোদিত হলে প্রকল্পের পরিধি আরও বাড়ানো হবে। অন্য দিকে এখানে সার্কিট ট্যুরিজম কেন্দ্র করার জন্যও কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতরের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রের দাবি।
গড়চুমুকে পর্যটকদের আসার অন্যতম আকর্ষণই হল হরিণ প্রকল্প। হরিণ দেখতে আসা স্কুল শিক্ষক বিনয় মাল বললেন, “বন দফতর এবং জেলা পরিষদের উচিত কম ডেসিবেলে যাতে বক্স বাজানো হয় তা লিখিতভাবে নির্দেশিকা আকারে জানিয়ে দেওয়া। তা হলে হয়ত এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।” সরকারি নির্দেশ আসা অবধি হরিণগুলি বাঁচবে তো?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.