রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্নার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা শুরু করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের সম্মানহানি করায় কেন তাঁকে জেলে পাঠানো হবে না, মঙ্গলবার এজলাসে হাজির থাকা বেচারামবাবুকে তা হলফনামা দিয়ে জানাতে বলল বিচারপতি প্রতাপকুমার রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। বড়দিনের অবকাশের পরে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে। তাৎপর্যপূর্ণ
ভাবে এ দিনই সিঙ্গুরে দাঁড়িয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “অনেক সময়েই দেখা যাচ্ছে, আদালত নিজেদের লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে শাসন করতে চাইছে। রাজ্য শাসনের জন্য তো সরকার আছে। তারাই শাসন করবে। আদালত নয়।” প্রশ্ন উঠেছে, এর পরে সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধেও কি আদালত অবমাননার মামলা শুরু হবে? |
ক’দিন আগে সিঙ্গুরে এক জনসভায় বেচারামবাবু বলেন, টাটা আর সিপিএম তাদের অনুগত বিচারককে দিয়ে রাজ্য সরকারকে (সিঙ্গুর মামলায়) হারিয়ে দিয়েছে। এর জেরে হাইকোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়। বেচারামবাবু যে হেতু নির্দিষ্ট ভাবে হাইকোর্টের এক জন বিচারপতির রায় নিয়ে বলেছিলেন, তাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিচারপতি রায়ের বেঞ্চ আদালত অবমাননার ফৌজদারি মামলা শুরু করে।
এ দিনের বিচার্য-তালিকায় লেখা ছিল, বেচারামের মামলাটি উঠবে বেলা দু’টোয়। কিন্তু এ দিন সকাল সাড়ে দশটায় বিচারপতি রায় এবং বিচারপতি সুবল বৈদ্যের ডিভিশন বেঞ্চে হাজির হন বেচারামবাবু। দেখা যায়, হাইকোর্টের পাঠানো পরোয়ানায় তাঁকে সাড়ে দশটাতেই হাজির হতে বলা হয়েছে। বিচারপতি রায় বেচারামবাবুকে ডেকে পাঠান। হাত জোড় করে দাঁড়ানো মন্ত্রীকে বিচারপতি বলেন, “দেখা যাচ্ছে, আপনি খুবই আইন মেনে চলেন।” হলফনামা জমা দেওয়ার কথা বলে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ছ’সপ্তাহ পরে শুনানি। তবে মামলা চলাকালীন মন্ত্রীকে ব্যক্তিগত হাজিরার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
এ দিকে বেচারামের মন্তব্য নিয়ে আদালতের ‘তৎপরতার’ সমালোচনা করেছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। বেচারামবাবু চাষিদের হয়ে একটা কথা বললেন, আর তাঁকে আদালতে যেতে হল! অথচ সুহৃদ দত্ত-দেবু মালিকদের (তাপসী মালিককে খুনে অভিযুক্ত দুই সিপিএম নেতা-কর্মী) বিষয়টাও তো আদালতের দেখা উচিত!” সুব্রতবাবুর মন্তব্য, “বেচার (বেচারাম) মতো এ সব বলার জন্য হয়তো আমাকেও আদালতে ডাকবে!” নাম না করেও টাটাদের প্রতিও কটাক্ষ করেন তিনি। একই সঙ্গে বলেন, “গুড মানি গুড ল, গুড মানি গুড ব্যারিস্টার, গুড মানি গুড জাস্টিস!” |