সম্পাদকীয় ২...
জনাকীর্ণ রাজধানীতেই!
যে কোনও উন্নত দেশের সঙ্গে ভারতের একটি প্রধান তফাত: নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ এখানে বৃহৎ সংবাদের মর্যাদাই পায় না, হেডলাইনের সম্মান অর্জন করে না, সংবাদ-জগতের প্রান্তে নেহাত অনুল্লেখযোগ্য ভাবে ঝুলিতে থাকে, এবং কয়েক দিনের মধ্যে আইন-বিচার-স্মৃতি সর্ব ক্ষেত্র হইতে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হইয়া যায়। নারীধর্ষণ কিংবা নারীপাচার দেশের নানা কোণে প্রতি দিন নিশ্চিন্তে সংঘটিত হইতেছে, এবং অতিদ্রুত সম্মেলক চেতনাভুবন হইতে বিদায় লইতেছে। অনুন্নত, শিক্ষারহিত, দরিদ্র দেশের সম্ভবত ইহাই নিয়তি। কিন্তু, না। ভারতবর্ষের একটি অতিরিক্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্যও রহিয়াছে, যাহার জন্য অনেক অনুন্নত দেশ হইতেও ভারতকে আলাদা করিয়া দেখা সম্ভব। প্রত্যন্ত বা দরিদ্র অঞ্চল দূরস্থান, এ দেশের আলোকশোভিত ঐশ্বর্যলাঞ্ছিত খাস রাজধানীর বুকেই প্রত্যহ যে অসীম স্পর্ধায় এই পরিমাণ ধর্ষণ ঘটিতে পারে, তাহা অন্যান্য বহু অনুন্নত দেশ ভাবিতে পারিবে না। প্রতিটি ভারতবাসীর মাথা লজ্জায় হেঁট করিয়া দিতে পারে ধর্ষণ-রাজধানী দিল্লি। সর্ব রকম প্রশাসনিক সুযোগসুবিধার কেন্দ্রে থাকিয়াও নারীঘটিত অপরাধের সংখ্যা বা মাত্রা সেখানে বৎসরের পর বৎসর একই উচ্চতায় থাকিতে পারে, প্রতি ছয় ঘণ্টায় একটি ধর্ষণকাণ্ড অনুষ্ঠিত হইতে পারে। দেশের প্রশাসনের অকর্মণ্যতা কত দূর, সাধারণ মানুষ কত অসহায়, বিপন্ন দিনাতিপাত করিয়া থাকেন, তাহার সর্বোত্তম উদাহরণ, দিল্লি। দিল্লিই যদি এমন হয়, তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন হইতে পারে অনুমানযোগ্য। সোমবার রাজধানীর বুকের উপর ভরসন্ধ্যায় জনাকীর্ণ অঞ্চলে চলন্ত বাসের মধ্যে যে মর্মান্তিক ধর্ষণকাণ্ড ঘটিয়া গেল, প্রত্যহের ধর্ষণ-সংবাদগুলি হইতে এই জন্যই তাহা পৃথক, গুরুতর এবং ভয়াবহ।
অন্য এক কারণেও এই ঘটনাটি পৃথক ভাবে লক্ষণীয়। যে বাসটির মধ্যে তেইশ বৎসরের যুবতী গণধর্ষণের ফলে মৃত্যুমুখে প্রেরিত হইলেন, তাহা রঙিন কাচ ও ভারী পর্দা আচ্ছাদিত চার্টার্ড বাস হইলেও দিল্লির পরিবহণ ব্যবস্থার ক্ষমতার আঁচলেই তাহার টিকিটি বাঁধা। অনুমান, বাসটির কর্মী ও তাহাদের বান্ধবরাই এই নৃশংস কাণ্ডের কুশীলব। অর্থাৎ ইহা বৃহৎ দেশের বিস্তীর্ণ প্রত্যন্ত সমাজের অজানা কোণে ঘটে নাই, রাজধানীর পরিবহণ পরিষেবার অন্দরেই সংঘটিত হইয়াছে। প্রশাসনের পক্ষে তদন্ত অত্যন্ত সহজ হওয়া উচিত, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার-সাপেক্ষে কঠোরতম শাস্তির বন্দোবস্ত করা উচিত। নাগরিক পরিষেবার উপরও যদি নাগরিক ভরসা রাখিতে না পারেন, তবে প্রশাসন রহিয়াছে কেন? ভারতের মতো দেশে বৃহত্তর সমাজকে শিক্ষিত করা, শৃঙ্খলাবোধে উদ্বুদ্ধ করা, নৈতিকতায় সমৃদ্ধ করা প্রশাসনের পক্ষে কঠিন কাজ হইলেও হইতে পারে, কিন্তু নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মৌলিকতম কাজ হইতে তো কোনও যুক্তিতেই ছাড় মিলিতে পারে না! এই অপরাধও যদি বিনা বাধায় বিনা বিচারে বিনা প্রতিকারে বিস্মৃতির আঁধারে তলাইয়া যায়, তবে সভ্য দেশের তালিকা হইতে ভারতের নাম এখনই কাটা যাওয়া দরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.