|
|
|
|
ক্ষোভে উত্তাল সংসদ, ফাঁসির দাবি ধর্ষণে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দল-মতের বেড়া ছিল না। রাজধানীতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের ঘটনায় ক্ষিপ্ত, ক্ষুব্ধ সাংসদরা আজ মুখর হলেন ঐক্যবদ্ধ ভাবে। ঘটনার তীব্র নিন্দার পাশাপাশি আইন পাল্টে ধর্ষণের জন্য ফাঁসির বিধান রাখার দাবি জানালেন লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ-সহ অনেক সাংসদ। আম-আদমির আতঙ্কের প্রতিফলন শোনা গেল সাংসদদের উচ্চারণেও, দিল্লি কি আদৌও নিরাপদ মহিলাদের জন্য?
রবিবার রাতে বাসে করে দিল্লির মুনিরকা থেকে দ্বারকা যাওয়ার পথে গণধর্ষণের শিকার হন দেরাদুন থেকে ডাক্তারি পড়তে আসা বছর তেইশের এক ছাত্রী। চলন্ত বাসে তাঁর উপরে অকথ্য নির্যাতন চালায় ছয় যুবক। ওই তরুণীর সঙ্গী বন্ধুকেও রড দিয়ে পেটায় অভিযুক্তরা। ঘটনার পর সিসিটিভির ফুটেজ দেখে প্রথমে বাসের চালক ও তার পর আরও তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু দিনের পর দিন রাজধানীতে যে ভাবে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলায় আজ দিল্লি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন বিভিন্ন দলের সাংসদ। কিন্তু দিল্লির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ফলে আক্রমণের হাত থেকে নিস্তার পাননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। খোদ কংগ্রেস সাংসদ রেণুকা চৌধুরি জানান, দিল্লিতে মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে সব মহিলা সাংসদকে নিয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে নিরাপত্তার আর্জি জানাতে চান। |
|
সুষমার প্রতিবাদ, জয়ার কান্না। ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে সংসদে। ছবি: পিটিআই |
রাজধানীতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে বহু বারই প্রশ্ন উঠেছে এর আগে। কিন্তু এ বারের ধর্ষণ কাণ্ডের পরে যে ভাবে সব দলের সাংসদরা মুখর হয়েছেন তাতে রীতিমতো অস্বস্তিতে শীলা দীক্ষিত সরকার তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিচলিত কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী চান, রবিবার রাতের ঘটনায় কড়া শাস্তি হোক। তিনি এ দিন সফদরজঙ্গ হাসপাতালে গিয়ে ধর্ষিতার সঙ্গে দেখা করেন। চিঠি লেখেন শীলা দীক্ষিত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দেকে। কথাও বলেন তাঁদের সঙ্গে। জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধানের সঙ্গেও কথা হয় তাঁর।
আজ রাজ্যসভার অধিবেশন শুরুর আগেই বিজেপি সাংসদরা প্রশ্নোত্তর পর্ব বন্ধ রেখে ধর্ষণের ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা চেয়ে নোটিস দেন। বিজেপি নেতা বেঙ্কাইয়া নায়ডু গোটা ঘটনাটির দায় শিন্দেকে নেওয়ার দাবি জানিয়ে সরব হন। স্পিকার তাতে রাজি না হওয়ায় দফায় দফায় দু’বার রাজ্যসভা অচল হয়ে যায়। পরে অবশ্য তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সম্মতি দেন। রাজ্যসভায় এ দিন শুরু থেকেই সরব ছিলেন সপা সাংসদ জয়া বচ্চন। বিষয়টি নিয়ে দাঁড়িয়ে নীরব প্রতিবাদ করার পাশাপাশি নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক সময়েও কেঁদেও ফেলেন তিনি। সপা’র ওই সাংসদ দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান। তাঁর কথায়, “খুন করার চেষ্টা ও ধর্ষণকে একই ধরনের অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হোক।” চরম ক্ষুব্ধ, বিচলিত জয়া পরে রাজ্যসভার বাইরে এসে প্রয়োজনে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব জনগণের হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেন। ধর্ষণের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে দোষীদের কী শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তা জনগণকে জানানোর দাবি করেন বসপা নেত্রী মায়াবতী।
রাজনীতিতে ভিন্ন মেরুর হলেও অন্তত এই ঘটনায় জয়া বচ্চনের সুরে আজ লোকসভায় ওই একই দাবি জানান বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ। তাঁর কথায়, “এই ধরনের অভিজ্ঞতার পর মেয়েরা কার্যত জীবন্ত লাশে পরিণত হয়। এই ধরনের ঘটনার যাঁরা শিকার হন তাদের জীবনভর সেই যন্ত্রণা বহন করতে হয়। তাই সরকারের উচিত দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেওয়া।” একই ভাবে মৃতুদণ্ডের দাবিতে মুখর হন বিজেপি-র নাজমা হেপতুল্লা, শিবসেনার মনোহর জোশী, আরজেডি-র রামকৃপাল যাদবও। ভবিষ্যতে ধর্ষণের অপরাধে দোষীদের কড়া শাস্তিই এই ধরনের অপরাধ কমাতে পারে বলে সওয়াল করেন কংগ্রেস সাংসদ রেণুকা চৌধুরিও।
দোষীদের কড়া শাস্তির পাশাপাশি, এই সংক্রান্ত আইনে বদল আনার দাবি জানান একাধিক সাংসদ। তাঁদের কথায়, বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির পর কয়েক মাসের মধ্যেই আইনের ফাঁক গলে অভিযুক্তরা জামিন পেয়ে যায়। ব্যাহত হয় বিচার। ফলে বিচার ব্যবস্থাতেও বদলের দাবি জানান বিজেপি সাংসদ স্মৃতি ইরানি থেকে কংগ্রেস সাংসদ গিরিজা ব্যাস সকলেই। রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ প্রভা ঠাকুর এক ধাপ এগিয়ে সাম্প্রতিক কালে ধর্ষণের অপরাধে দেশে ক’জনের শাস্তি হয়েছে তার পরিসংখ্যান দাবি করেন শিন্দের কাছে। অভিযুক্তদের দ্রুত সাজা দেওয়ার জন্য ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে তাদের বিচারের দাবি করেন কংগ্রেস সাংসদ অম্বিকা সোনি, তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়রা। গণধর্ষণ-কাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দে সংসদকে আশ্বাস দিয়েছেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচার হবে এবং মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রত্যেক দিন শুনানি হবে।” ওই ঘটনায় পুলিশকর্মীর গাফিলতি থাকলে তা-ও তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে গোটা ঘটনায় কার্যত অসহায়তাই ফুটে ওঠে সাংসদদের মধ্যে। সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “১৭ বছরের এক কিশোরীর বাবা হিসাবে আমি আতঙ্কিত।” একই আতঙ্ক ও অসহায়তার শিকার যেন গোটা সংসদই। |
|
|
|
|
|