পুলিশের জালে ৪
দুই ধর্ষক অধরা, সিসিটিভি খোঁজ দিল সেই বাসের
লন্ত বাসে কলেজ-ছাত্রীকে গণধর্ষণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ জনকে। বাকি দু’জন পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, ওই চার জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হবে এবং তাদের দ্রুত শাস্তি দিতে ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।
দিল্লির এক আদালত ধৃত বাসচালক রাম সিংহকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট নমৃতা অগ্রবালকে পুলিশ জানিয়েছে, বাকি তিন অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছে রাম সিংহেরই ভাই মুকেশ, জিম ইনস্ট্রাকটর বিনয় শর্মা এবং ফলবিক্রেতা পবন গুপ্ত। এদের আগামিকাল আদালতে তোলা হবে। রাম সিংহ, বিনয় শর্মা ও পবন গুপ্তকে দিল্লি থেকে ধরা হয়। মুকেশকে পাকড়াও করা হয়েছে রাজস্থান থেকে।
দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার জানিয়েছেন, ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য আইন প্রণয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব জানাবেন তাঁরা। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতও নারী নির্যাতনের ঘটনায় রাজধানীতে পাঁচটি স্পেশ্যাল ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু করার জন্য দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি ডি মুরুগেশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
পুলিশ এখনও আরও দুই অভিযুক্ত, অক্ষয় এবং রাজুকে খুঁজছে। তার জন্য বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানে তল্লাশি চলছে। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, মজা লুটতেই ওই দলটি বাস নিয়ে বেরিয়েছিল। মুনিরকা থেকে পালামের রাস্তায় চলার কোনও বৈধ পারমিট ছিল না বাসটির। স্কুলবাস হিসেবেই ব্যবহার করা হত।
নীরজ কুমার বলেছেন, “রবিবার রাতে অবশ্য ওই বাসটি রাম সিংহ চালাচ্ছিল না। সে কেবল যাত্রী তুলতে চিৎকার করে বলছিল, বাস দ্বারকা যাচ্ছে।
বাস চালাচ্ছিল রামের ভাই মুকেশ। দেরাদুনের ওই কলেজ ছাত্রী আর তাঁর বন্ধুকে হাঁকডাক করেই বাসে তোলে সে। বাস চলতে শুরু করার পরেই মেয়েটিকে উত্যক্ত করতে শুরু করে রাম সিংহ আর তার সঙ্গীরা। এত রাতে তাঁরা কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে এই সব প্রশ্ন দিয়ে শুরু। মেয়েটির বন্ধু প্রতিবাদ করতেই মারধর। তার পরে রাম সিংহ আর তার সঙ্গীরা চড়াও হয় মেয়েটির উপরে।”
কলঙ্ক-পর্ব
গুড়গাঁও আদালতের পথে ধর্ষণে অভিযুক্ত চার যুবক। ছবি: পি টি আই
নীরজ আরও জানান, রবিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আর কে পুরম থেকে আইআইটি গেট যাওয়ার টোপ দিয়ে রাম সিংহরা এক জন কাঠের মিস্ত্রিকেও বাসে তুলেছিল। ওই মিস্ত্রির কাছ থেকে জিনিস লুঠের পরে তাকে নামিয়ে মুনিরকা থেকে মেয়েটি আর বন্ধুকে বাসে তোলে তারা।
তাঁদের উপরে নৃশংস অত্যাচারের পরে বাস থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে এ বার স্টিয়ারিংয়ে বসে রাম সিংহ। সঙ্গীদের এক এক করে বাড়িতে নামিয়ে নয়ডায় মালিকের বাড়ির কাছে বাস পার্ক করে আসে। সোমবার বাস নিয়ে আর কে পুরম যায় সে। যদিও ততক্ষণে বাস ধোয়ামোছা হয়ে গিয়েছিল। তবে নীরজ কুমারের দাবি, ফরেন্সিক প্রমাণ হিসেবে নখের আঁচড়, ডিএনএ, চুল ইত্যাদি নানা জিনিস পেয়েছেন তাঁরা।
কী ভাবে দুষ্কৃতীদের ধরল পুলিশ?
ওই ভয়ঙ্কর কাণ্ডের পরেও কোনও ভাবেই ধরা পড়বে না ভেবে আত্মবিশ্বাসী ছিল দুষ্কৃতীরা। যে কারণে সোমবার পবন আর বিনয় যে যার কাজে চলে যায়।
রাম সিংহও নয়ডা থেকে বাস নিয়ে চলে আসে আর কে পুরমে। ইতিমধ্যে ৮ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি হোটেলের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ প্রথমে বাসটিকে শনাক্ত করে। বাসে একটি স্কুলের নাম লেখা ছিল। জানলায় ছিল পর্দা। পুলিশকে মেয়েটির বন্ধুও এমন বাসের কথাই জানিয়েছিলেন। এর পরে আর কে পুরম থেকেই খুঁজে বার করা হয় চালক রাম সিংহকে।
মেয়েটি আর তাঁর বন্ধুর মোবাইলও ছিনিয়ে নিয়েছিল রাম সিংহরা। সোমবার পুলিশ ওই নম্বরগুলোয় মেসেজ পাঠাতে শুরু করে। কোনওটাই ডেলিভারড হচ্ছিল না। শেষে দুপুরের দিকে কোনও এক দুষ্কৃতী একটি মোবাইল অন করতেই মেসেজ পৌঁছয়। সঙ্গে সঙ্গে সেই মোবাইল কোন এলাকায় রয়েছে, বুঝতে পারে পুলিশ। এই ভাবে ধরা পড়ে এক জন। তাকে জেরা করতে করতে খবর মেলে বাকিদের।

‘মেয়েদের রাতে বেরোনো উচিত নয় বলে ফরমান দিলে সমস্যার সমাধান হয় না। এক জন আধুনিক মহিলা হিসেবে আমি এই বক্তব্যকে সমর্থন করি না। রাতভর পার্টি করার অধিকার আমার আছে।’

‘এ রকম কোনও ঘটনার কথা শুনলে প্রথমেই মনে হয় অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।..মৃত্যুদণ্ড যদি না হয়, সে ক্ষেত্রে দোষীদের শিক্ষা দিতে অন্তত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তো হওয়াই উচিত।’

‘ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য আইন প্রণয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রস্তাব জানাব।’
পুলিশ কমিশনার, দিল্লি

অবস্থার অবনতি তরুণীর
মঙ্গলবার সন্ধে থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গণধর্ষণের শিকার দেরাদুনের ওই তরুণীকে সর্বক্ষণই ভেন্টিলেটরে রাখতে হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতেই এ কথা জানিয়েছেন দিল্লির সফদরজঙ্গ হাসপাতালের চিকিৎসক বি ডি আথানি। রবিবার রাতে দিল্লিতে এক চলন্ত বাসে ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়। মারাত্মক জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বছর তেইশের ওই প্যারামেডিক্যাল ছাত্রীকে। তার পর থেকে আইসিইউ-তেই রয়েছেন তিনি। এ দিন সকালে অবশ্য হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, আগের দিনের থেকে অনেকটাই সুস্থ তিনি। চিকিৎসকেরা দাবি করেন, হাত নেড়েছেন তিনি। এমনকী, কাগজে লেখাও পড়েছেন। তবে চিকিৎসকেরা তখনই জানান, আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত তাঁর স্বাস্থ্যের দিকে কড়া নজর রাখা হবে। কারণ, বিপদ এখনও কাটেনি। দিন গড়াতে না গড়াতেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সন্ধের দিকে তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট
রাজধানীর বুকে চলন্ত বাসে তরুণীর গণধর্ষণে ক্ষুব্ধ দিল্লি হাইকোর্ট। বিচারপতি সঞ্জয় কিষণ কল ও বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘির বেঞ্চের মতে, এই ঘটনা এমন কিছু লোকের কাজ যারা মনে করে আইন-কানুন নিয়ে খেলা করা যায়। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে বেঞ্চ। গণধর্ষণের তদন্তে হাইকোর্টের নজরদারি চেয়ে মঙ্গলবার আর্জি জানান ২৫ জন মহিলা আইনজীবী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি মণিকা অরোরা। মণিকা আর্জিতে বলেন, হাইকোর্টের বিষয়টি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে উদ্যোগী হওয়া উচিত। এই তদন্তে কোর্টের নজরদারি প্রয়োজন। বিচারপতি কল ও বিচারপতি সাঙ্ঘি বলেন, যারা এই কাজ করেছে তাদের কড়া বার্তা দেওয়া উচিত। তবে এ দিন বিষয়টি নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে শুনানি শুরু করেনি হাইকোর্ট। বেঞ্চ জানিয়েছে, কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা স্থির করতে দু’এক দিন সময় লাগবে। তবে মহিলা আইনজীবীরা চাইলে জনস্বার্থ মামলা করতেই পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.